Saturday, December 25, 2010

| ছড়ার গাঁঠছড়াটা খুলবে কী করে….|

 
| ছড়ার গাঁঠছড়াটা খুলবে কী করে…|
-রণদীপম বসু

পূর্বকথন
বাংলা ছড়া নিয়ে লিখতে বসলে প্রথম যে বিপত্তিটা দেখা দেয় তা হলো, ছড়া কী, তার কোন নিষ্পত্তি চোখে না পড়া। এটা যদি লেখকের একান্তই নিজস্ব সীমাবদ্ধতা হয় বা হতো, তাহলেও একটা সান্ত্বনা থাকতো যে- জন্মান্ধ চোখে ঢুরে দেখা হয়নি, তবে নিশ্চয়ই এর একটা নির্দিষ্ট রূপরেখা চিহ্নিত করা আছে হয়তো। কিন্তু বাস্তবতার সাক্ষ্য কি তা বলে, বা চোখে পড়ে কোথাও ? বিজ্ঞজনেরা হয়তো ছড়া, কবিতা, পদ্য এর মধ্যকার সূক্ষ্ম বা স্থূল পার্থক্যের ধারণাগুলো নিজস্ব বোধে আত্মস্থ করে নিয়ে নিরন্তর চর্চার মাধ্যমে তা থেকে রসবৈচিত্র্যের সন্ধান করতে সক্ষম ঠিকই। কিন্তু অধিকাংশ সাধারণ সাহিত্যরসিক ও আগ্রহীজনের অনভিজ্ঞ বোধ ও মননে এই পার্থক্যহীনতার মিশ্রন ও প্রভাব আসলে সত্যিকারভাবে কতোটা রসবোধ তৈরি করতে সক্ষম তা নিয়ে মনে হয় আমরা কেউ ভাবি না। 
 
এর অন্যতম কারণ হতে পারে রসিকজনের জিহ্বা সুস্থ থাকলে কোনটা রসগোল্লা, কোনটা রাজভোগ, কোনটা চমচম, কোনটা ক্ষীরতোয়া বা মালাইচপ ইত্যাদি নাম জানা না থাকলেও রস আস্বাদনে সমস্যা হবার কথা নয়। সবগুলোই রসালো মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য। জিহ্বায় চেখে চেখে স্বাদের তারতম্যের ভিত্তিতে তিনি এর একটা গ্রেডিং করে ফেলতেই পারেন। তবে কিঞ্চিৎ সমস্যা হয় অন্যত্র। প্রিয় সুস্বাদু দ্রব্যটার বর্ণনায় পঞ্চ আঙুলে বিচিত্র আকৃতি প্রদর্শন করতে করতে যখন বলতে থাকবেন- এই অনেকটা গোলাকার চ্যাপ্টামতোন হালকা খয়েরি-বাদামি মিশ্রিত রঙের নরমও না শক্তও না একটু দানাদানা আলুভর্তার মতো মিষ্টি গোল্লা যা কিনা ঘন দুধে ভেজা আর উপরে সুজির মতো নানান রঙের কিছু গুঁড়ো ছিটানো, তখন মনোযোগী শ্রোতা এ থেকে কী বুঝবেন তিনিই জানেন। শ্রোতা কিছু বুঝুন বা না বুঝুন কিংবা বক্তা তার ব্যাখ্যা সঠিকভাবে করতে পারুন বা না পারুন তাতে ওই দ্রব্যের কিছু যাবে আসবে না, বা এর স্বাদেও তারতম্য হবে না। আর যদি দৈবক্রমে দ্রব্যটির নামটা জানা যায়, তাহলে তো কথাই নেই। হয়তো অনিশ্চিত পর্যবেক্ষণের ঝামেলায় না পড়ে সুনির্দিষ্ট দ্রব্যটা খুঁজে নিয়ে চেখে নেওয়া অসম্ভব হবে না। অর্থাৎ রসসৃষ্টির রস গ্রহণে রসবোধধারী রসগ্রহীতার দিক থেকে তেমন কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। তিনি চমচম না মালাইচপ না কি অন্যকিছু পছন্দ করবেন এটা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু যদি রসস্রষ্টাই না জানেন কোন্ দ্রব্যের প্রস্তুত-কৌশল কীরকম হয়, তাহলে অবস্থা কী দাঁড়াবে ! তিনি চমচম বা ক্ষীরতোয়া বানাতে গিয়ে আসলে কী বানাবেন, নিজেই কি জানবেন আদৌ ! আমাদের ছড়া-সাহিত্যও যে এরকম একটা হ্যাপার মধ্যেই খাবি খাচ্ছে তা বোধ করি বলার অপেক্ষা রাখে না।  পদ্ধতি জানা থাকলে সৃষ্টিতে বৈচিত্র্য আনা অসম্ভব কিছু নয়। বরং নিত্যনতুন বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হতে থাকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র বা অঙ্গন। আমাদের সাহিত্যের কলা-কৌশলও তো সেরকমই। ছড়া-সাহিত্যও এর বাইরের কিছু নয়।

অত্যন্ত বিব্রতকর বিষয় হচ্ছে আমরা যারা ছড়াচর্চায় নিত্য জড়িত রয়েছি বলে দাবী করি তাঁদের কাছেও ছড়া কী, এর বৈশিষ্ট্য বা রূপরেখা কেমন, কবিতা বা পদ্যের সাথে কোথায় এর ভিন্নতা তা স্পষ্ট নয়। যেহেতু এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন রূপরেখাই নির্ণীত হয়নি, তাই ‘যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা’র মতো যার যা-খুশি উগড়ে দিয়ে ছড়া বা কবিতা বলে চালিয়ে দেয়ার ঝোঁক থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি না, পারছি না, এবং ছড়ার লক্ষণ সুস্পষ্ট করা না গেলে আগামীতেও তা পারবো বলে মনে হয় না। অথচ বিস্ময়ের ব্যাপার, তা নিয়ে বর্তমানে কেউ চিন্তিত বলেও মনে হয় না। নিজের সৃষ্টির স্থায়ীত্ব নিয়ে সন্দিহান কেউ কেউ হয়তো তা না চাইতেই পারেন, তাই বলে কালচক্ষু তা নিরন্তর এড়িয়ে যাবে এমনটা ভাবা সুবিবেচনার পরিচায়ক নয়। কালের জবাবদিহিতার বাইরে যে আমরা কেউ নই, তা ভুলে যাওয়াও যে একটা আত্মঘাতি ভুল, সেটাও হয়তো ভুলে যাই আমরা। সাহিত্যে চিরকেলে পাঠকবোধ বা পাঠকচোখ বড় ভয়ঙ্কর জিনিস, যিনি তা অনুধাবনে ব্যর্থ হবেন, দুঃসহ পরিণামের অনিবার্যতা রোখার সাধ্য তাঁর কখনোই অর্জিত হবে না।

ছড়া-সাহিত্যের এইসব অমীমাংসিত বিষয়কে অনিবার্য ধরে ধারাবাহিক আলোচনায় অর্বাচীনের মতোই বর্তমান লেখক কর্তৃক ইতঃপূর্বে একটা নিবন্ধে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছিলো (‘ছড়া পত্রিকা’ ১৪ সংখ্যায়) ‘ছড়া’র গাঁটছড়াটা খুলবে কে’ শিরোনামে। প্রশ্নকারী যতই অর্বাচীন হোক, প্রশ্নগুলো নিশ্চয়ই অর্বাচীন নয়। কেননা বাংলা ছড়া’র স্বকীয়তা নির্ধারণে ওই প্রশ্নগুলোর মীমাংসা জরুরি বৈ কি। যতক্ষণ না তার মীমাংসা হবে ততক্ষণ এ আলোচনা থামাও ঠিক হবে না বলে ধারণা। কারণ সাহিত্যকে তার অন্তর্গত পার্থক্য, স্থায়িত্ব ও মূল্য বিচারে কিছু স্বতসিদ্ধতা মেনে চলতে হয়। অথবা কোন কিছু না-মানার ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট কিছু যুক্তিসিদ্ধতা থাকতে হয়। অর্থাৎ এই মানা বা না-মানার সাহিত্যমান নির্ধারণী স্বতসিদ্ধ সূত্রগুলো ছড়াসাহিত্যের ক্ষেত্রে একান্তই অমীমাংসিত রয়ে গেছে, যা ছড়াসাহিত্যের নিজস্ব অস্তিত্ব বা স্বকীয়তার জন্যেই অবশ্যম্ভাবী।

একালে এসে আমরা যতই নিশ্চুপ থাকি না কেন, বাংলা সাহিত্যে আমাদের বাঘা বাঘা পূর্বসূরী মহাজন ব্যক্তিরা ছড়াসাহিত্যের এই অবশ্যম্ভাবিতাকে যে অবহেলা করেন নি তা জানা যায় সেকালের সাহিত্য আলোচনা ও তাত্ত্বিক বিতর্কগুলোয় চোখ বুলালে। আর এসব আলোচনার কুশীলব যাঁরা ছিলেন তাঁরা হলেন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (বঙ্গীয় শব্দকোষ), রাজশেখর বসু (চলন্তিকা অভিধান), যোগেশ চন্দ্র রায় (বাঙ্গালা শব্দকোষ), নগেন্দ্রনাথ বসু (বিশ্বকোষ), সুকুমার সেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যোগীন্দ্রনাথ সরকার, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, মোহিতলাল মজুমদার, সুকুমার সেন, অন্নদাশঙ্কর রায়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মোঃ এনামুল হক, সৈয়দ আলী আহসান, আশুতোষ ভট্টাচার্য প্রমুখ পণ্ডিতজনেরা। এদের মধ্যে যেমন ছড়ার ইতিহাস খোঁজা নিয়ে ঝঞ্ঝাট বেঁধেছে, অন্যদিকে ছড়া’র বৈশিষ্ট্য বিচারের তুমুল তত্ত্ব চালাচালির মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রোপটে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মতামতগুলো জমা হয়ে তার অনুসরণে ছড়াসাহিত্যের একটা তাত্ত্বিক ভিতও প্রাথমিকভাবে দাঁড়িয়ে গেছে। তবে তা যে আপাত কিছু অনুসিদ্ধান্ত ছাড়া চূড়ান্ত কোন বাধ্যগত সিদ্ধান্ত ছিলো না এটা স্পষ্ট হয়ে যায় আলোচনা আরেকটু সামনে এগুলেই। এ ব্যাপারে (১৪ সংখ্যা ‘ছড়া পত্রিকা’র) উপরোক্ত নিবন্ধে বিস্তারিত আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান নিবন্ধে আমরা বরং সেসব তাত্ত্বিক আলোচনা না টেনে দ্বিরুক্তি হলেও সাবলীল আলোচনার সুবিধার্থে শুধু কিছু তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করবো।

উপরোক্ত পণ্ডিতজনের মতামতগুলোর অনুসরণে বাংলা ছড়ার মোটামুটি কিছু বৈশিষ্ট্য চিহ্ণিত করে গবেষক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ তাঁর গবেষণা গ্রন্থ ‘ছড়ায় বাঙালী সমাজ ও সংস্কৃতি’তে ছড়ার যে বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করেন, তা হলো:

১. ছড়ায় যুক্তিসঙ্গত বা বিশিষ্ট ভাব কিংবা ভাবের পারম্পর্য নেই।
২. ছড়ায় ঘটনার ধারাবাহিকতা বা আনুপূর্বিক কাহিনী থাকে না।
৩. ছড়া ধ্বনি প্রধান, সুরাশ্রয়ী।
৪. ছড়ায় রস ও চিত্র আছে, তত্ত্ব ও উপদেশ নেই।
৫. ছড়ার ছন্দ শ্বাসাঘাত প্রধান প্রাকৃত বাংলা ছন্দ।
৬. ছড়া বাহুল্যবর্জিত, দৃঢ়বদ্ধ ও সংক্ষিপ্ত।
৭. ছড়ার ভাষা লঘু ও চপল।
৮. ছড়ার রস তীব্র ও গাঢ় নয়, স্নিগ্ধ ও সরস।
আলোচিত মতামতগুলোর ভিত্তিতে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যায়। যেমন:
ক) ছড়া ও সঙ্গীতের পার্থক্য:
১. ছড়া আবৃত্তি বা ধ্বনিনির্ভর। অন্যদিকে সঙ্গীত তাল ও সুর নির্ভর।
২. ছড়ার সুর একটানা বৈচিত্র্যহীন। অন্যদিকে সঙ্গীতের সুর বিচিত্র বা বৈচিত্র্যময়।
খ) ছড়া ও শিশু-কবিতার পার্থক্য:
১. ছড়ার বিষয়বস্তু উদ্ভট, অসঙ্গত। শিশু-কবিতার বিষয়বস্তু সাধারণত সুসঙ্গত হয়ে থাকে।
২. ছড়ার আকার হ্রস্ব। শিশু-কবিতার আকার দীর্ঘও হয়ে থাকে।
৩. ছড়ার ছন্দ শ্বাসাঘাত প্রধান প্রাকৃত বাংলা ছন্দ অর্থাৎ স্বরবৃত্ত। কিন্তু শিশু-কবিতার যে কোন ছন্দ হতে পারে।
৪. ছড়ার পরিণতি আকস্মিক। অন্যদিকে শিশু-কবিতার পরিণতি সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত।

মজার ব্যাপার হচ্ছে ছড়ার উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণী মতামতদানকারী কুলীন সাহিত্যিকরা, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে যাঁরা ঊনবিংশ শতকের শেষভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত নিজেদেরকে ছড়া রচনায় ব্রতী রেখেছিলেন তাঁদের অধিকাংশ রচনাই উপরোক্ত সবগুলো বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে পারেনি তো বটেই, এমনকি এসব বৈশিষ্ট্যের স্বতসিদ্ধতা আরোপ করা হলে খুব বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করি যে বাংলা সাহিত্যে আধুনিক ছড়ার আদর্শ রাজপুরুষ হিসেবে যিনি পরিচিত, যাঁকে ঘিরে বাংলা ছড়া বাস্তবিকই সাহিত্যের রাজপথ দখলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে, সেই সুকুমার রায়ও অনায়াসে ছড়া থেকে বাতিল হয়ে যান। এ বিষয়ে (১৪ সংখ্যা ‘ছড়া পত্রিকা’র) উপরে উল্লিখিত ‘ছড়ার গাঁটছড়াটা খুলবে কে?’ নিবন্ধে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে বিধায় এখানে এর পুনরাবৃত্তি করা বাহুল্য হবে।

গাঁটছড়া কেন?
সাহিত্য বা সংস্কৃতির জন্ম কোন কিছু বাতিল বা বর্জনের জন্য নয় বরং বহমান কাল বা সময় ও জীবনযাত্রাকে সুনির্দিষ্ট সুষমায় রাঙিয়ে যথাযথ শৃঙ্খলায় উপস্থাপন ও জনমানসের দৃষ্টিগোচরে নেয়ার তাগিদেই সাহিত্যধারার জন্ম। কিন্তু ভুল জায়গায় ভুলভাবে উপস্থাপন যতটা না বিব্রতকর, তার চেয়ে বেশি থাকে তার গ্রহণ ও বর্জনের দোলাচলে টিকে থাকার সন্দিগ্ধতা। হারিয়ে যাবার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না, যদি না তাকে তার নিজস্ব অবস্থানে চিহ্ণিত করে দেয়ার দায় কেউ নেয়। একটি ছড়াকে কতকগুলো কবিতাশিল্পের পঙক্তিতে বসিয়ে দিলে যেমন ওটা কবিতা হবে না, তেমনি একটি কবিতা বা পদ্যকে ছড়াশিল্পের সারিতে বসালেও সেটা ছড়া হয়ে যাবে না। উল্টো তা গুরুত্ব হারিয়ে অপ্রয়োজনীয়তায় পর্যবসিত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিল্প, শিল্পমানস ও এর সৃজনশীল প্রয়াস ও প্রত্যাশা। কিন্তু কোনটি কার যথাযথ স্থান এবং এর চিহ্নিতকরণ সূত্র কী, এ প্রশ্নেই মূলত ছড়া নিয়ে গাঁটছড়ার সূত্রপাত।

আমরা জানি যে, সাহিত্য বিচারে বাংলা ছড়ার বিশাল ভাণ্ডারকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়ে থাকে। লোকছড়া এবং আধুনিক ছড়া। ছড়ার যে অংশ অজ্ঞাত রচয়িতার মৌখিক সৃষ্টি, তা-ই লোকছড়া।  আর আধুনিক যুগে লেখকদের রচিত ছড়াই আধুনিক ছড়া। এ সংজ্ঞা খুব মোটাদাগে আংশিক সত্য হতে পারে, কিন্তু তা কোনভাবেই পরিপূর্ণ সংজ্ঞা নয়। কেননা এতে সুনির্দিষ্টভাবে রচনার কোন কালনির্দেশনা নেই। আর আধুনিক যুগেও অজ্ঞাত রচয়িতা থাকতে পারে। তাছাড়া আধুনিক যুগ কথাটিতেও যথেষ্ট অস্পষ্টতা রয়েছে। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ, বিশ্বসাহিত্যের আধুনিক যুগ, ইতিহাসের আধুনিক যুগ কিংবা সভ্যতার আধুনিক যুগের মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাই আধুনিক যুগের লেখক বলতে কাদেরকে বোঝানো হয় তা স্পষ্ট হয়ে গেলে রচনার কালনির্দেশনাও চিহ্নিত হয়ে যায়। তবে তা খুব জটিল কিছু নয়। একটা ইঙ্গিত বিশ্লেষণ করলেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। লোকছড়া কেন অজ্ঞাত রচয়িতার মৌখিক সৃষ্টি হবে ? কারণ লিখে রাখার অবারিত সুযোগ ও সম্ভাবনা তখনো সৃষ্টি হয়নি বলে। কেননা তখনো ভাষার সুনির্দিষ্ট কোন লিখিত রূপ ও কাঠামো তৈরি হয়নি, শাসন কাঠামো থেকে সামন্ততন্ত্রের উৎখাত হয়নি এবং সমাজ গঠনে তখনো নগর ও নগরকেন্দ্রিকতার বিকাশ ঘটে নি, যা সম্পন্ন হলেই আধুনিক যুগের উন্মেষ হয় বলে সমাজবিজ্ঞানীদের অভিমত। আর যুগ-সাহিত্যে আধুনিকতার উন্মেষে মুদ্রণযন্ত্রের প্রচলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান বৈশিষ্ট্য সন্দেহ নেই। তাই তৎকালীন বঙ্গ সমাজ ও জীবনে আধুনিক যুগের সূচনা বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ তাঁর গবেষণা গ্রন্থ ‘ছড়ায় বাঙালী সমাজ ও সংস্কৃতি’-এ উল্লেখ করেন-

‘বিশ্বপর্যায়ে সামন্তবাদী শাসনের সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটির বিলোপ ঘটে কনস্টান্টিনোপলের পতনের (১৪৫৩) মধ্য দিয়ে। পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় রেঁনেসা, মুদ্রণযন্ত্রসহ কতিপয় যুগান্তকারী উদ্ভাবন, বিজ্ঞানসহ জ্ঞানের তুলনাহীন বিকাশ আধুনিক যুগের ভিত্তি স্থাপন করে। সমাজবিকাশের ধারায় মধ্যযুগে সামন্তবাদের সঙ্গে এবং আধুনিক যুগ ধনবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অন্যদিকে আধুনিক যুগের আর একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিকশিত হয় নগর ও নগরকেন্দ্রিকতা।
ইউরোপে পঞ্চদশ শতকে সামন্তবাদের অবসান ঘটলেও বঙ্গে তা আরও তিনশত বছর অব্যাহত ছিল। ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা অঞ্চল নিয়ে গঠিত তৎকালীন সুবায় সামন্তবাদী নবাবী শাসনের অবসান ঘটে পলাশীর যুদ্ধে (১৭৫৭) তাদের পরাজয়ের ফলে। সিরাজ-পরবর্তী সময়ে মুর্শিদাবাদের সিংহাসনে মীর জাফর, মীর কাশিম প্রমুখ আসীন হলেও রাজদণ্ডের প্রকৃত ক্ষমতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর করতলগত ছিল। সমাজ বিচারে উক্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ছিল ধনতন্ত্রের প্রথম পর্যায় বণিক ধনতন্ত্র (Mercantile Capitalism)-এর প্রতিনিধি। ধনতন্ত্রের সঙ্গে আধুনিকতার অচ্ছেদ্য বন্ধন, তাই বঙ্গেও সূচিত হয় আধুনিক যুগ ও জীবনের।’

আরো অনেক পর এই বৃটিশ-ইন্ডিয়ায় মুদ্রণযন্ত্রের প্রচলন হলে আমরা জানি যে উনিশ শতকের শেষভাগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও যোগীন্দ্রনাথ সরকার বাংলা লোকছড়ার সংগ্রহ এবং তা সাহিত্য পত্রিকার মাধ্যমে ও পুস্তকাকারে জনসমক্ষে প্রথম প্রকাশের উদ্যোগ নেন। অতএব মুখে মুখে লোকছড়া রচনাকালের সাথে আধুনিক ছড়া রচনার একটা কালক্রমের আভাস আমরা এ থেকে পেয়ে যাই। আর মুখে মুখে রচিত লোকছড়ার রচয়িতারা যেহেতু সরাসরি কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন, তাই লোকছড়ার প্রাণ ও রূপটিও সেই কৃষি-সংশ্লিষ্ট উপাদান, উপকরণ, উপাচার ও জীবনযাত্রাকেই প্রতিফলিত করে। অন্যদিকে আধুনিক ছড়াও তার কালকে কোনভাবেই উপেক্ষা করতে পারে না। তাই লোকায়ত শ্রুতি ও স্মৃতিনির্ভর জীবনধারার বাহুল্যবর্জিত সারল্য, তত্ত্ব-উপদেশমুক্ত লঘু চিন্তা, ভাব ও প্রাকৃত ছন্দ লোকছড়ায় প্রতিফলিত হলেও আধুনিক জীবনধারায় স্বভাবতই তা অধিকতর জটিলরূপে উদ্ভাসিত। ফলে লোকছড়ার সাদৃশ্যে সামগ্রিক বাংলা ছড়াকে বৈশিষ্টায়িত করা ঠিক হবে কি ?

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের রেঁনেসাকালে যখন আধুনিক সাহিত্য তার অবয়ব নিতে শুরু করেছে, তখন নমুনা হিসেবে ইউরোপিয় সাহিত্য ছাড়া অন্যতম নিজস্ব লৌকিক সম্পদ হিসেবে ছড়ানো ছিটানো ছিলো বিপুল পরিমাণ বাংলা প্রাকৃত লোকছড়ার উজ্জ্বল উপস্থিতি। ফলে ছড়া একটি পৃথক আঙ্গিক হিসেবে রূপলাভ করার আগ পর্যন্ত সাহিত্যের গঠনবৈচিত্র্যে এর ব্যাপক প্রভাব আমরা লক্ষ্য করি। বলা যায় লোকছড়াই বাংলা সাহিত্যের আদি প্রাণ। এক্ষেত্রে জনাব শাহেদ তাঁর গবেষণাগ্রন্থে আধুনিক বাংলা ছড়ার উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে পর্যাপ্ত আলোচনা থেকে যে কতিপয় সূত্র নির্দেশ করেন, তা স্মর্তব্য-

ক. সমগ্র মধ্যযুগের লোকসাহিত্যে লোকছড়ার স্পষ্ট উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও কোন পুঁথিতে পৃথকভাবে ছড়ার সন্ধান পাওয়া যায় না।
খ. অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীতে আঙ্গিক হিসেবে পদ্য ও গদ্যে ছড়ার প্রভাব ব্যাপক ও বিপুল, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ছড়া-রচনা বিরল।
গ. বিংশ শতাব্দীতে লোকছড়ার সংগ্রহ, ইউরোপীয় ছড়ার প্রভাব, শিশু-পত্রিকার প্রকাশ প্রভৃতি বঙ্গের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদেরকে ছড়া রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। এ-সময়ে ছড়া-চর্চা স্ফীত আকার ধারণ করে।
ঘ. বিংশ শতাব্দীর চতুর্থ দশকের মধ্যেই ছড়া একটি পৃথক আঙ্গিক হিসেবে বাংলা সাহিত্যের ধারায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।

বাংলা সাহিত্যের ধারায় পৃথক আঙ্গিক হিসেবে ছড়ার এই যে প্রতিষ্ঠা, তার জন্যে তৎকালীন পণ্ডিতজন ও সংশ্লিষ্ট সাহিত্যমোদিদেরকে যথেষ্ঠ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বৈ কি। বিস্তর তত্ত্ব চালাচালি, বাক-বিতণ্ডা, সৃজন-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে বাংলা ছড়ার যে অবধারিত বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করা হয়, তাতে করে পৃথক আঙ্গিক হিসেবে বাংলা সাহিত্যে ছড়ার প্রতিষ্ঠা হয়েছে অবশ্যই। কিন্তু তাতে লোকছড়ার আঙ্গিকই প্রাধান্য পেয়েছে বেশি, আধুনিক ছড়ার ঔজ্জ্বল্যকে যেকোনো কারণে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলেই মনে হয়। ফলে পরবর্তীকালে যেসব রচনাকে আমরা সফল ও আদর্শ আধুনিক ছড়া হিসেবে গ্রহণ ও অনুসরণ করতে ব্রতী হয়েছি, সেগুলোই ছড়া হয়ে ওঠার সেই অনিবার্য বৈশিষ্ট্যের খাড়ায় কাটা পড়ে যাবার আশঙ্কায় পতিত হয়েছে। তাতে করে আধুনিক ছড়া-সাহিত্যের সৃজনধর্মিতাও মুখ থুবড়ে পড়ে যাবার দশা। এমতাবস্থায় আধুনিক ছড়ার অনিবার্য বৈশিষ্ট্য পুনর্বিবেচনা কিংবা নতুনভাবে নির্ধারণ করাটা এখন জরুরি বলেই মনে হয়। এতে যদি ছড়া নিয়ে গাঁটছড়ার ফাঁসটা আলগা হওয়ার সুযোগ পায় তবে তা আধুনিক ছড়ার জন্যে মঙ্গলকরই হওয়ার কথা। এখন প্রশ্ন, কীভাবে তা নির্ধারণ করবো।

ছড়াকে আমরা কীভাবে দেখতে চাই
দেখার দৃষ্টি ব্যক্তি ও সত্তাভেদে ভিন্ন ভিন্ন। সৃজনশীল ব্যক্তিমাত্রেই শিল্প-প্রকাশে পৃথক ও নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি লালন করেন। তবে কুড়েঘরকে যেমন আমরা নৌকা বলতে পারি না, কুড়েঘরই বলতে হয়, তেমনি শিল্পের নিজস্ব আঙ্গিকেরও কিছু সাধারণ ও অনিবার্য বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি। এক্ষেত্রে ছড়া অবশ্যই একটি মৌলিক শিল্প-মাধ্যম। তাই এর আঙ্গিকগত বৈশিষ্ট্যগুলো সুনির্দিষ্ট থাকা আধুনিক ছড়ার জন্যে অবশ্যম্ভাবী হওয়া উচিত। কুড়েঘরের আঙ্গিক ও বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখেও যেমন সৃজনশীল নির্মাতার জন্য এর নির্মাণে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করা সম্ভব, ছড়াও ঠিক তা-ই। তাহলে কী হবে আধুনিক ছড়ার রূপ ও বৈশিষ্ট্য ?

যেহেতু আমাদের সাহিত্যের কুলীন পূর্বসূরীরা আধুনিক ছড়ার, হোক তা লোকছড়ার আঙ্গিকে, একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে রেখেছেন, নমুনা হিসেবে আমরা সেখান থেকেই এর ছাঁচ নির্মাণে পুনর্বিবেচনার কাজগুলো শুরু করে দিতে পারি। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণের সুবিধার্থে ইতিপূর্বে সুকুমার রায়ের ‘গানের গুঁতো’ শীর্ষক যে রচনাটিকে ছড়া-বৈশিষ্ট্য নিরূপণের নমুনা বিশ্লেষণে ব্যবহার করা হয়েছিলো, এখনো সেটি ব্যবহারই অধিকতর সঙ্গত হবে।

গান জুড়েছেন গ্রীষ্মকালে ভীষ্মলোচন শর্মা-
আওয়াজখানা দিচ্ছে হানা দিল্লী থেকে বর্মা।
গাইছে ছেড়ে প্রাণের মায়া, গাইছে তোড়ে প্রাণপণ,
ছুটছে লোকে চারদিকেতে ঘুরছে মাথা ভন্ভন্।
মরছে কত জখম হয়ে করছে কত ছট্ফট্-
বলছে হেঁকে, “প্রাণটা গেল, গানটা থামাও ঝট্পট্।”
বাঁধন-ছেঁড়া মহিষ ঘোড়া পথের ধারে চিৎপাত;
ভীষ্মলোচন গাইছে তেড়ে নাইকো তাহে দৃক্পাত।
চার পা তুলি জন্তুগুলি পড়ছে বেগে মূর্ছায়,
লাঙ্গুল খাড়া পাগল পারা বলছে রেগে “দূর ছাই!”
জলের প্রাণী অবাক মানি গভীর জলে চুপচাপ,
গাছের বংশ হচ্ছে ধ্বংস পড়ছে দেদার ঝুপ্ঝাপ্।
শূন্য মাঝে ঘূর্ণা লেগে ডিগবাজি খায় পক্ষী,
সবাই হাঁকে “আর না দাদা, গানটা থামাও লক্ষী।”
গানের দাপে আকাশ কাঁপে দালান ফাটে বিলকুল,
ভীষ্মলোচন গাইছে ভীষণ খোশমেজাজে দিল্ খুল্।
এক যে ছিল পাগলা ছাগল, এমনি সেটা ওস্তাদ,
গানের তালে শিং বাগিয়ে মারলে গুঁতো পশ্চাৎ।
আর কোথা যায় একটি কথায় গানের মাথায় ডাণ্ডা,
বাপ রে’ বলে ভীষ্মলোচন এক্কেবারে ঠাণ্ডা।
(গানের গুঁতো/ আবোল তাবোল/ সুকুমার রায়)

উক্ত রচনাটি (‘ছড়া পত্রিকা’ ১৪ সংখ্যায়) ‘ছড়া’র গাঁটছড়াটা খুলবে কে’ নিবন্ধে বিশ্লেষণ করা হয়েছিলো এভাবে-

আধুনিক ছড়ার অনিবার্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রধান যে আটটি শর্ত বা বৈশিষ্ট্যকে চিহ্ণিত করা হয়েছে, এর সাথে আমরা নিশ্চয়ই এবার সুকুমারকে একটু মিলিয়ে দেখতে পারি।
প্রথম বৈশিষ্ট্যে বলা হয়েছে, ‘ছড়ায় যুক্তিসঙ্গত বা বিশিষ্ট ভাব কিংবা ভাবের পারম্পর্য নেই।’ কিঞ্চিৎ সন্দেহ থাকলেও ধরে নিলাম রচনাটির মধ্যে উক্ত বৈশিষ্ট্য পুরোদমেই বলবৎ আছে। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ‘ছড়ায় ঘটনার ধারাবাহিকতা বা আনুপূর্বিক কাহিনী থাকে না।’ এখানে এসে সম্ভবত সুকুমারের আলোচ্য রচনাটিতে খানিকটা সন্দেহ আর অপ্রকাশিত রাখার সুযোগ নেই। ভীষ্মলোচনের প্রবল সংগীতানুরাগের ঘটনায় পর্যায়ক্রমিক একটা কাহিনী সুকুমার তৈরি করেই রেখেছেন, যা কিনা শিং বাগানো পাগলা ছাগলের গুঁতো খেয়ে ভীষ্মলোচনের ঠাণ্ডা হওয়ার মধ্য দিয়ে যবনিকাপাত ঘটে। তাহলে আধুনিক ছড়ার দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য কি ক্ষুণ্ন হয়ে গেলো না ?  ‘ছড়া ধ্বনি প্রধান, সুরাশ্রয়ী।’ তৃতীয় এ বৈশিষ্ট্যে যেমন কোন সমস্যা দেখা যায় না, তেমনি চতুর্থ বৈশিষ্ট্য ‘ছড়ায় রস ও চিত্র আছে, তত্ত্ব ও উপদেশ নেই’ এবং পঞ্চম বৈশিষ্ট্য ‘ছড়ার ছন্দ শ্বাসাঘাত প্রধান প্রাকৃত বাংলা ছন্দ’ এর সাথেও কোন সংঘাত চোখে পড়ে না। বরং পুরোমাত্রায় এ বৈশিষ্ট্যগুলো উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয়। কিন্তু ষষ্ঠ বৈশিষ্ট্যে এসে ফের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। এখানে শর্ত হলো- ‘ছড়া বাহুল্যবর্জিত, দৃঢ়বদ্ধ ও সংক্ষিপ্ত।’ বাহুল্যবর্জিত ও দৃঢ়বদ্ধতা কোনোভাবে অতিক্রম করা গেলেও আকারে সংক্ষিপ্ত হবার শর্তটিতে এসে এবার আমাদেরকেই প্রশ্নমুখী হয়ে উঠতে হয়। ছড়ার সংক্ষিপ্ত আকার আসলে কতটুকু ? এ ধরনের নিয়মসিদ্ধ কোন শর্ত কি কোথাও পেয়েছি আমরা ? তবে সাধারণ বিবেচনা দিয়েও আমরা স্বরবৃত্ত চারমাত্রার সাড়েতিন পর্বের পঙক্তি হিসেবে ২ স্তবকে ২০ পঙক্তির কোন রচনাকে নিশ্চয়ই ছোট বলতে পারি না। আর বললেও কেউ মেনে নেবেন বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে ছড়া-বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রচনাটিকে বেশ দীর্ঘই বলতে হবে। অতএব বাকি দুটো বৈশিষ্ট্য- ‘ছড়ার ভাষা লঘু ও চপল’ এবং ‘ছড়ার রস তীব্র ও গাঢ় নয়, স্নিগ্ধ ও সরস’ শর্তানুযায়ী খাপে খাপে মিলে গেলেও আটটি অনিবার্য শর্তের সবকটি পূরণে ব্যর্থ হওয়ার দণ্ড হিসেবে সুকুমারের ‘গানের গুঁতো’ রচনাটি শেষপর্যন্ত ছড়াপদবাচ্য থেকেই বাদ পড়ে যায়। আর শুধু যে আলোচ্য রচনাটিরই ছড়া-মুক্তি ঘটলো তা-ই নয়, প্রতিনিধিত্বকারী এই রচনাটির সাথে বলা চলে সুকুমার রায়ের ছড়াজাতীয় প্রায় পুরো রচনাবলীরই ছড়ামুক্তি ঘটে যায়।

এখন প্রশ্ন হলো সুকুমার রায়ের এই ‘গানের গুঁতো’ শীর্ষক রচনাটিকে আমরা একটি আদর্শ ছড়ার অন্যতম নমুনা হিসেবে মানবো কিনা। যদি না মানি, তাহলে সুকুমার রায়ের ছড়ামুক্তির সাথে সাথে বাংলা ছড়া-সাহিত্যের যে ধারাটিকে আমরা সুপ্তভাবে হলেও আদর্শ হিসেবে বুকে ধারণ করে রাখি, তারও চিরমুক্তি ঘটে যায়। সুস্থ ও স্বাভাবিক চিন্তায় এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই কেউ নিতে পারি না আমরা। আর যদি রচনাটিকে ছড়া-সাহিত্যের অন্যতম আদর্শ রূপকল্প হিসেবে বিবেচনা করতে আগ্রহী হই, তাহলে আধুনিক ছড়ার প্রদত্ত অনিবার্য শর্ত ও বৈশিষ্ট্যগুলোকেই পুনর্বিন্যাস ও বিবেচনায় হাত দিতে হয়। আপাত প্রস্তাবনা হিসেবে আমরা সেটিই করে দেখতে পারি।

বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এবার উপরিউক্ত রচনাটিকে একটি আদর্শ ছড়ার প্রতিভূ হিসেবে মেনে নিয়ে তার মাধ্যমে ছড়ার অনিবার্য বৈশিষ্ট্যগুলোকেই পুনর্বিন্যস্ত করতে পারি। এক্ষেত্রে প্রথম বৈশিষ্ট্য ‘ছড়ায় যুক্তিসঙ্গত বা বিশিষ্ট ভাব কিংবা ভাবের পারম্পর্য নেই।’ অনিবার্য বলেই মনে হয়। কেননা কবিতার সাথে ছড়ার পার্থক্য নির্ধারণে এটা গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য। ছড়াকে হালকা, গাম্ভীর্যহীন, সরস ও স্যাটায়ারধর্মী করতে হলে যুক্তিসঙ্গত বা ভাবগম্ভীর হওয়ার সুযোগ নেই। এই নমুনা-ছড়ায়ও বৈশিষ্ট্যটি চমৎকারভাবে বিদ্যমান রয়েছে। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য ‘ছড়ায় ঘটনার ধারাবাহিকতা বা আনুপূর্বিক কাহিনী থাকে না।’ দিয়েই মূলত রচনাটির সাথে বৈশিষ্ট্য-নির্ধারণী সংঘাত তৈরি হয়ে গেছে।  ঘটনার ধারাবাহিকতা থাকলেই যে ছড়া তার সরস-বৈশিষ্ট ও তীর্যকতা হারাবে, এটা এ রচনা ভুল প্রমাণ করেছে। অতএব, আধুনিক ছড়ায় এ বৈশিষ্ট্য অনিবার্য হিসেবে আরোপ করা অর্থহীন বলেই মনে হয়। তাই বৈশিষ্ট্যসূচক সংঘাত নিরসনে আমরা এটাকে এভাবে পুনর্বিন্যস্ত করে বলতে পারি- ‘ছড়ায় ঘটনার ধারাবাহিকতা বা আনুপূর্বিক কাহিনী থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে।‘ছড়া ধ্বনি প্রধান, সুরাশ্রয়ী।’ তৃতীয় এ বৈশিষ্ট্য বর্তমান রচনায় কোন সমস্যাপূর্ণ নয়। যেহেতু ছড়া হবে ভাবগাম্ভীর্যহীন হালকা চটুল, তাই তার অন্যতম শর্ত হিসেবে ধ্বনি প্রধান হওয়াটাই বাঞ্ছনীয় হিসেবে ধরা যেতে পারে। চতুর্থতঃ ‘ছড়ায় রস ও চিত্র আছে, তত্ত্ব ও উপদেশ নেই’- এটা ছড়ার মৌলিক বৈশিষ্ট্যের অন্তর্গত। এক্ষেত্রে দ্বিমত করার অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। পঞ্চম বৈশিষ্ট্যে ‘ছড়ার ছন্দ শ্বাসাঘাত প্রধান প্রাকৃত বাংলা ছন্দ’ এর সাথে বর্তমান রচনার কোন সংঘাত চোখে না পড়লেও এটা আধুনিক ছড়ার অনিবার্য বৈশিষ্ট্যে অন্তর্ভূক্ত হবে কিনা তা অন্য কোন আদর্শ নমুনার সাথে মিলিয়ে দেখার অবকাশ রয়েছে। ষষ্ঠ বৈশিষ্ট্য ‘ছড়া বাহুল্যবর্জিত, দৃঢ়বদ্ধ ও সংক্ষিপ্ত।’ এতে বাহুল্যবর্জিত ও দৃঢ়বদ্ধতা নিয়ে সমস্যা দেখা না দিলেও আধুনিক ছড়ার সংক্ষিপ্ততা বর্তমান রচনায় প্রযোজ্য হয় না। শ্রুতি ও স্মৃতিনির্ভর লোকছড়া রচনার কালপর্বে মুখে মুখে কাটা ছড়া লোকমুখে ছড়িয়ে যাওয়া ও তা শুনে স্মৃতিতে ধরে রাখার প্রয়োজনেই ছড়ার আকার সংক্ষিপ্ত থাকা অনিবার্য ছিলো হয়তো। কিন্তু আধুনিক ছড়ার ক্ষেত্রে তা বাধ্যতামূলক অনুভূত হয় না। তাই বৈশিষ্ট্যটিকে আমরা পুনর্বিন্যস্ত করে এভাবে বলতে পারি- ‘ছড়া হবে বাহুল্যবর্জিত ও দৃঢ়বদ্ধ।’  সপ্তম ও অষ্টমে বাকি দুটো বৈশিষ্ট্য- ‘ছড়ার ভাষা লঘু ও চপল’ এবং ‘ছড়ার রস তীব্র ও গাঢ় নয়, স্নিগ্ধ ও সরস’ও ছড়ার মৌলিক শর্ত, যা আধুনিক ছড়ার অনিবার্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে বহাল থাকা উচিত। নইলে ভিন্ন আঙ্গিকের পদ্য ও কবিতাশিল্পের সাথে ছড়ার আঙ্গিক ও ভাবগত কোন স্বতন্ত্র পার্থক্য সূচিত হয় না। তবে লোকছড়ায় অনিবার্য না হলেও আধুনিক ছড়ায় যে বৈশিষ্ট্যটি থাকলেই অনায়াসে এটাকে ছড়া হিসেবে মেনে নিতে সমস্যা হয় না, তা হচ্ছে স্যাটায়ারধর্মিতা। হিউমারের এই প্রাধান্যই ছড়াকে কাছাকাছি আঙ্গিকের অন্য শিল্পমাধ্যম কবিতা বা পদ্য থেকে আলাদা করে দেয়।

অতএব, এবার আমরা যদি আধুনিক বাংলা ছড়ার অনিবার্য বৈশিষ্ট্যগুলোকে পুনর্বিন্যস্ত করে সাজিয়ে নেই, তাহলে শর্তগুলো দাঁড়ায় এরকম-

১) ছড়ায় যুক্তিসঙ্গত বা বিশিষ্ট ভাব কিংবা ভাবের পারম্পর্য নেই।
২) ছড়ায় ঘটনার ধারাবাহিকতা বা আনুপূর্বিক কাহিনী থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে।
৩) ছড়া ধ্বনি প্রধান, সুরাশ্রয়ী।
৪) ছড়ায় রস ও চিত্র আছে, তত্ত্ব ও উপদেশ নেই।
৫) ছড়ার ছন্দ শ্বাসাঘাত প্রধান প্রাকৃত বাংলা ছন্দ। (আপাত গৃহীত হলেও তা অনিবার্য হবে কি না তা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।)
৬) ছড়া বাহুল্যবর্জিত ও দৃঢ়বদ্ধ।
৭) ছড়ার ভাষা লঘু ও চপল।
৮) ছড়ার রস তীব্র ও গাঢ় নয়, স্নিগ্ধ ও সরস।
৯) ছড়া স্যাটায়ারধর্মী বা হিউমার প্রধান।

আপাতদৃষ্টিতে আধুনিক বাংলা ছড়ার উপরিউক্ত পুনর্বিন্যাসকৃত বৈশিষ্ট্যগুলোকে আরো সংহত করার লক্ষ্যে ভিন্ন আরেকটি নমুনার সাথে আমরা যাচাই করে নিতে পারি।

আয় ভাই, ভাগ ক’রে
নিই জমিদারী,-
আমি রাখি জমিটুকু,
তুই রাখ্ দাড়ি।
আমি নেব হাতিশালে
যত হাতি, আর
তুই নিস্ ছুরি কাঁচি
যত হাতিয়ার।
তারপরে ভাগ করি
এই ঘোড়াশাল,–
আমি নেব ঘোড়াগুলো
তোকে দেব শাল !
ভিটেমাটি সব কিছু
ভাগ করে নেব,–
আমি যদি ভিটে পাই
তোকে মাটি দেব !
(ভাগাভাগি / রঙদার / আবদার রশীদ )

আবদার রশীদের চমৎকার হিউমারপূর্ণ এই রচনাটি আধুনিক বাংলা ছড়া-সাহিত্যের আরেকটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এখানে আধুনিক ছড়ার প্রস্তাবিত বৈশিষ্ট্যসূচক নয়টি শর্ত কোথাও ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। এরকম আরেকটি উদাহরণ-

‘মানুষ যদি গরু হতো
মোটা যদি সরু হতো
নদী যদি মরু হতো
পাহাড় যদি তরু হতো
সাগর যদি আকাশ হতো, আকাশ হতো মাঠ’-
ভাবতে ভাবতে কেষ্টদাসের বয়স হলো ষাট।
‘সিলেট যদি ঢাকা হতো
বুলেট যদি টাকা হতো
সোজা যদি বাঁকা হতো
চেয়ার যদি চাকা হতো
টেবিল যদি বালতি হতো, বালতি হতো ফুল’-
ভাবতে ভাবতে সাদা হলো কেষ্টদাসের চুল।
‘লুঙ্গি যদি জামা হতো
বাক্স যদি ধামা হতো
কাগজ যদি তামা হতো
বড়দা যদি মামা হতো
বউদি যদি দাদা হতো, দাদা হতো খুড়ো’-
ভাবতে ভাবতে কেষ্টদাসের হাল হয়েছে বুড়ো।
‘শেয়াল যদি ভেড়া হতো
দেয়াল যদি বেড়া হতো
সেলাই যদি ছেঁড়া হতো
রবিঠাকুর নেড়া হতো
ভালুক যদি কুকুর হতো, কুকুর হতো ছাগল’-
ভাবতে ভাবতে এমনি করে কেষ্টা হলো পাগল।
(ভাবতে ভাবতে / ফারুক নওয়াজ)

এবার ব্যতিক্রমী একটি উদাহরণ টানা যেতে পারে, যেখানে ৫ নম্বর বৈশিষ্ট্যে উল্লেখকৃত ‘ছড়ার ছন্দ শ্বাসাঘাত প্রধান প্রাকৃত বাংলা ছন্দ’ এর সাথে সুস্পষ্ট ভিন্নতা চোখে পড়ে।

অসময়ে মেহমান
ঘরে ঢুকে বসে যান
বোঝালাম ঝামেলার
যতগুলো দিক আছে
তিনি হেসে বললেন
ঠিক আছে ঠিক আছে।
রেশনের পচা চাল
টলটলে বাসি ডাল
থালাটাও ভাঙা-চোরা
বাটিটাও লিক আছে
খেতে বসে জানালেন
ঠিক আছে ঠিক আছে।
মেঘ দেখে মেহমান
চাইলেন ছাতাখান
দেখালাম ছাতাটার
শুধু কটা শিক আছে
তবু তিনি বললেন
ঠিক আছে ঠিক আছে।
(ঠিক আছে / সুকুমার বড়ুয়া)

স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে, রচনাটির ছন্দ শ্বাসাঘাত প্রধান প্রাকৃত বাংলা ছন্দ বলতে যা বুঝায় সেই স্বরবৃত্ত ছন্দ নয়। এটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত সামাজিক অসঙ্গতি আর মানবিক বোধকে নাড়া দিয়ে যাওয়া চমৎকার একটি ছড়া, যেখানে প্রস্তাবিত ছড়া বৈশিষ্ট্যের বাকি সবগুলো শর্তই দারুণভাবে পূরণ করেছে। কিন্তু কেবল প্রকৃত ছন্দ বা স্বরবৃত্তে রচিত হয়নি বলে কি তাকে আমরা ছড়া পদবাচ্য থেকে বাদ দিয়ে দেবো ?

গ্রহণক্ষমতা হারিয়ে ফেললে সাহিত্য বা সংস্কৃতি মরে যায়। তাছাড়া সৃজনশীলতার মধ্যে দিয়ে নির্দিষ্ট একটি ছন্দ পাল্টে দিলেই যে শিল্পকর্ম ব্যর্থ হয়ে যায় না, উপরের ছড়াটিই তার উৎকৃষ্ট নমুনা। এরকম আরো সফল নমুনা উপস্থাপন করা যেতে পারে। শ্রুতি ও স্মৃতি নির্ভর লোকায়ত কালে প্রকৃতি আদিষ্ট প্রাকৃত ছন্দই ছিলো তৎকালীন জনমানুষের একমাত্র স্বাভাবিক ছন্দ। জীবনযাত্রায় এই একটি ছন্দই দোলে ওঠেছে সবসময়। এর বাইরে তাদের জানা ছিলো না কিছু, বোঝারও ছিলো না কিছু। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিস্তৃতি আর অনুসন্ধিৎসার যুগে কোন শিল্পমাধ্যমকে একটিমাত্র প্রাকৃত ছন্দের শৃঙ্খলে বেঁধে রাখার কোন যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে প্রাকৃত ছন্দ লোকছড়ার আঙ্গিকের জন্য খুব স্বাভাবিক হলেও আধুনিক ছড়ার ক্ষেত্রে এটা অনিবার্য বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। আমরা বরং এই ৫ নম্বর বৈশিষ্ট্যকে পুনর্বিন্যস্ত করে নিতে পারি এভাবে- ‘ছড়ার ছন্দ আকর্ষণীয়’।

অতঃপর
সুকুমার রায়ের পর আধুনিক বাংলা ছড়ার এরকম চমৎকার উদাহরণ চাইলে আরো অনেক টানা যায়, যা আমাদের ছড়া-সাহিত্যের উজ্জ্বল উত্তরাধিকার। হিউমারপূর্ণ স্যাটায়ারধর্মী তীর্যক বক্তব্য আর সমকালীন চিহ্ন ধারণ করা এসব সফল ছড়া আমাদের সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। এগুলোকে যদি বৈশিষ্ট্য বিচারে আধুনিক বাংলা ছড়ার আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে স্বতন্ত্র আঙ্গিকের স্বাধীন শিল্পমাধ্যম হিসেবে আধুনিক বাংলা ছড়াকে ছড়া হয়ে ওঠার অনিবার্য শর্ত হিসেবে প্রস্তাবিত নয়টি বৈশিষ্ট্য আরোপ করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই তা আরো পর্যালোচনা ও যাচাই সাপেক্ষ। চূড়ান্ত বিচারে ছড়ার একটি সুনির্দিষ্ট শিল্পরূপ নির্ধারণ বা চিহ্নিত করা না গেলে ছড়ার নামে যাচ্ছেতাই অরাজকতা চলতে থাকবে। তাতে না-হবে সৃজনশীলতার শুদ্ধ চর্চা কিংবা আধুনিক ছড়ার কাঙ্ক্ষিত বিকাশ, না-হবে ছড়া নিয়ে অরাজকতার নিয়ন্ত্রণ। স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়। স্বেচ্ছাচারিতা অবাধ হলে সৃজনশীলতার সামর্থ আবদ্ধ হয়ে যায়, থেমে যায় সৃষ্টির চর্চা ও বিকাশ। সাহিত্যের প্রাচীনতম শিল্পমাধ্যম হিসেবে ছড়ার শক্তি, সামর্থ বা তীব্র প্রভাব নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয় কারো। একটি ছড়া শুধু ছড়া হয়ে ওঠলো কিনা, সেখানে আমাদের প্রশ্নমুখীনতা যতোটা স্থির ও লক্ষ্যবদ্ধ হবে, ছড়াও ততোটাই ছড়া হয়ে ওঠবে। এরপরও কি আমাদের প্রশ্নমুখীনতা তৈরি হবে না ? এখনো কি সন্দেহের কোন অবকাশ আছে ? ছড়া-সাহিত্যের মঙ্গল যদি কাম্যই হয়, তাহলে নিশ্চল হয়ে বসে থাকা আর কতোকাল !
প্রকাশ: ‘ছড়া পত্রিকা’ ১৫ সংখ্যা /ফেব্রুয়ারি ২০১১ / সম্পাদক: মাহবুবুল হাসান, চট্টগ্রাম।

No comments: