Tuesday, February 1, 2011

| বিয়ন্ড দ্য হেরিটেজ : ছবি ব্লগ ও একটি জন্মদিনের কাহিনী |

| বিয়ন্ড দ্য হেরিটেজ : ছবি ব্লগ ও একটি জন্মদিনের কাহিনী |
-রণদীপম বসু

(১)
খেয়াল ছিলো না যে আজ ৩১ জানুয়ারি। ঘুমের সময় কেটে রাতজাগা আঙডাঙ সেরে যথারীতি শেষ রাতে ঘুমোতে যাবার কল্যাণে সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠা। ওপেন হওয়া মস্তিষ্কের মেমোরি চিপ স্বাভাবিক রিলোড সম্পন্ন হবার আগেই একটা বাঁশির করুণ সুর যান্ত্রিক শব্দে বেজে ওঠলো। মোবাইলের রিং টোন। মনিটরে সেভ করা অক্ষরগুলো জ্বলছে নিভছে, আনোয়ার সাদাত শিমুল।
হ্যালো…
‘শুভ জন্মদিন!’
বেশ কিছুদিনের ব্যবধানে শিমুলের আরো সুন্দর হয়ে ওঠা মায়াবী ভরাট কণ্ঠে চমকে ওঠলাম ! তাই তো, আজ ৩১ জানুয়ারি !

ইতোমধ্যে মেমোরি রিলোড হয়ে গেছে। গত রাতেই ফেসবুক-বন্ধুদের আগাম অভিনন্দন বার্তা জমতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে তো আমার ভেসে যাবার অবস্থা ! তাছাড়া ফেসবুকের কী এক যান্ত্রিক থ্রেড গত ক’দিন ধরে বারবার জানান দিচ্ছিলো, ৩১ জানুয়ারি এসে গেলো, আমি এখনো বিশ্ব জুড়ে মাইকিং শুরু না করে বসে আছি কেন !? একটা ‘কজ’ খুললেই নাকি পৃথিবী ঝাঁপিয়ে পড়বে ! কেননা ওটা যে বিখ্যাত ৩১ জানুয়ারি ! কারণ ওইদিন আমি জন্মগ্রহণ করে পৃথিবীটাকে ধন্য করে দিয়েছি!

বাপরে ! আমি ভয় পেয়ে ওখানে আর ক্লিকই করি না ! তবে ওই ‘কজে’র একটা ধারণা খুবই ভালো লাগলো। আপনার জন্মদিনটিকে কেন্দ্র করে কোন একটা চমৎকার ভালো কাজ শুরু করে দেয়ার দারুণ একটা উদ্যোগ নিয়ে নেয়া। কিন্তু সেরকম কোন ভালো কাজের ধারণাই মাথায় এলো না। আসবে কী করে ! ভালো কাজ করে যারা অভ্যস্ত, সেই সব সৃজনশীলদের মাথায় অসংখ্য ভালো কাজের পরিকল্পনা হয়তো গিজগিজ করে। কিন্তু অগৃহস্থ-অকর্মা বনের খেয়ে নিজের মোষ দৌড়ানো আমি তো আর সেরকম নই ! অতএব কী আর করা ! এসব ভেবে ভেবে শেষরাতের ঘুমটাকে বানচাল করার কোন অর্থ নেই।

সকালে ঘুম ভেঙেই শিমুলের ওই ফোন- ‘শুভ জন্মদিন’।
যথারীতি ধন্যবাদ জানালাম তাঁকে। দিনের ব্যক্তিগত স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়নি বলে নিজের কণ্ঠজড়তা টের পেলাম উচ্চারিত শব্দে। তবে শিমুলের তারুণ্য-উদ্দীপ্ত কণ্ঠ ও বাচন ঝরঝরে-
‘এই মুহূর্তে আপনার অনুভূতি কেমন ?’
এমন বিভ্রম জড়ানো প্রশ্নে স্বভাবতই একটু দোলাচলে পড়ে গেলাম। কই, আলাদা কোন অনুভব কি টের পাচ্ছি ? তা বুঝতে হলে হয়তো অনুভবের গভীরে ডুব দিয়ে গহন-নদীর স্রোত ও উষ্ণতা ছুঁয়ে দেখতে হয়। সেটুকু উপলব্ধি করার সময় ও সুযোগ কি আমরা পাই ! না কি নিজেকে দিচ্ছি এটুকু সময় ! নাগরিক ব্যস্ততা  আর অব্যস্ততায় আমাদের সে সময় কই ! উপরতলের স্বচ্ছ জলের আপাত স্থিরতায় কি নদীর অন্তস্থ স্রোতের উচ্ছ্বাস প্রতিফলিত হয় ? সে ডুবুরিও তো আমি নই। আর যে মুহূর্তে এপাশের মৃদু নিঃশ্বাসও ওপাশে অনুরণিত হচ্ছে, সে মুহুর্তে মুঠোফোন কানে চেপে ডুব দেয়ার সুযোগই বা কোথায় ! অতএব সাদা চোখে যা দেখছি বুঝছি, তাকেই সত্যি ভাবতে আপত্তি কোথায় ! তাই বাচনজড়তা নিয়ে সেভাবেই শিমুলকে উত্তর করলাম-
কই, আলাদা কিছু তো মনে হচ্ছে না !
প্রত্যুত্তরে আমাকে লা-জওয়াব করে শিমুল যা বললো, আমাকে এক ঝটকায় বুঝি সেই নদীতেই ছুঁড়ে দিলো-
‘বয়স যার সাতাশে আটকে গেছে, তার কি আর ভিন্ন অনুভূতি হয় !’

প্রতিদিনের জীবন যন্ত্রণা থেকে ছেঁকে তোলা গল্প-চরিত্রের দক্ষ বিশ্লেষক ও তুখোড় গল্পকার আনোয়ার সাদাত শিমুলের এমন তাৎক্ষণিক চৌকস উত্তরে লা-জওয়াব আমি আমতা আমতা করি। ঘুমের চিহ্নমাখা শরীরটাকে তুলে টেনে নিয়ে যাই ড্রেসিং আয়নাটার সামনে। চালশে পড়া চোখের আলোয় আতিপাতি খুঁজতে থাকি- কোথায় কোথায় আটকে আছে ফেলে আসা সেই দুরন্ত সাতাশ ! আমি খুঁজতেই থাকি…।

(২)
ব্যক্তিগতভাবে কখনোই জন্মদিন পালন করি না আমি। তবু অফিসের ব্যস্ততার মধ্যেও গোটা দিন মোবাইল ফোন আর ম্যাসেজে জন্মদিনের উইশ পেয়ে ভালোই লাগছিলো। একটু অন্যরকম ভালো লাগা। অন্য কোন দিনের থেকে এটাই হয়তো এ দিনটির বিশেষ পার্থক্য। ব্যক্তিভেদে কোন ঘটনার প্রতিক্রিয়া বা উপলব্ধি ভিন্ন ভিন্ন হয় বলেই হয়তো এর উদ্দীপনায়ও ভিন্নতা থাকে। সে বিবেচনায় নিজস্ব ব্যস্ততার অমূল্য সময় থেকে একটুকু সময় কেটে আমাকে যারা দূরে থেকে কাছে থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে উইশ জানালেন, সবার ভালোবাসাকে একসাথে সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানানোই মূলত এ লেখাটার ব্যক্তিগত পটভূমি।

এ সুযোগে সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানাই। আর এ দিনটিকে ব্যক্তিগতভাবে আমিও উইশ করছি এ জন্যে যে, প্রকৃতিগতভাবে হলেও এই দিনটা একদিন আমাকে ধারণ করেছিলো বলেই বন্ধুভাগ্যে আজ এতোটা সমৃদ্ধ ও আপ্লুত হতে পেরেছি আমি। আজ এই জন্মদিনে আমার সকল বন্ধুকেও আমি উইশ করছি। তবে একটু অন্যভাবে। কাচা হাতে তোলা ‘বিয়ন্ড দ্য হেরিটেজ’ শীর্ষক কিছু ছবি শেয়ার করে। কারণ আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ধারণ করা এসব নিদর্শনের ছোঁয়ার দূরত্বে যেতে পারার সুযোগ হয়েছে আমার এইসব বন্ধুদের সৌজন্যেই। বিশেষ করে সচলায়তনের এক ঝাঁক তুখোড় সচল ও দক্ষ উইকিপিডিয়ান বন্ধুরা। আরো আছে লিনাক্স, উবুন্টুসহ বিভিন্ন ফোরাম, ব্লগ, ফেসবুকসহ অন্যান্য প্লাটফরম, লেখক, পাঠক, সহকর্মী বন্ধুরা। সবার কাছেই আমার অপরিশোধযোগ্য দেনা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ধরনের বন্ধু-ঋণে এরা আমাকে কোমল বন্ধনে জড়িয়ে রেখেছেন। ভাবতেই বুকের ভেতরে কোথায় যেন একটা চিনেচিনে ভালোলাগা তার উষ্ণতা ছড়িয়ে বয়ে যায়, খুব নীরবে…। যার প্রতিদান দেয়ার সামর্থ আমার নেই।

(৩)
‘বিয়ন্ড দ্য হেরিটেজ’
ছবি-০১: আহসান মঞ্জিল, ঢাকা।
 
.
ছবি-০২: কেল্লা লালবাগ, ঢাকা।
 
.
ছবি-০৩: সমাধিসৌধ, কেল্লা লালবাগ, ঢাকা।
 
.
ছবি-০৪: দুর্গ দেয়াল, কেল্লা লালবাগ, ঢাকা
 
.
ছবি-০৫: হাজী মুহাম্মদ মৃধা মসজিদ, লালবাগ, ঢাকা।
 
.
ছবি-০৬: শায়েস্তা খান মসজিদ, মিটফোর্ড, ঢাকা।
 
.
ছবি-০৭: রূপলাল ভবন, শ্যামবাজার, ফরাশগঞ্জ, ঢাকা।
 
.
ছবি-০৮: জনসন হল, লালকুঠি, ফরাশগঞ্জ, ঢাকা।
 
.
ছবি-০৯: নর্থব্রুক হল, লালকুঠি, ফরাশগঞ্জ, ঢাকা।
 
.
ছবি-১০: ছোট কাটরা, ঢাকা।
 
.
ছবি-১১: বড় কাটরা, ঢাকা।
 
.
ছবি-১২: আরমেনিয়ান চার্চ, আরমানিটোলা, ঢাকা।
 
.
ছবি-১৩: হোসেনি দালান, ঢাকা।
 
.
ছবি-১৪: হাজী শাহবাজ মসজিদ, দোয়েল চত্বর, ঢাকা।
 
.
ছবি-১৫: খাজা শাহবাজ দরগাহ শরীফ, ঢাকা।
 
.
ছবি-১৬: রোজ গার্ডেন, কবি হুমায়ুন কবিরের বাড়ি, আরকে মিশন রোড, ঢাকা।
 
.
ছবি-১৭: মুসা খান মসজিদ, শহীদুল্লাহ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
 
.
ছবি-১৮: নিমতলি গেট, এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা।
.
ছবি-১৯: তারা মসজিদ, আরমানিটোলা, ঢাকা।

এরকম আরো যেসব ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ছবি ধারণ করা হয়েছে, পরবর্তীতে তা সিরিজ আকারে দেয়া যেতে পারে। তবে তথ্যবহুল করা গেলে তা আরো আকর্ষণীয় ও কার্যকরি হবে বলে মনে হয়।

No comments: