Thursday, August 9, 2012

| বৈশেষিক দর্শন…০৬ : সামান্য |

 .
| বৈশেষিক দর্শন…০৬ : সামান্য |
রণদীপম বসু

২.৪ : সামান্য (Universal) 
.
জগতের ব্যাখ্যার জন্য বৈশেষিক স্বীকৃত সপ্তপদার্থের মধ্যে অন্যতম পদার্থ হলো সামান্য। সামান্য শব্দটির সাধারণ অর্থ হলো একাধিক বস্তুর সমান ধর্ম। বহু বস্তুর মধ্যে যে ধর্ম থাকে তাই সমান ধর্ম। যেমন মনুষ্যত্ব হলো সকল মানুষের সমান ধর্ম, অথবা গোত্ব হলো সকল গরুর সমান ধর্ম।


.
ন্যায়-বৈশেষিক মতে সামান্য ব্যক্তি থেকে ভিন্ন নিত্য বস্তুস্বরূপ। ব্যক্তি সামান্যের আশ্রয় বা অধিষ্ঠান হলেও সামান্য ব্যক্তির অতিরিক্ত নিত্য পদার্থ। এই পদার্থ একই জাতীয় একাধিক বস্তুর মধ্যে বর্তমান সাধারণ ধর্ম। সাধারণ ধর্মের জন্যই একাধিক বস্তু একই জাতীয় বলে প্রতিভাত হয় (সমানানং ভাবঃ)। তাই সামান্যকে অনুগত প্রতীতির হেতু বলা হয়। ‘অনুগত প্রতীতি’ অর্থ বহু পদার্থ বিষয়ে একই রকমের বুদ্ধি বা জ্ঞান। যেমন রাম, শ্যাম, যদুর মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এদের প্রত্যেককে আমরা ‘মানুষ’ শব্দের দ্বারা বুঝিয়ে থাকি। একে বলা হয় অনুগত ব্যবহার। এই অনুগত ব্যবহার সম্ভব হয় অনুগত প্রতীতির জন্য। সুতরাং অনুগত প্রতীতিই সামান্যের অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
 .
বৈশেষিকরা মনে করেন, সামান্য বলে কোন পদার্থ স্বীকার করা না হলে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার ব্যাখ্যা করা যায় না। অনুগতব্যবহার একটি অনুগতপ্রতীতি-নির্ভর। অনুগতপ্রতীতি ব্যতীত অনুগতব্যবহার যথার্থ হতে পারে না। আবার অনুগত বিষয় ভিন্ন অনুগতপ্রতীতিও সম্ভব নয়। তাই অনুগতব্যবহারের হেতুরূপে অনুগতপ্রতীতি এবং অনুগতপ্রতীতির হেতুরূপে অনুগত বিষয়কে আমাদের স্বীকার করতে হয়। অনুগত বিষয়রূপে যে অনুগতধর্ম স্বীকৃত, সেই ধর্মই হলো সামান্য পদার্থ। মানুষের ক্ষেত্রে এই অনুগতধর্মের নাম ‘মনুষ্যত্ব’, গরুর ক্ষেত্রে ‘গোত্ব’ এবং অশ্বের ক্ষেত্রে ‘অশ্বত্ব’ ইত্যাদি।
 .
মহর্ষি কণাদের বৈশেষিকসূত্রে ও প্রশস্তপাদভাষ্যে সামান্যের আলোচনা পরিদৃষ্ট হলেও সামান্যের যথার্থ লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না। বরং পরবর্তী আচার্যরাই এর যথার্থ লক্ষণ নির্দেশ করেছেন। বিশ্বনাথ ন্যায়-পঞ্চানন তাঁর মুক্তাবলীতে সামান্যের লক্ষণ নির্দেশ করতে গিয়ে বলেছেন-

‘নিত্যত্বে সতি অনেকসমবেতত্বম্’। (মুক্তাবলী)।
অর্থাৎ : যে ধর্ম নিত্য এবং অনেকের মধ্যে সমবায় সম্বন্ধে বর্তমান, তাই সামান্য।
 .
আবার অন্নংভট্ট তর্কসংগ্রহে সামান্যের লক্ষণ দিয়েছেন-

‘নিত্যম্-একম-অনেকানুগতং সামান্যম্’। (তর্কসংগ্রহ)।
অর্থাৎ : সামান্য হলো বস্তু বা ব্যক্তির অনুগত ধর্ম যা নিত্য, এক ও অনেকে অনুগত বা সমবেত।
 .
এই লক্ষণ বিশ্লেষণ করলে সামান্যের তিনটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়- নিত্যত্ব, একত্ব ও অনেকবৃত্তিত্ব বা অনেকসমবেতত্ব।
প্রথমত, সামান্য পদার্থটি নিত্য। অর্থাৎ সামান্যের উৎপত্তিও নেই, বিনাশও নেই। বিশেষ বিশেষ মানুষের উৎপত্তি ও বিনাশ আছে, কিন্তু মনুষ্যত্বের উৎপত্তি ও বিনাশ নেই। কোন একটি মানুষের উৎপত্তির সঙ্গে সঙ্গে সেই মানুষটির মনুষ্যত্বের উৎপত্তি হয় না। কারণ ঐ মানুষটির উৎপত্তির পূর্বে যে মানুষ উৎপন্ন হয়েছে, তাতেও মনুষ্যত্ব আছে। আবার ন্যায়-বৈশেষিকরা বলেন, যদি সকল মানুষ মারা যায় তাহলেও মনুষ্যত্ব বিনষ্ট হবে না। ব্যক্তির বিনাশে সামান্য কালাশ্রিত থাকে। বৈশেষিকেরা বলেন, সামান্যের উৎপত্তি স্বীকার করলে প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি বা বস্তুতে ভিন্ন ভিন্ন সামান্য স্বীকার করতে হয়। এরূপ গৌরব কল্পনা অপেক্ষা বিভিন্ন ব্যক্তিতে একটি নিত্য সামান্য স্বীকার করাই শ্রেয়। এক ও নিত্য সামান্য একই শ্রেণীর সকল ব্যক্তিতে আশ্রিত থাকে। ব্যক্তির মাধ্যমেই আমরা সামান্যকে জানতে পারি। কোন একটি ব্যক্তির বিনাশে ঐ ব্যক্তিতে সামান্য আশ্রিত হতে না পারায় ঐ ব্যক্তিতে আমরা আর ঐ সামান্যকে প্রত্যক্ষ করতে পারি না, কিন্তু অন্য কোন অস্তিত্বশীল ব্যক্তিতে সহজেই ঐ সামান্যকে প্রত্যক্ষ করা যায়।
 .
আবার ন্যায়-বৈশেষিক মতে পরমাণু, বিশেষ, আকাশ, সমবায় প্রভৃতি নিত্য হওয়ায় পরমাণু প্রভৃতিতে নিত্যত্ব থাকে। কিন্তু এগুলি এক-সমবেত, অনেক-সমবেত নয়। সামান্যের অন্যতম লক্ষণ হলো ‘অনেকসমবেতত্ব’। ফলে সামান্যের লক্ষণে অতিব্যাপ্তি ঘটে না।
 .
দ্বিতীয়ত, সামান্য অনেকানুগত। অর্থাৎ সামান্য একই সময়ে অনেক পদার্থে বিদ্যমান। যেমন একই মনুষ্যত্ব একই সময়ে সকল মানুষের মধ্যে আছে।
 .
তৃতীয়ত, সামান্য অনেক পদার্থে এক বিশেষ সম্বন্ধে থাকে। সেটি হলো সমবায়-সম্বন্ধ। এই সমবায় সম্বন্ধ হলো এমন দুটি পদার্থের সম্বন্ধ, যারা তাদের উভয়ের বিদ্যমান অবস্থায় পরস্পরকে ছেড়ে থাকতে পারে না। যেমন মনুষ্যত্ব সমবায় সম্বন্ধে বিভিন্ন মানুষে থাকে, ঘটত্ব সমবায় সম্বন্ধে সকল ঘটে থাকে।
.
কিন্তু যদি ‘অনেকসমবেতত্ব’ সামান্যের একমাত্র লক্ষণ হয়, তাহলে যদিও পরমাণু, আকাশ ইত্যাদি নিত্য দ্রব্যের লক্ষণে অতিব্যাপ্তি হয় না, কিন্তু সংযোগ প্রভৃতি সম্পর্কে অতিব্যাপ্তি হয়। কারণ সংযোগ হলো একপ্রকার গুণ। গুণ কোন না কোন দ্রব্যে সমবায় সম্বন্ধে থাকে। আবার সংযোগ সর্বদাই কোন দুটি পদার্থের মধ্যে হয়। একাধিক পদার্থে সমবায় সম্বন্ধে থাকায় সংযোগও অনেকসমবেত। সুতরাং সংযোগে ‘অনেকসমবেতত্ব’ থাকলেও সংযোগ নিত্য সম্পর্ক নয়। সংযোগে নিত্যত্ব নেই। কিন্তু সামান্য নিত্যত্ব লক্ষণযুক্ত।
অতএব, যে পদার্থ নিজে নিত্য হয়ে অনেক অর্থাৎ একাধিক পদার্থে সমবায় সম্বন্ধে থাকে তাই সামান্য।
 .
সামান্যের প্রকারভেদ :
ন্যায়-বৈশেষিক মতে ব্যাপকতা অনুসারে সামান্য পর ও অপর ভেদে দুইপ্রকার। প্রশস্তপাদভাষ্য তথা প্রাচীন শাস্ত্রসমূহে সামান্যের এই দুই বিভাগের উপরই অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে বিশ্বনাথ ন্যায়-পঞ্চানন ও ন্যায়-বৈশেষিক সম্প্রদায়ের কোন কোন দার্শনিক পরাপর নামক তৃতীয় এক প্রকার সামান্য স্বীকার করেছেন।
.
যে সামান্য সমস্ত জাতির ব্যাপক, যে জাতিকে অন্য কোন জাতির অন্তর্ভুক্ত করা যায় না, তাকে পর-সামান্য বলা হয়। যেমন সত্তা। সত্তা সামান্যের ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি। সত্তা সামান্য দ্রব্য, গুণ ও কর্মে থাকে। আর যে জাতি সর্বাপেক্ষা কম ব্যাপক বা কেবল ব্যাপ্য, যে জাতির অন্তর্ভুক্ত আর জাতি থাকে না, তাকে অপর-সামান্য বলা হয়। যেমন ঘটত্ব। অন্যদিকে যে সামান্য কোন এক সামান্যের তুলনায় ব্যাপ্য, আবার কোন এক সামান্যের তুলনায় ব্যাপক, তাকে পরাপর-সামান্য বলা হয়। অর্থাৎ পর ও অপর সামান্যের মধ্যবর্তী জাতির নাম পরাপর-সামান্য। যেমন- দ্রব্যত্ব। মোটকথা, যা ব্যাপক-সামান্য তা পর এবং যা ব্যাপ্য-সামান্য তা অপর। এখানে দ্রব্যত্ব জাতি সত্তা জাতির তুলনায় ব্যাপ্যা বা কম জায়গায় থাকে এবং ঘটত্ব জাতির তুলনায় ব্যাপক বা বেশি জায়গায় থাকে।
 .
এখানে উল্লেখ্য, সামান্যের পরত্বাপরত্ব আপেক্ষিক। একটি সামান্য অপর একটি সামান্যের পরিপ্রেক্ষিতেই পর বা অপর হয়। ঘটত্ব ও পটত্ব উভয়ই সামান্য হলেও উভয়ের মধ্যে পরাপরভাব থাকে না, কারণ এই দুইয়ের মধ্যে সামানাধিকরণ্য নেই। কেননা ঘট বা পট কেউ কারো অন্তর্ভুক্ত নয়। কিন্তু দুটি সামান্য যখন সমানাধিকরণ হয়, তখনই তাদের পরাপরভাব থাকে। দ্রব্যত্ব ও ঘটত্বের সামানাধিকরণ্য আছে বলেই দ্রব্যত্বের তুলনায় ঘটত্ব অপর। যেমন ঘট একটি দ্রব্য, অর্থাৎ ঘটত্ব জাতি দ্রব্যত্ব জাতির অন্তর্ভুক্ত। ফলে এক্ষেত্রে দ্রব্যত্ব পর-সামান্য এবং তার সাপেক্ষে ঘটত্ব অপর-সামান্য।
 .
ন্যায়-বৈশেষিক মতে সামান্যকে আবার জাতি ও উপাধি ভেদে দুই প্রকার বলা হয়েছে। যে অনুগত ধর্মে জাতির লক্ষণ প্রযোজ্য হয়, তাকে জাতি বলা হয়। আর যে অনুগত ধর্মে জাতির লক্ষণ সমন্বয় হয় না, তা হলো উপাধি। জাতি হলো সেই অনুগত ধর্ম যা নিত্য ও অনেকে সমবেত। উপাধি হলো বস্তু বা ব্যক্তির আগন্তুক ধর্ম। অনাগন্তুক বা স্বাভাবিক ধর্ম জাতি। গোত্ব বা মনুষ্যত্ব হলো জাতি, কিন্তু পাচকত্ব উপাধি। গো বা মানুষ ব্যক্তি গোত্ব বা মনুষ্যত্ব ত্যাগ করে কখনও থাকতে পারে না। কিন্তু দেবদত্ত (ব্যক্তি) পাচকত্ব ধর্মকে ত্যাগ করে থাকতে পারে। জাতি ও ব্যক্তির সম্বন্ধ স্বাভাবিক। কিন্তু দেবদত্ত প্রভৃতিতে পাচকত্ব ধর্ম স্বাভাবিক নয়। তাই পাচকত্ব ধর্ম জাতি নয়, উপাধি।
 .
জাতিবাধক :
ন্যায়-বৈশেষিকরা বলেন, একটি সামান্য জাতি হতে পারে যদি জাতিবাধক না থাকে। অপরপক্ষে জাতিবাধক থাকলে সামান্যটি জাতি না হয়ে হয় উপাধি। জাতিবাধক কাকে বলে এ বিষয়ে ন্যায়-বৈশেষিক দর্শনে কোন সংজ্ঞা পাওয়া যায় না। তবে আচার্য উদয়ন তাঁর কিরণাবলী গ্রন্থে ছয় প্রকার জাতিবাধকের উল্লেখ করেছেন-

‘ব্যক্তেরভেদস্তুল্যত্বং সঙ্করোহথানবস্থিতিঃ।
রূপহানিরসম্বন্ধো জাতিবাধকসংগ্রহঃ।। (কিরণাবলী)।
অর্থাৎ : ব্যক্তির অভেদ, তুল্যত্ব, সঙ্কর, অনবস্থা, রূপহানি, অসম্বন্ধ- এই ছটি জাতির বাধক।
 .
(১) ব্যক্তির অভেদ : ‘ব্যক্তির অভেদ’ কথার অর্থ হলো আশ্রয়ের ঐক্য বা একাশ্রয়ত্ব বা অভিন্ন ব্যক্তিমাত্রবৃত্তি। অর্থাৎ যদি কোন জাতি এমন হয় যে তার আশ্রয় ব্যক্তির সংখ্যা এক, তাহলে সেই ধর্ম জাতি হতে পারে না। যেমন- আকাশত্ব, কালত্ব ইত্যাদি জাতি নয়। কারণ আকাশত্বের আশ্রয় আকাশ বা কালত্বের আশ্রয় কাল এক, অনেক নয়। সামান্যের লক্ষণ প্রসঙ্গে বলা হয় যে সামান্য হলো অনেকসমবেত। সুতরাং যে ধর্মের আশ্রয় ব্যক্তি একাধিক নয়, তা জাতি হতে পারে না।
 .
(২) তুল্যত্ব : ‘তুল্যত্ব’ শব্দের অর্থ হলো তুল্য আশ্রয়ত্ব বা অন্যূন-অনতিরিক্ত বৃত্তিত্ব। দুটি পদার্থ যদি পরস্পর পরস্পরের অন্যূন ও অনতিরিক্ত হয় তাহলে সেই পদার্থদ্বয়কে বলা হয় তুল্য পদার্থ। যখন দুটি ধর্মের আশ্রয়ব্যক্তি সমান অর্থাৎ ন্যূনও নয়, অতিরিক্তও নয়, তখন সেই দুটি ধর্মকে তুল্য ব্যক্তিবৃত্তি বা অন্যূন-অনতিরিক্ত আশ্রয়ক বলা হয়। আবার ঐ ধর্মদ্বয় পরস্পর পরস্পরের ব্যাপ্য-ব্যাপক হওয়ায় তাকে সমনিয়ত ধর্মও বলা হয়। ন্যায়-বৈশেষিক মতে নিয়ম হলো, দুটি জাতি তখনই ভিন্ন হবে যদি তাদের আশ্রয়ের বৈষম্য থাকে। সুতরাং দুটি অনুগত ধর্ম যদি এমন হয় যে একটি অপরটি থেকে অল্প বা অধিক দেশবৃত্তি নয়, দুটির আশ্রয়ই সমান, সেক্ষেত্রে দুটিকে দুটি পৃথক জাতিরূপে গণ্য করা যায় না। যেমন, ঘটত্ব ও কলসত্ব দুটি ভিন্ন জাতি নয়। ঘটত্ব অথবা কলসত্ব হলো জাতি। কারণ যে যে পদার্থ ঘটত্বের আশ্রয়, সেই সেই পদার্থ কলসত্বেরও আশ্রয়।
বস্তুত ঘটত্ব এবং কলসত্ব দুটি ভিন্ন ধর্মই নয়। ব্যক্তির আকৃতি হলো জাতির ব্যঞ্জক। ঘটের আকৃতি এবং কলসের আকৃতি যেহেতু এক, সেহেতু ব্যঞ্জক জাতিও এক। ঘট এবং কলস দুটি পর্যায় শব্দমাত্র।
 .
(৩) সঙ্কর : যদি দুটি অনুগত ধর্ম পরস্পরের অভাবের অধিকরণে থাকে এবং এক অধিকরণেও থাকে, তাহলে সেখানে সঙ্কর হয়। যে দুটি ধর্মের মধ্যে সঙ্কর হয়, সেই দুটি ধর্মের একটিও জাতি হয় না। যেমন- ভূতত্ব এবং মূর্তত্ব ধর্মের একটিও জাতি নয়। ভূতত্ব হলো পঞ্চভূতের অনুগত ধর্ম। মূর্তত্ব হলো সকল মূর্ত দ্রব্যের অর্থাৎ সীমিত পরিমাণবিশিষ্ট দ্রব্যের অনুগত ধর্ম।
এখন আকাশ ভৌতিক দ্রব্য, কিন্তু মূর্ত দ্রব্য নয়। সুতরাং আকাশে ভূতত্ব আছে, কিন্তু মূর্তত্বের অভাব আছে। আবার মন যেহেতু ভৌতিক দ্রব্য নয়, কিন্তু মূর্ত দ্রব্য, সেহেতু মনে ভূতত্বের অভাব আছে, কিন্তু মূর্তত্ব আছে। আবার এমন অধিকরণ আছে যেখানে ভূতত্ব ও মূর্তত্ব দুই-ই আছে। যথা- ঘট। কারণ ঘট পঞ্চভূতের অন্তর্ভুক্ত ক্ষিতি বা পৃথিবী নামক দ্রব্য। সুতরাং তাতে ভূতত্ব আছে। আবার ঘট যেহেতু সীমিত পরিমাণ বিশিষ্ট দ্রব্য, সেহেতু তাতে মূর্তত্ব আছে। যেহেতু ভূতত্ব এবং মূর্তত্ব পরস্পরের অভাবের সমানাধিকরণ হয়ে আবার একই অধিকরণে থাকে, সেহেতু ভূতত্ব বা মূর্তত্ব কোনটিকেই জাতি বলা যায় না।
 .
