Friday, June 25, 2010

| যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর…|৩০|


| যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর…|৩০|
-রণদীপম বসু

তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল, ১৯৯৩)

গতকাল সন্ধ্যায় কালবোশেখির তাণ্ডব বইছিলো খুব। গাছপালা বাড়িঘর ফসল মাঠ পুকুর দোকানপাট বিদ্যুতের খুটি রাস্তাঘাট সবকিছু যখন জলে-বাতাসে একাকার, অঝোর বর্ষায় সমস্ত প্রাণিকূল মানুষগুলো যখন গুটিশুটি মেরে নিজকে আড়াল করছে, এমোন অদ্ভুত ঘনঘোর নিঃসঙ্গতায় তখন তোমার জন্য রূপা শুধু তোমার জন্যে মনটা আকুল হয়ে ওঠলো। খুব ইচ্ছে করছিলো তোমাকে বুকের খুব কাছে জড়িয়ে রেখে প্রকৃতির একটানা এই ক্রন্দনোচ্ছ্বাস দেখি এবং শুনি। এই ক্রন্দন তো বাইরে নয়, যেনো আমার বুকের ভেতরেই হচ্ছিলো। আমার সমস্ত কথাই বুঝি গলে গলে ঝরছিলো সমগ্র প্রকৃতি ভাসিয়ে, শুধু তোমাকে বলার জন্যে। অথচ তুমি নেই কাছে এমোন বিষণ্ন বাদল রাতে। এমন দিনেই বুঝি মনের অর্গল খুলে যায় কাউকে কিছু বলার জন্যে নিবিড় করে। এজন্যেই কি ‘বরষা মঙ্গলের’ কবি এমন ব্যাকুল হয়ে গেয়েছিলেন-
‘—- এমনদিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।—-’


রূপা, তোমার ওখানেও কি এমন আকুল করা বরষা ঝরেছে ? রাত্রির এমন একটানা কান্না শুনতে শুনতে কি আমার কথা মনে পড়েছে কখনো ? তুমি কি আমার কথা ভাবো কোনো বিষণ্ন বাদলা দিনে ? অথবা কোনো ঝড়ের রাতে যখন তোমার জানালার শার্সির ঝাপটা তোমাকে বিব্রত করে তোলে আর ঘুম ভেঙে তুমি আতঙ্কে জেগে ওঠো, তখন কি বুঝতে পারো যে মধুর আলিঙ্গনে জড়িয়ে রাখি তোমাকে আমি ! অথবা তোমার নিরাপদ ঘরের দরোজায় যখন প্রচণ্ড ঝড়ের আঘাত এসে ধাক্কা খায় বারেবারে কেঁপে ওঠে থরথর, তখন কি মনে হয় না তোমার, বাইরে থেকে সজোর কড়াঘাতে তোমাকে জানিয়ে যাচ্ছি আমি বারেবারে- ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না তুমি, আমি তো আছি।

রূপা, আমি জানি না তুমি আসলেই কিছু ভাবো কিনা। হয়তো এসবই আমার কষ্ট-কল্পনা। তবু আমি তো ভাবি তোমাকে।

(চলবে…)

পর্ব:[২৯] [*] [৩১]

No comments: