Monday, December 27, 2010

| ছবির গল্প | নাগরিক মনের হারানো বটের ছায়া…|

 
| ছবির গল্প | নাগরিক মনের হারানো বটের ছায়া…|
-রণদীপম বসু

এই নগরীতে কোথাও কি বটগাছ চোখে পড়ে, তাও যদি হয় ফুটপাথ ঘেষা ? ছুটির দিনের এক অলস দুপুরে রিক্সায় যেতে যেতে দৃশ্যটা চোখে পড়তেই নাগরিক মনটা আনচান করে ওঠলো। মিরপুর জিপিও’র পশ্চিম গেটের সামনেই রাস্তা ঘেষে ফুটপাথে দাঁড়ানো তরুণ বটগাছটির সিমেন্ট বাঁধানো ছোট্ট বেদীর নিরিবিলি ছায়ায় গভীর ঘুমে শুয়ে আছে লোকটি। ঠিকানাহীন ছিন্নমূল কোন ভবঘুরে বলেই মনে হয়। বৃক্ষের কাছে ফকির বাদশায় তো কোন ভেদ নেই। এমন নির্বিঘ্ন আশ্রয় শ্যামল বৃক্ষ ছাড়া আর কে দেবে ? কিন্তু ইট-বালু-রড-সিমেন্টের রুদ্ধশ্বাস এই নগরীর সর্বগ্রাসী ক্ষুধায় বৃক্ষরাই যে ছিন্নমূল আজ। এই বটগাছও কি আদৌ নিরাপদ এখন ? সিটি কর্পোরেশানের কেউ লাগায়নি এ গাছ। তাহলে এই বটের চারা কী করেই বা এলো এখানে ? আরেক কর্মমুখর দিনে সেখানে গিয়ে জানা গেলো কাহিনী।

মিরপুর জিপিও’র লাগোয়া পশ্চিমে গ্রামীণ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের সুউচ্চ ভবন, যেখানে বেশ কয়েকটি অফিস রয়েছে। পদস্থ কর্মকর্তাদের অফিস চলাকালীন সময়ে তাঁদের নিজস্ব ড্রাইভারদের প্রতিদিনের অপেক্ষার একঘেয়ে প্রহরগুলো কাটাতে হয় কাছের ছোট ছোট টং দোকানগুলোর আশেপাশে। শ্রেণীগত কারণেই তাদের গা থেকে বুক চিনচিন করা গ্রামের গন্ধ মুছে যায়নি বলে নগরীর খা খা রোদ্দুরে হাপিত্যেশ করা মন হয়তো অজান্তেই ছুটে যায় প্রিয়তম গ্রামের খোলা প্রান্তরের কোন উদাসী বটের ছায়ায়। তাদেরই কেউ একজন কোত্থেকে এক বটের চারা এনে রোয়ে দিলো এখানে। তরতর করে বেড়ে ওঠা চারা বৃক্ষের আদল পেতেই এই ড্রাইভাররাই স্বউদ্যোগে ইট-বালু-সিমেন্ট সংগ্রহ করে গাছের গোড়ায় একদিন নিজেরাই হাত ধরাধরি করে চমৎকার একটা বেদী বানিয়ে ফেললো। ব্যাস, নিজেদের অপেক্ষাগুলো সহনীয় তো হলোই, পাশাপাশি পথচারীদের একদণ্ড জিরিয়ে নেয়ার মোক্ষম সুযোগদাতা এই বটের বেদীটাকে ঘিরে এখানে বেড়ে গেলো কর্মচঞ্চলতাও। প্রচুর লোকজনের আনাগোনার কারণে প্রতিদিন হরেক সদাই নিয়ে ফেরীওয়ালাদের আগমন আর চেয়ার-টেবিল পেতে ফেক্সীলোডের ভ্রাম্যমান দোকানসহ আরো কত কিছু।

এককালে নদী তীরবর্তী কোন প্রাচীন বটবৃক্ষকে ঘিরে গঞ্জ-সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিলো বলেই হয়তো এর পর্যায়ক্রমিক নাগরিক উত্তরাধিকার হিসেবে বাঙালির নাড়ির সাথে এই বটগাছের সম্পর্ক মিথলজিক্যাল আবেগে জড়িত। নইলে নগরীর অপ্রশস্ত ফুটপাথে বেড়ে ওঠা বটের ছায়া খুবই অযৌক্তিক বলেই মনে হয়। রাস্তার ঠিক ওপাশে মিরপুর ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ের সামনের ফুটপাথে খাজাবাবার ভাণ্ড বসানোর নিমিত্তে আরেকটি বেদী বাঁধানো উঠতি বটগাছের অস্তিত্বও একই সাক্ষ্য দেয়। তবু বিদ্যুতের তার এবং রাস্তায় চলমান যানবাহনের নিরাপত্তার কারণে বটের বেয়াড়া ডালপালার নিষ্ঠুর ছাটাই-চিহ্ন এখনই সেই আগাম বার্তাই জানাচ্ছে- এই নাগরিক ফুটপাথ ক্রমবর্ধমান ছায়াবিলানো বটবৃক্ষের উপযোগী নয় কোনভাবেই। অনিবার্য বৃক্ষনিধনই হয়তো এ নগরীর চূড়ান্ত লক্ষ্য।

1 comment:

Loginbd said...

Vhalo likhechen.......Ai jaga ta obosso amar o chena........But eta bot gas na onno kichu ta nia ato govir vabe chinta kora hoyni asole.........