(৪) অনবস্থা : অবিশ্রান্ত অপ্রামাণিক পদার্থ কল্পনাকে বলা হয় অনবস্থা। যে সব কল্পনার বিশ্রান্তি নেই, সে সব কল্পনা অনবস্থা দোষে দুষ্ট। জাতিতে অপর একটি জাতি স্বীকার করলে সেই জাতিতে আবার অপর একটি জাতি স্বীকার করতে হয়। এভাবে অনবস্থা দোষ হয়। জাতি কখনোই অপর জাতির ব্যক্তি হতে পারে না। ব্যক্তি হলো জাতির ব্যঞ্জক তথা অধিকরণ। এজন্য ন্যায়-বৈশেষিক সম্প্রদায় জাতির জাতি স্বীকার করেন না। বৈশেষিকমতে দ্রব্য, গুণ ও কর্মই জাতির আশ্রয়। জাতিকে জাতির আশ্রয় বলা যায় না।
 .
(৫) রূপহানি : ‘রূপ’ বলতে এখানে স্বরূপকে বোঝানো হয়েছে। যাকে জাতিরূপে স্বীকার করলে তার স্বরূপের হানি হয়, তাকে জাতি স্বীকার করা যায় না। বৈশেষিক মতে বিশেষত্ব বিশেষের অনুগত ধর্ম হলেও জাতি নয়। বিশেষ স্বরূপতই জাতি ও জাতিমান থেকে ভিন্ন, নিঃসামান্য ও স্বতোব্যাবর্তক। বিশেষ পদার্থকে জাতি স্বীকার করলে বিশেষ পদার্থের স্বরূপের হানি হয়। এজন্য বিশেষত্ব জাতি নয়।
 .
(৬) অসম্বন্ধ : ‘অসম্বন্ধ’ শব্দের অর্থ হলো সম্বন্ধের অভাব। জাতি ও ব্যক্তির সম্বন্ধ হলো সমবায় সম্বন্ধ। কোন অনুগত ধর্ম যদি এমন হয় যে, সে তার আশ্রয়ে সমবায় সম্বন্ধে থাকে না, তাহলে সেই ধর্ম জাতি হতে পারে না। যেমন- অভাবত্ব বিভিন্ন অভাবের সমান ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও অভাবত্ব জাতি নয়। কারণ অভাবত্ব অভাবে সমবায় সম্বন্ধে থাকে না, থাকে স্বরূপ সম্বন্ধে। অনুরূপভাবে সমবায়ত্ব জাতি নয়। কারণ সমবায়ত্ব সমবায়ে স্বরূপ সম্বন্ধে থাকে, সমবায় সম্বন্ধে থাকে না। সমবায় সম্বন্ধের অভাবে তাই সমবায়ত্ব ও অভাবত্ব জাতি হয় না।
 .
ন্যায়-বৈশেষিক মতে, এই ছটি জাতিবাধকের কোন একটি না থাকলে নিত্য ও অনেকসমবেত ধর্মকে জাতি বলা হয়। জাতি দ্রব্য, গুণ, কর্ম- এই তিনটি পদার্থে থাকে। সামান্য, বিশেষ, সমবায় ও অভাবে জাতি থাকে না।
 .
সামান্য প্রসঙ্গে অন্যান্য দার্শনিকমত :
সামান্য বা সাধারণ ধর্মসম্বন্ধীয় সমস্যা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক সমস্যা। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো থেকে শুরু করে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দার্শনিক এই সমস্যার উপর আলোকপাত করেছেন। ভারতীয় দর্শনেও এই সমস্যার গুরুত্ব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। বৌদ্ধ, জৈন, বেদান্ত, ন্যায়-বৈশেষিক প্রভৃতি সম্প্রদায় নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সামান্য সম্পর্কীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভারতীয় দর্শনে সামান্য সম্পর্কীয় তিনটি প্রধান মতবাদ হলো- বৌদ্ধ সমর্থিত অপোহবাদ বা নামবাদ, জৈন সমর্থিত প্রত্যয়বাদ এবং ন্যায়-বৈশেষিক সমর্থিত বস্তুবাদ। বেদান্ত সম্প্রদায় এই বিষয়ে মূলত জৈন সম্প্রদায়ের অনুগামী এবং মীমাংসা সম্প্রদায় মূলত ন্যায়-বৈশেষিক সম্প্রদায়ের অনুগামী।
 .
বৌদ্ধমত :
বৌদ্ধমতে জগতের প্রবহমান স্বলক্ষণই একমাত্র সত্য। সামান্য বা জাতি বলে কোন পদার্থ নেই। জাতি বা সামান্য মানব-মনের বস্তুশূন্য কল্পনামাত্র। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি (কল্পনা) কতকগুলি জিনিসকে একটি নামের দ্বারা নির্দেশ করে। এই নাম বা নামের দ্বারা লক্ষিত বস্তুর বাস্তব অস্তিত্ব নেই। এগুলি অস্তিত্বশীল স্বলক্ষণের উপর মানবমনের আরোপিত কল্পনা। সুতরাং জাতি বা সামান্যের অস্তিত্ব নামের জগতেই সীমাবদ্ধ। কল্পিত নাম ভিন্ন এদের পৃথক কোন সত্তা নেই। যেমন কতকগুলি জন্তুকে আমরা গরু বলি। গরু নামে আখ্যায়িত করার অর্থ এই নয় যে, এদের কোন একটি বা একাধিক সাধারণ প্রকৃতি আছে, যার জন্য গরু নামটি দেয়া হয়েছে। গরু অন্য জন্তু যেমন ঘোড়া, হাতি, বাঘ, কুকুর ইত্যাদি হতে পৃথক একটি জন্তু।
 .
বৌদ্ধ দার্শনিকদের মতে, অনুগত প্রতীতি ব্যাখ্যার জন্য জাতি স্বীকারের কোন প্রয়োজন নেই। ‘অনুগত প্রতীতি’ অর্থ বহু পদার্থ বিষয়ে একই রকমের বুদ্ধি বা জ্ঞান। বিভিন্ন গরুতে গোত্ব (জাতি) নামক পদার্থের জ্ঞান হয় বলে যে আমাদের ‘এটি গরু, এটি গরু’ বলে অনুগত প্রতীতি হয়, তা নয়। প্রতিটি গরুতে গরু ভিন্ন ঘোড়া, হাতি ইত্যাদির ব্যাবৃত্তি বা ভেদের জ্ঞান অর্থৎ ‘এটি গরু ভিন্ন অন্যকিছু নয়, এটি গরু ভিন্ন অন্যকিছু নয়’ এরকম জ্ঞান হয় বলে আমাদের ‘এটি গরু, এটি গরু’ বলে অনুগত প্রতীতি হয়। জাতি সম্বন্ধে বৌদ্ধদের এই মতবাদকে বলা হয় অপোহবাদ। ‘অপোহ’ অর্থ তদ্ভিন্নের পরিত্যাগ বা বর্জন। বৌদ্ধমতে ক্ষণভঙ্গবাদ অনুসারে ‘শব্দ’ বা বস্তুর নাম সরাসরি ক্ষণিক স্বলক্ষণকে নির্দেশ করতে পারে না। যে মুহূর্তে নাম বস্তুকে নির্দেশ করে, বস্তু ক্ষণিক হওয়ায় সে মুহূর্তে তা অস্তিত্বহীন। তাই অন্য বস্তুর নিষেধের দ্বারাই শব্দ অর্থকে বোঝাতে পারে। শব্দের এই পরোক্ষ অভিধেয়ত্বই বৌদ্ধ পরিভাষায় ‘অপোহ’ নামে পরিচিত। অপোহবাদ অনুসারে, ‘গরু’ শব্দের যদি কোন অর্থ থাকে তাহলে তা হবে ‘অ-গরু-ব্যাবৃত্তি’ বা ‘অ-গোব্যাবৃত্তি’, অর্থাৎ ‘গরু ভিন্ন অন্যকিছু নয়’।
 .
বৌদ্ধ দার্শনিকেরা আরো বলেন যে, ন্যায়-বৈশেষিকমত অনুযায়ী অনুগত পদার্থ স্বীকার করলে বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
প্রথমত, প্রশ্ন হলো গরুতে অনুগত যে গোত্ব (জাতি), তা সর্বাংশে বিভিন্ন গো-ব্যক্তিতে থাকে, না অংশত থাকে ? যদি গোত্ব সর্বাংশে থাকে, তাহলে গোত্ব যখন কালী নামের গরুটির মধ্যে আছে, তখন ঐ গরুটিতেই তা নিঃশেষিত হয়ে থাকবে, বুধী বা অন্য কোন গরুতে তা থাকতেই পারে না। অপরপক্ষে যদি জাতি অংশত ব্যক্তিতে থাকে, তাহলে জাতি পদার্থের অংশ আছে স্বীকার করতে হয়। কিন্তু সামান্যের অংশ স্বীকার করলে সামান্য আর নিত্য হতে পারে না। অথচ ন্যায়-বৈশেষিকগণ সামান্যকে নিত্য বলে স্বীকার করেছেন।
 .
দ্বিতীয়ত, ন্যায়-বৈশেষিক মতে জাতির সঙ্গে ব্যক্তির সম্বন্ধও ব্যাখ্যা করা যায় না। কারণ জাতি যেহেতু নিত্য পদার্থ, সেহেতু যখন কোন ব্যক্তি উৎপন্ন হয়, সেই ব্যক্তির জাতি তার সঙ্গে উৎপন্ন হতে পারে না। জাতি, অপর কোন ব্যক্তি থেকে উঠে গিয়ে সদ্য-উৎপন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সম্বন্ধযুক্তও হতে পারে না। কারণ জাতি দ্রব্য নয়, তার গমনক্রিয়া থাকতে পারে না।
 .
তৃতীয়ত, প্রশ্ন হলো জাতি কোন্ অর্থে সর্বগত ? অর্থাৎ জাতি কি সর্বত্র বিদ্যমান ? অথবা স্বশ্রেণীর সর্ব ব্যক্তিতে বিদ্যমান ? প্রথমপক্ষ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তাহলে অশ্বেও গোত্ব আছে বলতে হবে। তাহলে অশ্বে গোবুদ্ধি হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের অশ্বে অশ্ববুদ্ধিই হয়, গোবুদ্ধি হয় না। অপরপক্ষে যদি বলা হয় যে, গোত্ব কেবল তার স্বশ্রেণীর যে ব্যক্তি অর্থাৎ গো-ব্যক্তিতেই থাকে, তাহলে একটি সদ্যোজাত গো-ব্যক্তির সঙ্গে গোত্বের সম্বন্ধ হতে পারে না। কারণ গোত্বের যেহেতু কোন ক্রিয়া থাকতে পারে না, সেহেতু অন্য গরু থেকে গোত্ব এসে ঐ গো-ব্যক্তিতে সম্বন্ধযুক্ত হতে পারে না।
 .
চতুর্থত, সমস্ত ব্যক্তি বিনাশ হলেও জাতি বিনষ্ট হয় না- ন্যায়-বৈশেষিকদের এই বক্তব্য যুক্তিবিরুদ্ধ। ব্যক্তিই জাতির আশ্রয়। সুতরাং, নিরাশ্রয় হয়ে জাতি থাকতে পারে না।
 .
বৌদ্ধ পক্ষের যুক্তি খণ্ডনে ন্যায়-বৈশেষিকেরা বলেন, অপোহবাদ যুক্তিযুক্ত নয়।
প্রথমত, জাতি ব্যক্তিতে সর্বাংশে থাকে না অংশত থাকে- এই প্রশ্নই অবান্তর। জাতির স্বভাবই এই যে, জাতি প্রত্যেক ব্যক্তিতে একই সময়ে স্বরূপত উপস্থিত থাকে। এই কারণে জাতি ব্যক্তি নয়। জাতির কোন অংশও নেই যেহেতু জাতি নিত্য।
 .
দ্বিতীয়ত, জাতির সঙ্গে ব্যক্তির সম্বন্ধ ব্যাখ্যা করাও কোন সমস্যা নয়। কারণ জাতি সর্বত্র বিদ্যমান হলেও, ব্যক্তিই জাতির ব্যঞ্জক তথা অধিকরণ বা আশ্রয়। স্বশ্রেণীর ব্যক্তিতে জাতি সমবায় সম্বন্ধে থাকে এবং ব্যক্তির মাধ্যমেই জাতি প্রকাশিত এবং অনুভূত হয়। অন্যান্য ব্যক্তিতে জাতি থাকলেও, সমবায় সম্বন্ধে থাকে না, স্বরূপত থাকে। এই কারণে গো-ব্যক্তিতেই গো-বুদ্ধি হয়, অশ্ব-ব্যক্তিতে গো-বুদ্ধি হয় না।
 .
তৃতীয়ত, জাতির নিরাশ্রয়তার আপত্তিও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ যদিও স্বশ্রেণীর কোন ব্যক্তি ছাড়া জাতির ব্যঞ্জনা সম্ভব হয় না, কিন্তু এর দ্বারা তার সত্তার কোন হানি হয় না। অপ্রকট অবস্থায় জাতি কালকে আশ্রয় করে থাকে যেহেতু কালই জগতের আধার।
 .
সর্বোপরি, বৌদ্ধরা যেভাবে অনুগত প্রতীতির ব্যাখ্যা করেছেন তা মেনে নেওয়া যায় না। গোত্ব পদার্থের অস্তিত্ব ছাড়া বিভিন্ন গরুতে আমাদের যে অনুগত প্রতীতি হয় তা ব্যাখ্যা করা যায় না। বৌদ্ধরা অনুগত প্রতীতির কারণরূপে যে অ-গোব্যাবৃত্তির কথা বলেছেন, সেই অ-গোব্যাবৃত্তির জ্ঞান আমাদের আদৌ হতে পারে না। কারণ গোত্ব-সামান্যের জ্ঞানের দ্বারা যাবৎ গো-ব্যক্তির জ্ঞান হলে তবে অ-গোব্যাবৃত্তির জ্ঞান আমাদের হওয়া সম্ভব। গোত্বের জ্ঞান ছাড়া সকল গরুর জ্ঞান যেহেতু আমাদের হতেই পারে না, সেহেতু মূলত সামান্য পদার্থকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে।
 .
জৈনমত :
জৈনমতে সামান্য হলো এক জাতীয় দ্রব্যে উপস্থিত কতকগুলি সমান গুণের সমষ্টি। যেমন, প্রতিটি ব্যক্তি মানুষ হিসেবে একে অন্যের থেকে পৃথক হলেও তাদের মধ্যে এমন কতকগুলি সমান গুণ থাকে যাদের জন্য তাদের একই জাতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মানুষ জাতির মনুষ্যত্বরূপ সামান্য বলতে সকল মানুষের মধ্যে উপস্থিত সমান গুণের (জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি) সমষ্টিকে বোঝায়।
 .
মূলত জৈনমতে সামান্য ব্যক্তি-নির্ভর। কতকগুলি বস্তু বা ব্যক্তিকে অপর কতকগুলি বস্তু বা ব্যক্তি থেকে পৃথক করার জন্য আমরা এক শ্রেণীর বিশেষ বিশেষ বস্তুর সাধারণ গুণগুলিকে মানসিক বিশ্লেষণের সাহায্যে একত্রিত করে একটি সামান্য ধারণা গঠন করি। এই সামান্য ধারণাই সামান্য বা জাতিরূপে ব্যবহৃত হয়। তবে সামান্য ধারণার অনুরূপ কোন সামান্য বস্তুর বাস্তব অস্তিত্ব নেই। জগতে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি বা ধর্মই অস্তিত্বশীল, সামান্যধর্ম অস্তিত্বশীল নয়। ব্যক্তিই সামান্যের ভিত্তি এবং ব্যক্তির সঙ্গে সামান্যের সম্বন্ধ হলো তাদাত্ম্য সম্বন্ধ। এই সামান্য সম্পর্কীয় এই জৈন মতবাদই প্রত্যয়বাদ নামে পরিচিত।
 .
এই মতের বিরুদ্ধে বৈশেষিক আচার্যগণের বক্তব্য এই যে, জ্ঞান মাত্রই বিষয়-নির্ভর। অনেক গো-ব্যক্তিতে যে অনুগতাকার জ্ঞান, তার বিষয় নিছক বিশেষ গো-ব্যক্তি হতে পারে না। ভিন্ন ভিন্ন গো-ব্যক্তি একটি অনুগত প্রতীতির বিষয় হতে পারে না, কারণ তারা পরস্পর ব্যাবৃত্তি (পৃথক বা ভেদজ্ঞান) প্রতীতিরই বিষয় হয়। দুটি ভিন্ন গো-ব্যক্তি থেকে দুটি ভিন্ন গরুর জ্ঞান উৎপন্ন হয়। সুতরাং অনেক ব্যক্তির অনুগতাকার জ্ঞানের জন্য একটি অনুগতধর্ম অবশ্যই স্বীকার করতে হয়। এই অনুগত ধর্মই সামান্য। গোত্ব, অশ্বত্ব প্রভৃতি সাধারণ ধর্ম গরু, অশ্বাদি ব্যক্তির অতিরিক্ত এবং তা গরু, অশ্বাদির প্রতীতি থেকে ভিন্ন প্রতীতির বিষয়। এই কারণেই গো-ব্যক্তির অতিরিক্ত গোত্বাদি ধর্ম স্বতন্ত্র সামান্য পদার্থ রূপে স্বীকৃত হয়েছে। গোত্ব যদি গরুর অতিরিক্ত কিছু না হয়, তাহলে গরুর উৎপত্তি ও বিনাশে গোত্বেরও উৎপত্তি ও বিনাশ হতো। কিন্তু তা হয় না। অতএব সামান্য পদার্থের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়।

(চলবে…)

[আগের পর্ব: কর্ম-পদার্থ] [*] [পরের পর্ব: বিশেষ]

No comments: