| আলগা প্যাঁচাল-০৪ | চিত্তবাবু জানেন…|
-রণদীপম বসু
…
ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে জগন্নাথ হলে এলাম বাদাইম্যা স্বভাবের তাড়নায়। শারদীয় উৎসবের আগের সপ্তার ঘটনা। বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়েছিলাম যে শিববাড়ি নামে পরিচিত হেরিটেজ মর্যাদার পুরনো স্থাপনাটা এখানে কোথাও ঘাপটি মেরে আছে ! কিন্তু সূত্রটা যে আসলে ততটা বিশ্বস্ত নয়, অচিরেই বুঝা গেলো এদিকওদিক উঁকিঝুকি মেরে কোথাও না পেয়ে একজন ছাত্রকে জিজ্ঞেস করতেই। ছাত্রটি তর্জনি নির্দেশে শিববাড়ির অবস্থান যেদিকে দেখালো সেদিকে বেরোনোর গেট ছাড়া আর কিছুই দেখলাম না ! তর্জনি আকিয়ে বাঁকিয়ে সে বললো এদিকে গিয়ে ওদিকে যেয়ে সেদিকে যাবেন। কি আর করা ! তথৈবচঃ !
.
গেট
পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্থানীয় গোছের একজন পথিককে শিববাড়ির ঠিকানা জানেন
কিনা জিজ্ঞেস করতেই তিনি উল্টো প্রশ্ন করলেন- শিববাড়ি কোথায় যাবেন ?
বললাম, শিববাড়িই।
কার কাছে ?
কাঁধে ব্যাগ, হাতে ক্যামেরা, দুপুরের কটকটে রোদে উস্কুখুস্কু দাঁড়িগোফে ঘেমেনেয়ে একাকার আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই উত্তরে যোগ করলাম- তা তো জানি না !
এমন উত্তরে এক ঝলক আমার দিকে ফের তাকিয়ে কী বুঝলো কে জানে, বললো- আসেন আমার সাথে।
হয়তো ভেবে থাকতে পারে, নিশ্চয়ই সিস্টেমে গণ্ডগোল আছে, একা ছেড়ে দেয়া যায় না !
বললাম, শিববাড়িই।
কার কাছে ?
কাঁধে ব্যাগ, হাতে ক্যামেরা, দুপুরের কটকটে রোদে উস্কুখুস্কু দাঁড়িগোফে ঘেমেনেয়ে একাকার আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই উত্তরে যোগ করলাম- তা তো জানি না !
এমন উত্তরে এক ঝলক আমার দিকে ফের তাকিয়ে কী বুঝলো কে জানে, বললো- আসেন আমার সাথে।
হয়তো ভেবে থাকতে পারে, নিশ্চয়ই সিস্টেমে গণ্ডগোল আছে, একা ছেড়ে দেয়া যায় না !
.
.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার চওড়া ফুটপাথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে সামনে ফুটপাথে শুয়ে থাকা আমার মতোই দাঁড়িগোফে একাকার অপাঙক্তেয় মনুষ্য জীবটির দিকে ক্যামেরা তাক করে ক্লিক করতেই আবার জিজ্ঞেস করলো- আপনি কি সাংবাদিক ?
নিগেটিভ ইঙ্গিতে দু’পাশে মাথা নাড়তেই নিশ্চিত হয়ে গেলো গণ্ডগোল অবশ্যই আছে। নইলে হরহামেশার এমন সাধারণ দৃশ্যের আবার ছবি তোলে নাকি কেউ ! দেখে তো ভিনগ্রহের বলেও মনে হয় না !
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার চওড়া ফুটপাথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে সামনে ফুটপাথে শুয়ে থাকা আমার মতোই দাঁড়িগোফে একাকার অপাঙক্তেয় মনুষ্য জীবটির দিকে ক্যামেরা তাক করে ক্লিক করতেই আবার জিজ্ঞেস করলো- আপনি কি সাংবাদিক ?
নিগেটিভ ইঙ্গিতে দু’পাশে মাথা নাড়তেই নিশ্চিত হয়ে গেলো গণ্ডগোল অবশ্যই আছে। নইলে হরহামেশার এমন সাধারণ দৃশ্যের আবার ছবি তোলে নাকি কেউ ! দেখে তো ভিনগ্রহের বলেও মনে হয় না !
.
মোড়
ঘুরে আরেকটু আগাতেই স্বাভাবিক আবহের সাথে ব্যতিক্রমভাবে কটকটে লাল বা কড়া
খয়েরি রঙের দেয়াল আর উঁচু চূড়াসহ গোটা মন্দির স্থাপনাটাকে আলাদাভাবে আর
চিনিয়ে দেয়ার দরকার হয় না। নিজেই থেকেই বললাম- এটাই শিববাড়ি ?
হাঁ।
আচ্ছা, এই শিববাড়ির ইতিহাসটা জানার কোন উপায় আছে ?
ভেতরে ঢুকলেই ওখানে লোক আছে, তারা বলতে পারবে। আমি ওইদিকে থাকি, বলেই লোকটি চলে গেলো।
হাঁ।
আচ্ছা, এই শিববাড়ির ইতিহাসটা জানার কোন উপায় আছে ?
ভেতরে ঢুকলেই ওখানে লোক আছে, তারা বলতে পারবে। আমি ওইদিকে থাকি, বলেই লোকটি চলে গেলো।
.
.
দেয়ালের গায়ে সিমেন্ট খোদাই লেখাটা সহজেই চোখে পড়ে- ‘শ্রী শ্রী বুড়াশিব ধাম’। জুতা খোলে খালি পায়ের নির্দেশনা মেনে ভেতরে ঢুকলাম। বেশ কয়েকটা ঝকঝকে তকতকে কক্ষ, এদিক সেদিক দুয়েকজনকে মোজাইক বাধানো চকচকে মেঝেতে বিশ্রামের শিথিল মেজাজে বসে থাকতে দেখা গেলো। অপরিসর সরু পেসেজ দিয়ে এগিয়ে প্রান্তবর্তি কক্ষের দিকে এগিয়ে গেলাম। এলিয়ে বসা এক মধ্যবয়েসি ভদ্রলোক একটি তরুণ যুগলকে উপদেশ দানে ব্যস্ত ছিলেন হয়তো। আমাকে দেখেও নির্বিকার তাঁকে নিজের পরিচয় দিয়ে শিববাড়ির ইতিহাস জানার আগ্রহ দেখাতেই তিনি নড়েচড়ে বসে আমার ভিজিটিং কার্ডটা উল্টেপাল্টে খুটিয়ে দেখতে লাগলেন। হয়তো কৌতুহল নিবৃত্ত হয়নি। তাই একটা নিস্পৃহ ভঙ্গিতে বললেন- ‘আগে অনেক জায়গা ছিলো, এখন এর অনেকটাই দখল হয়ে গেছে। আপনি ওইদিকে যান, চিত্তবাবু আছেন, তাকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি বলতে পারবেন।’ বলেই আমি যেদিক থেকে এসেছিলাম তিনি সেই দিকটাই দেখিয়ে দিলেন।
দেয়ালের গায়ে সিমেন্ট খোদাই লেখাটা সহজেই চোখে পড়ে- ‘শ্রী শ্রী বুড়াশিব ধাম’। জুতা খোলে খালি পায়ের নির্দেশনা মেনে ভেতরে ঢুকলাম। বেশ কয়েকটা ঝকঝকে তকতকে কক্ষ, এদিক সেদিক দুয়েকজনকে মোজাইক বাধানো চকচকে মেঝেতে বিশ্রামের শিথিল মেজাজে বসে থাকতে দেখা গেলো। অপরিসর সরু পেসেজ দিয়ে এগিয়ে প্রান্তবর্তি কক্ষের দিকে এগিয়ে গেলাম। এলিয়ে বসা এক মধ্যবয়েসি ভদ্রলোক একটি তরুণ যুগলকে উপদেশ দানে ব্যস্ত ছিলেন হয়তো। আমাকে দেখেও নির্বিকার তাঁকে নিজের পরিচয় দিয়ে শিববাড়ির ইতিহাস জানার আগ্রহ দেখাতেই তিনি নড়েচড়ে বসে আমার ভিজিটিং কার্ডটা উল্টেপাল্টে খুটিয়ে দেখতে লাগলেন। হয়তো কৌতুহল নিবৃত্ত হয়নি। তাই একটা নিস্পৃহ ভঙ্গিতে বললেন- ‘আগে অনেক জায়গা ছিলো, এখন এর অনেকটাই দখল হয়ে গেছে। আপনি ওইদিকে যান, চিত্তবাবু আছেন, তাকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি বলতে পারবেন।’ বলেই আমি যেদিক থেকে এসেছিলাম তিনি সেই দিকটাই দেখিয়ে দিলেন।
.
.
তাঁকে
দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন না করে আমি কক্ষ থেকে বেরিয়ে ঠিক উল্টো কাজটি করলাম।
মন্দিরের ভেতর এলাকার খোলা ফাঁকা স্বল্পপরিসর লনটাতে গিয়ে যতটুকু সম্ভব
টপাটপ মন্দিরের কিছু ছবি তুলে নিলাম। কিন্তু লনটা এতো ছোট যে কোনভাবেই গোটা
মন্দিরের ছবি এক শটে আঁটানো সম্ভব নয়। খণ্ড খণ্ড ছবি নিয়ে এরপর চিত্তবাবুর
খোঁজে মন্দিরে প্রবেশের গেটের দিকে ফিরতে ফিরতে মাঝখানের বড় কক্ষটিতে
স্থাপিত সাধু-সন্তের পোর্ট্রেটের ছবিও নিলাম বাইরে থেকে। গেটের কাছে ফিরেই
মেঝেতে বসা দু’জনের মধ্যে সম্ভ্রান্ত গোছের ভদ্রলোককেই চিত্তবাবু ধারণা করে
অত্যন্ত নিষ্টার সাথে নমস্কার জানিয়ে বললাম- আপনি কি চিত্ত বাবু ?
পুরোহিত টাইপের দ্বিতীয় ব্যক্তিটি জবাব দিলো- না, আপনি কাকে চান ?
আমি তো চিত্তবাবুকেই চাইছি, তিনি নাকি শিববাড়ির ইতিহাস জানেন !
তিনি এখন নেই। আপনার পরিচয় ?
পুনরায় নতুন করে পরিচয়পর্ব সেরে বললাম- আচ্ছা, এই শিববাড়ির ইতিহাস জানার মতো বুকলেট বা পুস্তিকা জাতীয় কিছু কি আছে ?
আছে, তবে তাও ওনার কাছেই। তিনি সন্ধ্যায় আসবেন, আপনি সন্ধ্যায় আসেন।
পুরোহিত টাইপের দ্বিতীয় ব্যক্তিটি জবাব দিলো- না, আপনি কাকে চান ?
আমি তো চিত্তবাবুকেই চাইছি, তিনি নাকি শিববাড়ির ইতিহাস জানেন !
তিনি এখন নেই। আপনার পরিচয় ?
পুনরায় নতুন করে পরিচয়পর্ব সেরে বললাম- আচ্ছা, এই শিববাড়ির ইতিহাস জানার মতো বুকলেট বা পুস্তিকা জাতীয় কিছু কি আছে ?
আছে, তবে তাও ওনার কাছেই। তিনি সন্ধ্যায় আসবেন, আপনি সন্ধ্যায় আসেন।
.
.
তখন
দুপুর গড়াচ্ছে কেবল, সন্ধ্যা মানে তো ছ’সাত ঘণ্টার ব্যাপার ! এদিকে হাঁটার
ক্লান্তিতে পেট চোঁ চোঁ করছে। তারপরও কেন যেন মনে হলো, সামনে থাকলেও
যেহেতু চিত্তবাবুকে চিনি না, তাই সন্ধ্যায় আসলেও চিত্তবাবুর আগমন নিশ্চিত
পরের দিনে পিছিয়ে যাবে। তাই বললাম, আপনারা কি এ ব্যাপারে কিছু ধারণা দিতে
পারবেন ?
নির্বিকার ভদ্রলোকটি কিছু তো বললেনই না, পুরোহিত লোকটিও মনে হয় আমাকে খুব একটা পাত্তা না দিয়েই পুনরাবৃত্তি করলেন- ‘আপনি সন্ধ্যায় আসেন !’
নির্বিকার ভদ্রলোকটি কিছু তো বললেনই না, পুরোহিত লোকটিও মনে হয় আমাকে খুব একটা পাত্তা না দিয়েই পুনরাবৃত্তি করলেন- ‘আপনি সন্ধ্যায় আসেন !’
.
বুঝে গেলাম, আর কেউ না জানলেও ক্ষতি নেই, কেননা শিববাড়ির ইতিহাস চিত্তবাবু জানেন।
বুঝে গেলাম, আর কেউ না জানলেও ক্ষতি নেই, কেননা শিববাড়ির ইতিহাস চিত্তবাবু জানেন।
1 comment:
আমার পরিবার তিন পুরুষ ধরে শিববাড়ীর সঙ্গে জড়িত। আপনি জানতে চাওয়ার পরেও কেউ আপনাকে এর ইতিহাস জানালো না কেন বুঝতে পারলাম না। এটা আসলেই হতাশাজনক! যাই হোক; আপনি চাইলে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারি। আমার ফোন নাম্বার- ০১৭৭৬৪৮১৬০৯। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।
Post a Comment