Saturday, January 2, 2010

| দুই-মেগাপিক্সেল…| এশিয়াটিক সোসাইটি |



| দুই-মেগাপিক্সেল…| এশিয়াটিক সোসাইটি |
রণদীপম বসু

শীর্ষ ছবি:
উপরের ছবিতে যে পুরাতন জীর্ণ স্থাপনাটি দেখা যাচ্ছে, ধারণা করা হয় তার নির্মাণকাল ১৭৬০ থেকে ১৭৭০ সালের মধ্যে কোন এক সময়। অথবা তারও পূর্বে। এটি সে আমলের একটি বাড়ির দেউড়ি বা গেট। তথ্যটি জানা গেলো প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড.শাহনাওয়াজ-এর বক্তব্য থেকে। তৎকালীন বাঙলা প্রদেশের রাজধানী ঢাকার সোনারগাও থেকে মুর্শিদাবাদে যখনো স্থানান্তর হয়নি, ঢাকার প্রধান প্রশাসক যাঁকে বলা হতো ‘নায়েবে নাজিম’, তাঁর জন্য ঢাকার নিমতলীতে যে বাড়িটি নির্মাণ করা হয় সেটাই এই বাড়ি। কালের গহ্বরে হারিয়ে এখন আর নেই। রয়ে গেছে এই দেউড়িটাই।


২০১০ এর শুরুর দিনেই অর্থাৎ ০১ জানুয়ারি মাসিক শিশু কিশোর পত্রিকা ‘টইটম্বুর’-এর ১৯তম জন্মদিনে এশিয়াটিক সোসাইটিতে আয়োজিত চমৎকার একটি অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোর-যুবা-বৃদ্ধ সকল শ্রেণীর আগ্রহী দর্শক-শ্রোতা-পাঠক-লেখক ও টইটম্বুর পরিবারের এসেছিলেন অনেকেই। ছিলেন স্বনামখ্যাত সর্বজনাব অধ্যাপক ড.মনসুর মুসা, ড.শাহনাওয়াজ ও ড.মোহিত উল আলম, সাহিত্যিক রণজিৎ বিশ্বাস, কবি আসাদ চৌধুরী, শিশু-সাহিত্যিক রফিকুল হক দাদুভাই ও আলী ইমাম, টইটম্বুর উপদেষ্টা সবিহ উল আলম সহ অনেকেই। প্রমুখ বক্তাদের বক্তব্য থেকে দর্শক শ্রোতাদের অনেক কিছুই জানার ছিলো। কিন্তু ছিলো না সময়ের যথেষ্ট পরিসর।


এতো সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কৌতুহলি শ্রোতাদের তথ্য-ক্ষুধা মেটানো কঠিন বৈ কি, ড. শাহনাওয়াজের বক্তব্য থেকে যখন আমরা জানতে পারি যে, ঢাকার বয়স কলকাতার চেয়েও অনেক পুরনো তো বটেই, নিদেনপক্ষে ৮০০ বছরের পুরনো এই নগরীটি বিশ্বের প্রাচীনতম নগরীর অন্যতম।


বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির অধিকৃত এই স্থাপনাটির দু’পাশে আধুনিক শৈলীর ঝকঝকে নতুন ভবনগুলোতেই বর্তমানে এশিয়াটিক সোসাইটির কার্যক্রম পরিচালিত হলেও তার আগে স্বাধীনতাপূর্বকালে দেউড়ির উপরের কক্ষগুলোতেই ছিলো লাইব্রেরী ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড। এখন প্রাচীন ঐতিহ্য বা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে এই স্থাপনাটিকে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে হয়তো। এটিকে ঘিরে কিছু সংরক্ষিত খননকার্য দেখে তাই মনে হলো।


ছবি:০১
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠা বিষয়ে সামান্য কিছু তথ্য জানা গেলো ড. মনসুর মুসা’র স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্যে। স্যার উইলিয়াম জোন্স-এর উদ্যোগে ১৭৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় তৎকালীন এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল। গবেষণার জন্য যে দুটো উদ্দেশ্য নিয়ে সোসাইটিটি গঠিত হয় তা হলো- এশিয়ার মানুষ ও এশিয়ার প্রকৃতি। তবে এই সোসাইটির অন্যতম উল্লেখযোগ্য কাজটি ছিলো বাংলা বর্ণমালার বিশদ ব্যাখ্যা। বাংলা বর্ণের গঠন রীতি বা আকৃতি আগেই নির্ধারণ করা থাকলেও  জানা যায় এগুলোর ধ্বনি, উচ্চারণ, ব্যবহার ও অন্যান্য বিষয়ের যাবতীয় ব্যাখ্যার কাজটি প্রথম বর্ণিত হয় এই এশিয়াটিক সোসাইটির মাধ্যমেই।


এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত ও সঠিক তথ্য জানতে হলে আমাদেরকে হয়তো সোসাইটির পুরাতন রিপোর্টগুলো ঘাটতে হবে। সেগুলো সংশ্লিষ্ট গবেষকদের জন্যেই তোলা রইলো।





ছবি:০২
নিমতলী গেট। পুরনো ঢাকার গুলিস্থানের বর্তমান বঙ্গবাজার থেকে সামান্য দূরেই নিমতলী। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ভবনের অপর পার্শ্বে যেখান থেকে আরেকটি রাস্তা নিমতলী ঘাটের দিকে চলে গেছে, সেখানে তিন রাস্তার মোড়ের সড়ক-দ্বীপে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির উদ্যোগে স্থাপিত নিমতলী গেটটি সহজেই যে কারো চোখে পড়বে।





ছবি:০৩
নিমতলী গেট। সড়ক-দ্বীপ স্থাপত্য নিমতলী গেট-এর উল্টো দিক থেকে গেটের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ভবনটি দেখা যায় স্পষ্ট। এই ভবনের পেছনে সোসাইটির কোম্পাউন্ডেই সেই প্রাচীন দেউড়িটি সযত্নে সংরক্ষিত।





ছবি:০৪-০৫
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি চত্বরের সামনের ছোট্ট বাগান। ছোট ছোট কয়েকটি সুদৃশ্য ভাস্কর্য বাগানটির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বেশ !






ছবি:০৬
প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষিত প্রাচীন দেউড়ির মধ্যে দিয়ে ঢুকে অপরপার্শ্বে ছোট্ট একটা চত্বর।





ছবি:০৭
চত্বরের সাথেই এশিয়াটিক সোসাইটির অন্য ভবনটি। এর নিচতলায় স্বল্পপরিসর একটা হলরুমে চমৎকার একটা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমারও ইংরেজি নতুন বছর ২০১০ সালটির শুভযাত্রা হলো।





ছবি:০৮
এশিয়াটিক সোসাইটিতে আয়োজিত শিশু-কিশোর পত্রিকা মাসিক ‘টইটম্বুর’-এর ১৯তম জন্মদিনে শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সব শ্রেণীর উৎসাহীদের আনাগোনা।





ছবি:০৯
টইটম্বুর-এর ১৯তম জন্মদিনে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের স্বাক্ষরিত স্মৃতিচিহ্ণ সংগ্রহের প্রাথমিক উদ্যোগ।





ছবি:১০-১১
ঢাকার বঙ্গবাজার গুলিস্থানের চৌরাস্তায় স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পটভূমিভিত্তিক পথ-ভাস্কর্য ‘প্রত্যাশা’। ভাস্কর মৃনাল হক।





এর আগে আর কখনো পুরান ঢাকায় অবস্থিত এই এশিয়াটিক সোসাইটি বা নিমতলী এলাকায় আসার সুযোগ হয়নি। টইটম্বুর-এর সুবাদে এখানে এসে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপত্য দেখা ও জানার সুযোগ হলো। এজন্যে আমাদের শৈশব ও কৈশোরকে সযত্নে লালনকারী টইটম্বুরের প্রতি রইলো কৃতজ্ঞ অভিনন্দন ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করি ১৯তম বছরে পদার্পণের সাবালকত্ব অর্জন করলেও তার সত্ত্বায় সেই শৈশব ও কৈশোরই উচ্ছল হয়ে থাকবে সবসময়।

[sachalayatan]
...

No comments: