Friday, August 27, 2010

| উৎবচন-শতক…[ দুই ]

| উৎবচন-শতক…[ দুই ]
- রণদীপম বসু
[ উৎসর্গ: হুমায়ুন আজাদ, যাঁকে আদর্শ ভাবলে প্রাণিত হই ]

(১০১)
মানুষ বাস করে তাঁর স্বপ্নের মধ্যে;
স্বপ্নহীনরাই প্রকৃত উদ্বাস্তু।

(১০২)
জন্মদিন হলো একটা হাস্যকর চিহ্ণ, যা
দূরবর্তী হতে হতে নিশ্চিহ্ণের ঠিকানাটা চিহ্ণিত করে।

(১০৩)
শেকড়-বিচ্ছিন্ন না হলে বহুতল ভবনের অধিকারী হওয়া যায় না;
বাতাসই হয়ে যায় মাটির বিকল্প তখন।

(১০৪)
সত্য কোন চিরস্থায়ী বিষয় নয়;
সত্য হচ্ছে অনুঘটক নির্ভর একটি আপেক্ষিক ধারণা।

(১০৫)
বংশ-গৌরব হলো সেই পশ্চাৎপদতা,
যা মানুষকে বড় হতে দেয় না।


(১০৬)
নস্টালজিয়া,
বার্ধক্যে সুস্থ থাকার প্রয়োজনীয় বটিকা।

(১০৭)
প্রতিষ্ঠানের আকার যত বৃদ্ধি পায়,
কর্মীর মূল্য ততই কমতে থাকে।

(১০৮)
ভারবাহী গাধারা সময়ের ভারে আক্রান্ত হয় না।

(১০৯)
স্বভাব বা খাসলতই মানুষের একান্ত নিজস্বতা,
যা তাকে অন্য থেকে পৃথক করে।

(১১০)
যাবার পথে নয়,
ফেরার পথ খুঁজেই মানুষ পথ হারায়।

(১১১)
একশ’টা বই পড়ার চেয়ে একটা বই বুঝা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
মলাটবদ্ধ অক্ষর-সমষ্টিমাত্রই বই নয়।
বই হচ্ছে সেই বৈধ প্রতারক, যা
মানুষের বর্তমান মুহূর্তকে অস্বীকার করে।

(১১২)
মানুষ হলো এক আজব বিজ্ঞাপন,
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, প্রভাবশালী এবং একইসাথে আকর্ষণীয়
ও বিরক্তিকর।

(১১৩)
আস্তিক্য-জীবনযাত্রা মানে গণ্ডিবদ্ধ রুটিন-ওয়ার্ক।
আর অলৌকিক সীমানায় আবদ্ধ নয় বলে নাস্তিক্য-জীবনধারা হয়
চির বৈচিত্র্যময়, সৃজনশীল।

(১১৪)
যে সমাজে মানবিক যোগ্যতা সন্দেহবিদ্ধ হয়,
সে সমাজ মানুষের থাকে না।

(১১৫)
দায়বদ্ধতা থেকে ভয়ের জন্ম।
ভয় মানে যেখানে বন্ধুত্ব নেই, বন্ধুত্ব মানে যেখানে গণ্ডি নেই,
গণ্ডি মানে যেখানে স্বাধীনতা নেই।
কিন্তু স্বাধীনতা মানে একরাশ দায়বদ্ধতা।

(১১৬)
শাসিতের কোন দায়বদ্ধতা থাকে না, দায়বদ্ধতা থাকে বিশ্বস্তের।
অথচ মানুষের গুপ্ত বাসনা কেবল শাসক হওয়ার,
বন্ধু হতে নয়।

(১১৭)
দম্ভ দিয়ে দুর্বলতা ঢাকে দাম্ভিকেরা।
উদারতা হলো অসমর্থ নিজেকে সরিয়ে নেয়ার সভ্য উপায়।

(১১৮)
সৃজনশীলতার অন্তর্গত মাহাত্ম্য হচ্ছে সন্দেহবাতিকগ্রস্ততা,
অতৃপ্তি থেকে যার জন্ম।
সৃজনশীল সত্ত্বা চিরকাল অতৃপ্তিই বহন করে।

(১১৯)
ফুলের সৌন্দর্য যৌনতার প্রতীক,
নারীর সৌন্দর্য পুরুষের অশ্লীলতার প্রতীক;
শিশুর সৌন্দর্য মানুষের স্বপ্নময় নির্বুদ্ধিতার প্রতীক।

(১২০)
প্রতিটা প্রাণীই নির্দিষ্ট স্বভাবে বৈশিষ্ট্যমান;
সতত পরিবর্তনশীল মানুষেরই কোন চরিত্র নেই,
কখনো সে সাপ, কখনো ছাগল, গাধা, কখনো পরাক্রমী বাঘ,
গণ্ডার বা অস্পৃশ্য শুকর।

(১২১)
মেয়াদোত্তীর্ণ হলে অমৃতও বিষ হয়ে যায়;
আর মেয়াদোত্তীর্ণ বিষ কী হতে পারে তার উৎকৃষ্ট নমুনা বোধহয়
কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তার নামে পুরুষতন্ত্রের রচিত, প্রবর্তিত ও ব্যবহৃত
অলৌকিক ধর্মগুলো।

(১২২)
প্রচলিত ধর্মগ্রন্থগুলোতে সম্ভবত কোন মানুষের কাহিনী নেই;
আছে ভোগলিপ্সু পুরুষ-প্রভু আর ভোগ্যপণ্য নারী-দাসীর কথা।

(১২৩)
ভাবুকদের জন্য কোলাহলপূর্ণ ড্রয়িংরুমের চেয়ে
নিরিবিলি টয়লেটও উত্তম।

(১২৪)
ক্রিড়া-প্রতিযোগিতায় নান্দনিকতা খোঁজে বুদ্ধুরা;
হারজিৎ যেখানে মুখ্য, নান্দনিকতা সেখানে অর্থহীন।

(১২৫)
অহংকার মূর্খের সম্বল, বিনয় জ্ঞানীর অলঙ্কার; তাই
মূর্খরাই বরাবর জ্ঞানীকে অপমান করে জানান দেয়
সে মূর্খ।

(১২৬)
অর্থের সক্ষমতার উৎস হচ্ছে মেধা;
কিন্তু অর্থ অন্ধ বলে অবজ্ঞার মাধ্যমে মেধাকে অপমান করে।

(১২৭)
লেখক-পাঠক, পাঠক-প্রকাশক, প্রকাশক-লেখক
এই তিনটি সম্পর্ক ঘিরে গড়ে ওঠা আর্থিক সাম্রাজ্যের মূলে থাকেন লেখক;
অথচ এই সাম্রাজ্যের উপেক্ষিত ব্যক্তিটি হচ্ছেন লেখক।

(১২৮)
কষ্ট হচ্ছে নুনের মতো;
কষ্টের নুন না থাকলে সকল আনন্দই আসলে পানসে।

(১২৯)
চোখের ভাষার বিভেদটুকু ছাড়া
হাসি আর কান্নায় মৌলিক কোন পার্থক্য নেই।

(১৩০)
যে প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত থাকে
সেটা আসলে কোন প্রশ্নই নয়।

(১৩১)
মানুষ কখনোই তার শৈশবকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না।
শিশুর স্বপ্ন দেখার মতা অসীম;
বড় হতে হতে মানুষের স্বপ্ন-পরিধি ক্রমেই ছোট হয়ে আসে।

(১৩২)
সম্পদ ততণই সম্পদ, যতণ তা বিনিময়যোগ্য থাকে;
জ্ঞানও অর্থহীন যদি তা ব্যবহারযোগ্যতায় না আসে।
তাই প্রচার বিমুখ ব্যক্তিত্ব বলতে আসলে কিছু নেই।

(১৩৩)
নিজেকে যে বোকা হিসেবে আবিষ্কার করে, সেই বুদ্ধিমান;
আর যিনি নিজেকে খুব বুদ্ধিমান ভাবেন, তার বুদ্ধি অপরিপক্ক।

(১৩৪)
বিশ্বাস ও ভালোবাসা পরস্পর পরিপূরক; তবু
ভালোবাসতে হয় যুক্তিহীনভাবে, আর
বিশ্বাস করতে হয় যুক্তিনিষ্ঠতায়।

(১৩৫)
যৌনপ্রবণতাই মানুষের মূল চালিকাশক্তি;
উদ্যমহীন মানুষের যৌন আবেদন শূন্য।

(১৩৬)
যে যত ব্যস্ততা দেখায়, কাজ করে সে তত কম;
কর্মনিষ্ঠ ব্যক্তি হয় ধীর স্থির শান্ত।

(১৩৭)
কৌতুক হচ্ছে সত্য-কথন, উপদেশ মিথ্যা বয়ান;
এজন্যেই কৌতুকে কোন উপদেশ থাকে না।

(১৩৮)
উপস্থিতি চিরকালীন নয়, অনুপস্থিতি চিরন্তন; তাই
বিরহ-কষ্টই মানুষের চিরায়ত মৌলিক অনুভূতি।

(১৩৯)
মন একটি সস্তা বিষয়, চাইলেই পরিবর্তন করা যায়;
দেহ এক অবিকল্প সম্পদ যা বদলে ফেলা অসম্ভব।

(১৪০)
তিনিই নিঃস্ব পাঠক
যার সংগ্রহে কোন অপঠিত বই নেই।

(১৪১)
সম্পদ যে পরিমাণেই থাক
সেই আসল ফকির যে খরচ করতে জানে না।

(১৪২)
সম্পদের পরিমাণ দিয়ে সম্পদশালী হয় না;
খরচের বাহার দিয়েই সম্পদশালী নির্ণীত হয়।

(১৪৩)
পরকালের দোহাই হচ্ছে প্রচলিত ধর্মগুলোর
সবচেয়ে বড় প্রতারণা।

(১৪৪)
মানুষ সবচেয়ে কম দেখে নিজের মুখ,
তারচেয়ে কম জানে নিজেকে; আর
সবচাইতে কম চিনে নিজের চেহারা।

(১৪৫)
সিঁড়ি হচ্ছে থরে থরে সাজানো কতকগুলো পতনস্তর,
যা কাটিয়ে কাটিয়ে উপরে উঠতে হয়;
যে যত উপরে তার সম্ভাব্য অধঃপাতের তীব্রতা তত বেশি।

(১৪৬)
যেখানে জনসম্পদকে জনসংখ্যা হিসেবে গণনা করা হয়
সে প্রতিষ্ঠান স্থবিরতায় আক্রান্ত।

(১৪৭)
জানার অভাব হলে মানুষ বই কিনে- এটা যেমন সত্যি,
তারচে’ও সত্যি হলো- চাউলের বদলে যে বই কিনে সে মূর্খ।
কেননা এ বই তার কোন কাজে আসে না।

(১৪৮)
ঘর হচ্ছে এক মায়াবী প্রতারক,
শেষপর্যন্ত যা মানুষকে কিছুই হতে দেয় না।

(১৪৯)
বিজ্ঞানের একটি ধর্ম আছে, তা যুক্তিতে বিশ্বাসী;
ধর্মের কোন ধর্ম নেই, কারণ তার বিশ্বাসে যুক্তি নেই।

(১৫০)
মানুষ আসলে ঘুড়ি উড়ায় না, নিজে উড়ে; আর
ঘুড়ি নিজে উড়ে না, মানুষকে উড়ায়।

(১৫১)
অসার জিহ্বা ভাষাকে মুক্ত করতে অক্ষম বলেই
বোবার চোখ ভাষার রুদ্ধতাকে বাঙ্ময় করে তোলে।

(১৫২)
খ্যাতি ও ক্ষমতা কুড়ানোর চতুর পদ্ধতি হলো পুরস্কার দেয়া।
পুরস্কার পেতে হয়তো ন্যূনতম যোগ্যতা থাকতে হয়,
পুরস্কার দেয়ার জন্য কোন যোগ্যতার দরকার হয় না।
পুরস্কার বারবার পাওয়া যায় না, কিন্তু বারবার দেয়া যায়।

(১৫৩)
যোগ্যতা অর্জনের আগেই কোনকিছু দ্রুত পাওয়ার ইচ্ছা
মানুষকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে।
আর খ্যাতির লিপ্সায় অপরাধপ্রবণ মানুষ
সুকুমার বৃত্তি হারিয়ে শেষপর্যন্ত নিঃস্ব হয়ে যায়।
এজন্যেই শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে নিঃস্ব মানুষের আনাগোনা বেশি হয়ে থাকে।

(১৫৪)
শর্তহীন আনুগত্য মেরুদণ্ডহীনতা, তবে
মেরুদণ্ডধারী মানে অবিশ্বস্ত নয়।
ব্যক্তিত্বহীন লোক হয় অনুগত ; ব্যক্তিত্ববান থাকে বিশ্বস্ত।

(১৫৫)
ঘটনা একটা বিষয়, কিন্তু বিষয় কোন ঘটনা নয়।
যোগ্য ব্যক্তির পুরস্কৃত হওয়া কোনো ঘটনা নয়, না-হওয়াটাই বিষয়;
আর অযোগ্য লোকের পুরস্কার না-পাওয়া কোনো বিষয় নয়, পাওয়াটাই ঘটনা।

(১৫৬)
অযোগ্যের দেয়া পুরস্কার যোগ্য-ব্যক্তিকে অপমান করে;
পুরস্কার প্রত্যাক্ষাণের যোগ্যতা যোগ্যকে যোগ্যতম করে তোলে।

(১৫৭)
যে রচনা নতুন কোনো প্রশ্নকে আমন্ত্রণ জানায় না
তা বড়জোর নিবন্ধ হতে পারে, প্রবন্ধ নয়।

(১৫৮)
কবিতায় রসের খোঁজ পায় তারা, যারা
তার অর্থ বুঝতে উঠেপড়ে লাগে না, শুধু উপলব্ধি জাগিয়ে তোলে।
আর কবিতার ম্যাজিকটা বুঝে ফেলে তারাই যারা এর অর্থহীনতা আবিষ্কার করে।
দুর্ভাগা মানুষের কাছে কবিতা অর্থহীন।

(১৫৯)
দার্শনিকতার সাথে পাণ্ডিত্যের কোনো সম্পর্ক নেই;
শিশুর মতো প্রশ্ন আর কৌতুহলের কলগুঞ্জনই দার্শনিকতা।
দার্শনিক যেখানে অনায়াসে শিশু হয়ে যান, পণ্ডিত সেখানে অক্ষম।

(১৬০)
ভুল করে যে ভুল করে, সে হৃদয়বান;
সংশোধন তার আয়ত্তেই থাকে।
যে ভুল করে না কখনো, সে হৃদয়হীন; সংশোধনের অযোগ্য।

(১৬১)
মুখে যে বেশি হাসে, তার মনেই বেশি ব্যথা;
যে হাসতে জানে না, সে কাঁদতেও পারে না।

(১৬২)
জ্যোৎস্নার অনুভবে কোনো উল্লাস থাকে না, থাকে মগ্নতা;
কষ্টগুলো জেগে ওঠে বলেই জ্যোৎস্না এতো মোহময়।

(১৬৩)
চাকুরিজীবী দুই ধরনের-
এক দলে থাকে চাকুরিকে জীবিকা করে যে খায়;
আর অন্য দলে চাকুরিকে খাওয়াই যার জীবিকা।

(১৬৪)
কী, কেন, কিভাবে ?
এই তিনটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর যিনি দিতে জানেন তিনিই বিজ্ঞ।

(১৬৫)
ধর্মচর্চা মানুষকে বন্দী করে, চিন্তাচর্চা দেয় বন্দীত্বের মুক্তি।
প্রচলিত ধর্মগুলো আপাদমস্তক মুক্তচিন্তাবিরোধী বলে
সৃজনশীল মানুষের কোন সুযোগ নেই ধর্মের খোয়াড়ে ফিরে যাওয়ার।

(১৬৬)
মানুষ হচ্ছে এক চলমান কথামালা;
যতক্ষণ তা সংরক্ষণ ও চর্চায় থাকে ততক্ষণই মানুষ অমর।

(১৬৭)
যা কিছু নিজের বিকল্প হয়ে ওঠে, মানুষ তা ঘৃণা করে;
কিন্তু তার প্রয়োজন মানুষের কাছে কখনোই ফুরায় না।

(১৬৮)
বস্তুগত বিনিময় প্রক্রিয়ায় কোন সৌন্দর্য নেই।
মুদ্রার সৌন্দর্য হচ্ছে তার ধ্বংস প্রক্রিয়ায়;
এই প্রক্রিয়ার সর্বোচ্চ সৌন্দর্যের নাম সেবা।

(১৬৯)
বন্দীত্ব মানুষকে মুক্তিপ্রয়াসী করে তোলে।
তাই মুক্তির আস্বাদন পেতে প্রতিটা মানুষকে কিছুকাল
বন্দীত্বের বেড়াজালে আটকে রাখা উচিত।

(১৭০)
ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা ভাবুকদের জন্য আশির্বাদ;
এমন পিছুটানহীন ভাবনার সুযোগ আর কিছুতেই হয় না।
ঢাকা নগরী ভাবুকদের স্বর্গভূমি !

(১৭১)
একটি সিংহকে পোশাক পরালে সে আর তেজোদ্দীপ্ত সিংহ থাকে না,
তার সৌন্দর্যেরও মৃত্যু ঘটে।
কিন্তু মানুষের কুশ্রীতা ঢাকতে পোশাকের দরকার হয়।

(১৭২)
অন্যের ব্যর্থতার সাপেক্ষে যে নিজের যোগ্যতার পরিমাপ করে, সে অযোগ্য।
সফল ব্যক্তি অন্যের যোগ্যতাকেই নিজস্ব তুলাদণ্ডে যাচাই করে নেয়।

(১৭৩)
প্রার্থণার নামে করুণা ভিক্ষা করে মেরুদণ্ডহীন অথর্বরা;
এরা ধর্মান্ধ ক্রিতদাস, নিঃস্ব।
মানুষের জন্যে পৃথিবীর জন্যে অন্ধতা ছাড়া এদের দেয়ার কিছু নেই।

(১৭৪)
ধর্মে নারীদেরকে কী কী দারুণ দারুণ অধিকার দেয়া হয়েছে
তা নিয়ে বিস্তৃত ব্যাখ্যা শোনা যায় তথাকথিত ধর্মগুরুদের রসতৃপ্ত বয়ানে।
কিন্তু পুরুষকে অনুকম্পা দেখিয়ে কী কী অধিকার দেয়া হয়েছে তা নিয়ে বলতে শুনি না।
গৃহের মালিক আর গৃহের উপকরণের মধ্যে এখানেই পার্থক্য।

(১৭৫)
মানুষ হচ্ছে একটা হারানো অস্তিত্ব,
সারাজীবন নিজেকেই খুঁজে ফেরে শুধু।

(১৭৬)
‘শ্লীল’ শব্দটিই একমাত্র অশ্লীল শব্দ
যা কেবলই অশ্লীলতা ছড়ায়।

(১৭৭)
ঘুষি খেলে মানুষ আঘাতপ্রাপ্ত হয়,
থাপ্পড় খেলে হয় অপমানিত।

(১৭৮)
গল্প একটা ঘটনা, কিন্তু ঘটনা গল্প নয়।
মানুষ গল্প হয়, কিন্তু গল্পের মতো চলে না।

(১৭৯)
নিকৃষ্ট বস্তুর সাথে তুলনা করলেও মানুষ ততটা অপমান বোধ করে না
যতটা বোধ করে ইতর প্রাণীর নামে আখ্যায়িত করলে;
কারণ কল্পনা তাকে সেখানে পৌঁছে দেয়।

(১৮০)
সাবালককে যে নাবালক ভাবে সে নাবালক,
নাবালক যে সাবালক মনে করে সেও নাবালক।

(১৮১)
রোগশয্যায় মানুষ চক্ষুষ্মাণ হয়ে ওঠে;
তখনই সে নিজের দুর্বলতাগুলো দেখতে পায়।

(১৮২)
বিলাপ আর কৌতুকে কোন মৌলিক পার্থক্য নেই;
বিলাপ হলো নিজেকে সান্ত্বনা দেয়া,
কৌতুক হচ্ছে অপরকে সান্ত্বনা।

(১৮৩)
প্রেমের আশ্রয় নির্ভরতা, কিন্তু প্রেম নির্ভরতার আশ্রয় নয়।

(১৮৪)
উদ্যম হারালে মানুষ সম্ভাব্য মৃত্যুতারিখ খোঁজে।
প্রাণিজগতে কেবল মানুষই উদ্যমহীন হয়; এবং তাদের সান্ত্বনা হয়
ধর্ম নামের এক কাল্পনিক অলৌকিক জগত।

(১৮৫)
‘অনিবার্য গন্তব্যের কথা মনে এলে মন বিষণ্ন হয়,
মনে পড়ে অনেক কাজ এখনো বাকি।’-
এরকম চিন্তা বার্ধক্যে হতাশা আনে, যৌবনে জাগায় আশা।

(১৮৬)
মানুষ যখন নিশ্চুপ থাকে, তখনই সে ব্যক্ত হয় বেশি;
যখনই বকবক করে, আসলে সে নিজেকে আড়াল করে তখন।

(১৮৭)
বাঙালির হৃদয় বড় শক্ত জায়গা;
নিজেই নিজের হৃদয়ে বেশিদিন টিকতে পারে না।

(১৮৮)
চল্লিশ পেরোলে প্রায় সব পুরুষই মর্ষকামী যৌন-শয়তানে পরিণত হয়;
আর চল্লিশোত্তর নারীরা আক্রান্ত হয় ভয়ঙ্কর ঈর্ষাতুর হীনম্মণ্যতায়।

(১৮৯)
ভাবনার গতিপথেই আধুনিকতা নিহিত।
‘নলেজ ইজ পাওয়ার’ হচ্ছে সেকেলে ধারণা;
একালের নির্যাস হচ্ছে- ‘পাওয়ার ইজ নলেজ’।

(১৯০)
পুরনো কাপড় আর প্রয়াত স্বজনের মধ্যে বিশাল তফাৎ।
পুরনো কাপড়কে আমরা অবহেলায় তুলে রাখি অন্য কাজে ব্যবহার করতে;
প্রয়াত স্বজনকে সর্বোচ্চ সম্মানের সাথে পরিত্যাগ করি কবরে বা চিতায়।

(১৯১)
আবেগের সৌন্দর্য্য উদ্যমে; যে যত আবেগী, সে তত উদ্যমী।
আবেগহীন মানুষ উদ্যমী হয় না।

(১৯২)
যে ব্যয় করতে জানে না, তার সব উর্পাজনই বৃথা।
ব্যয় না জানলে অর্থ উর্পাজন করা অপরাধ।

(১৯৩)
প্রথমবার বই পড়তে হয় যে বইটি পড়তে হবে
তা নির্ধারণের জন্য।

(১৯৪)
বড়’র ভাব দেখাতে দেখাতে শেষর্পযন্ত মানুষ আর বড় হতে পারে না,
ছোটই থেকে যায়।

(১৯৫)
রীতি হচ্ছে অন্ধত্ব পরিচালনার নির্বোধ পদ্ধতি;
অন্ধরা এর বাইরে যেতে পারে না।

(১৯৬)
যত নিঃসঙ্গই হোক, চাইলেই কেউ হারাতে পারে না;
ভিড়ের মধ্যেই নিজেকেই হারাতে হয়।

(১৯৭)
যার মন খারাপ হয় না,
তার মন ভালো থাকার বিষয়টাও কাল্পনিক।

(১৯৮)
ব্যক্তির চেয়ে পদ ও পদবি বড় হয়ে গেলে
ব্যক্তি অন্ধত্বের বন্দী হয়ে যায়;
আর সেই অন্ধের কাছে মানুষ হয়ে যায় তুচ্ছ।

(১৯৯)
সমস্যা না-থাকাটাই বড় সমস্যা।

(২০০)
সমাপ্তি বলে কিছু নেই, আরেকটা শুরুর নামান্তর।

No comments: