Thursday, August 9, 2012

| সমতলে বক্ররেখা…০৩ : বিনোদন-থেরাপি |

 .
| সমতলে বক্ররেখা…০৩ : বিনোদন-থেরাপি |
রণদীপম বসু

(১)
ইদানিং হতাশা নিয়ে অনেককেই বলতে শুনি, আজকাল বিনোদনের বড় অভাব। আপাতভাবে কথাটার যৌক্তিকতা উড়িয়ে দেয়া যায় না হয়তো। সত্যিই তো, আমাদের বিনোদন পাওয়ার অভাবের কি শেষ আছে ! সঙ্গত কারণেই এই অভাবের তালিকা দিয়ে শেষ করা যাবে না। কেননা, একটু গভীর করে যদি প্রশ্ন করা যায়, বিনোদন বলতে আমরা আসলে কী বুঝি ?

প্রশ্নটা খুব বেয়ারা হয়ে যাবে। কারণ, বিনোদনের প্রকৃতি ব্যক্তি-মানুষের নিজস্ব রুচি নির্ভর। এই রুচি যেমন শিক্ষা, কর্ম, পেশা, বয়স, অভিজ্ঞতা এসবকিছু দ্বারা প্রভাবিত হয়, তেমনি সময়, যুগ বা কালও একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এছাড়া আরো অনেক অনেক অনুঘটকও এতে বিদ্যমান থাকতে পারে। এরকম অনেককিছুর বিন্যাস ও সমাবেশের মাধ্যমেই একেকজন ব্যক্তিমানুষের রুচিবোধ গড়ে ওঠে। তাই বিনোদন চাওয়া আর পাওয়ার প্রকৃতি যে প্রতিটা ব্যক্তিমানুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
 .
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হচ্ছে, আমরা যেভাবে বিনোদন পেতে চাই অর্থাৎ আমাদের বিনোদন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার সাপেক্ষেই এই চাহিদাটা তৈরি হয়। আকাঙ্ক্ষা বা চাওয়া অনুযায়ী প্রাপ্যের ঘাটতিই আমাদের হতাশার কারণ। ধরা যাক, একটা খেলার মাঠ না থাকায় আমরা খেলতে পারছি না, এই অভাবের তাড়নায় বিনোদন হারিয়ে আমরা হতাশায় আক্রান্ত হচ্ছি। এখানে আমরা হচ্ছি সাবজেক্ট বা কর্তা, আর আমাদের আকাঙ্ক্ষা বা চাহিদামতো বস্তুর অভাবটা হলো অবজেক্ট বা কর্ম। এই যে অস্তিত্বহীন বিষয় বা বস্তুহীনতাকে বস্তুগত অবজেক্ট বানিয়ে ফেলা, এটা যে আসলে ইহজাগতিক বিবেচনায় প্রকৃতি বিরুদ্ধ, সেটা কিন্তু খেয়ালে রাখছি না কেউ। একটা পুকুর বা নদী নেই বলে ইচ্ছেখুশি সাঁতার কাটতে পারছি না, এই প্রকৃতির বিনোদনের অভাবে আমরা কি তবে বিষণ্ন হয়ে থাকবো ? একটা অভাব বা অস্তিত্বহীন বিষয়কে ব্যক্তিগত স্বপ্ন বা বিনোদনের চাহিদা বানানোয় একদিকে লাভ যেমন থাকতে পারে, অন্যদিকে ক্ষতিই থাকে ব্যাপকভাবে। সামর্থ ও প্রতিপত্তি থাকলে হুমায়ূন আহমেদের মতো একটা নূহাশ পল্লী বানিয়ে নির্দিষ্ট প্রকৃতির কিছু বিনোদনের অভাব মিটানোর সাফল্য অর্জন করে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানো যেতে পারে হয়তো। কিন্তু সেরূপ শক্তি, সামর্থ ও সুযোগ না থাকলে ? ক্ষতির দিকটা মূলত এখানেই, এবং বিরল ব্যতিক্রম বাদে এটাই খুব স্বাভাবিক। আসলে বিষয় যখন কেবলই বিনোদন, তখন বিনোদন পাওয়ার দৃষ্টিভঙ্গিটাই মুখ্য হওয়া উচিৎ। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা কি সেভাবে আছে ?
 .
প্রকৃতিগতভাবে মানুষ চিরকাল এই বিশ্বপ্রকৃতি থেকেই অকৃত্রিম বিনোদন পেয়ে আসছে। মহাপ্রকৃতির নিজস্ব ধমনীর মতো নদীগুলোকে কোন ব্যক্তিমানুষ তৈরি করেনি, যা চিরকাল মানুষের জীবন জীবিকা কিংবা বিনোদনের অবিকল্প মাধ্যম হয়ে এসেছে। এগুলোকে দূষিত ও বিষাক্ত করে ব্যবহারের অনুপযোগী করেছে মানুষই। এককালে নদীর পাড়ে বসে ভেসে যাওয়া গুণ-টানা বা পাল-তোলা নৌকার দৃশ্য আর এর সৌন্দর্য দেখে যে মানসিক আনন্দে আপ্লুত হয়েছি, সেটি সময়ের প্রয়োজনেই ইতিহাস বা স্মৃতির অংশ হয়ে গেছে। চাইলেও সে বিনোদন ফিরে পাবো না আর। স্যালো ইঞ্জিন নির্ভর যান্ত্রিক নৌকার সৌন্দর্যহীনতা আবিষ্কার করে পেছনের সেই অমানুষিক শ্রমে মাখানো পুরনো বিনোদন চাওয়াটাই অমানবিক হবে এখন। এটাই বাস্তবতা। শ্যামল বনানী সাফ করে গড়ে তোলা বসতিতে সেই সবুজ সৌন্দর্যের অভাবের মধ্যে বিনোদন না পাওয়ার বিষণ্নতাও অর্থহীন। কালের প্রয়োজনে আমরাই পরিবর্জন পরিবর্তন করেছি এসব। আমাদেরই স্বসৃষ্ট এই অভাবের মধ্যে বিনোদন হারানোর হাহাকার তাই দুঃখবিলাসেরই নামান্তর এখন। তবে কি আমরা বিনোদনহীন মুখ-গোমড়াই থেকে যাবো ? তা কেন হবে ! মানুষের মতো প্রকৃতি কৃপণ নয় এতো। কারণ, প্রকৃতির সীমানা কেবল অসীমই নয়, অনন্ত গভীরও। আর আমরাও কি প্রকৃতির বাইরের কিছু ? আসলে বিনোদনের প্রধান মাধ্যম আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটাই। বিনোদন পেতে আমাদের দরকার শুধু বিষয়বস্তুর পরিবর্তনটাকে স্বীকার করে পরিবর্তিত বিষয়ের দিকে চোখ মেলে দেখা। অন্তর-চক্ষুটাকে জাগিয়ে তোলা। অভাবকে ছেড়ে জগত বা প্রকৃতির তথা জীবনের অস্তিত্ববান বিষয়গুলোর দিতে একটু অন্যরকম তাকালেই দেখা যাবে জীবন ও জগতের বিচিত্র বিনোদন-উৎসগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমাদের আশেপাশে।
 .
(২)
আমাদের চারদিকে বিনোদনের এতো রকম উৎস ও উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যে, বিনোদন নেই বিনোদন নেই বলে যে হা-হুতাশ ছড়াই আমরা, তা কিন্তু বিনোদনের উৎসের অভাবে নয়, বিনোদন গ্রহণের অক্ষমতাই বলা যায়। বহু উৎস থেকেই মানুষ বিনোদন পেতে পারে। স্তর বা মাত্রা বা দেখার দৃষ্টি ভেদে এর ভিন্নতা হতে পারে। কেউ সিনেমা দেখে বিনোদন পায়, কেউ গান শুনে। কেউ মুক্ত বিহঙ্গের মতো নিজেকে ছড়িয়ে দিয়ে ঘোরাঘুরি করে, কেউ ঘরের নির্জন কোণে দিনভর প্রিয় বইগুলোর আশ্চর্য মোহময় জগতে ডুবে থেকে বিনোদন পায়। কেউ বিরতিহীন আড্ডা কিংবা তাস পেটানোর উল্লাসে বিনোদন খুঁজে, কেউ তার বিস্ময়কর সৃজনের একান্ত জগতে নিয়ত ভাঙচুর হতে হতে অনির্বচনীয় আনন্দ খুঁজে পায়। এরকম বহু একক কিংবা একাধিক উৎস থেকেই মানুষ তার নিজস্ব আনন্দটুকু নিংড়ে নিংড়ে বিনোদনের আয়োজন করে। ব্যক্তির রুচি, বোধ, উপলব্ধি, এগুলো যে বিনোদনের মাত্রা নিরূপনে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের কাজ করে তাও জানি আমরা। তবে এখানে যে সব নমুনা-উৎস উলেখ করা হলো তা হচ্ছে লক্ষ্যবদ্ধ বিনোদন। অর্থাৎ তা থেকে বিনোদন পাবো এই সম্ভাব্যতা বুকে নিয়ে আমরা এসব উৎসে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
 .
আবার কিছু আছে ব্যতিক্রমী উৎস। চিরায়ত বৈচিত্র্যের এই ব্যতিক্রমী উৎসগুলো কিন্তু খুবই কৌতুহলোদ্দীপক এবং তা তাৎক্ষণিক অনুরণনে এক অনির্বচনীয় উপলব্ধির জন্ম দেয়। আমাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ও চলমান জীবনযাত্রার মধ্যেই এই বিনোদনগুলোকে চাইলেই ধরতে পারি আমরা। ফাঁকেফুকে দেখার বা দেখে নেয়ার দৃষ্টিটাকে একটু তীক্ষ্ণ ও লক্ষ্যভেদী করে নিতে হয় কেবল।
 .
ধরুন জনকোলাহল ডিঙিয়ে এসে ফুটপাথের কোন চায়ের দোকানের টুলটিতে বসে আনমনে হয়তো চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জনস্রোতের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টিটাকে একটু তীক্ষ্ণ করুন। দেখুন না, কী এক মজার জগত আপনার চোখের সামনে উন্মুক্ত হয়। প্রত্যেকটা মানুষের হাঁটা এবং হাঁটার স্টাইলটাকে খেয়াল করুন আর ভাবুন- ব্যক্তিত্ব মানুষের চেহারায় নয়, হাঁটার স্টাইলেই আঁকা থাকে। দৃষ্টিটাকে যতোটা সম্ভব সংবদ্ধ করে এবার মিলাতে থাকুন। অন্যরকম এক উপলব্ধিজাত আনন্দ তার সুক্ষ্ম বিনোদনকণা ছড়িয়ে আপনাকে রাঙিয়ে তুলবে।
 .
অথবা ধরুন, আপনি কোন হোটেল বা রেস্তোরায় ঢুকলেন লাঞ্চ করতে। ছড়ানো ছিটানো অন্যান্য চেয়ার টেবিল জুড়ে আপনার মতো আরো অনেকেই হয়তো নিরিবিলি লাঞ্চ করছেন। খাবার খেতে খেতে আশেপাশে দৃষ্টিটাকে একটু তীক্ষ্ণ করে তুলুন। খুব ভালো করে প্রত্যেকটা লোকের খাবার ও খাবার গ্রহণ-পদ্ধতি এবং আনুষঙ্গিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলো খেয়াল করুন। কে কিভাবে ভাত কচলাচ্ছেন বা মাখাচ্ছেন, কিভাবে কোন্ পদ্ধতিতে ভাতের গ্রাস বা লোকমাটা হাত দিয়ে মুখে পুরছেন, কিভাবে তা চিবানো হচ্ছে, মুখের বা মুখমণ্ডলের মাংসপেশীগুলোর সঞ্চালন ও তাতে করে ক্ষণে ক্ষণে চেহারার পরিবর্তনগুলো খেয়াল করুন এবং এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে সংশিষ্ট ব্যক্তির চাউনির ধরন বা দৃষ্টিবদ্ধতাটুকুও খুটিয়ে খুটিয়ে বিশ্লেষণ করতে থাকুন। দেখুন না, বিনোদনের কী বিস্ময়কর জগত আপনার সামনে খুলে যায় ! দেখার দৃষ্টি থাকলে এরকম কতো কিছু থেকেই আমরা জীবনের অনেক বোধ ও বিনোদন আহরণ করতে পারি।
 .
কেউ কেউ ভাঁড়ামো করেও ব্যাপক আনন্দ পান। এই ভাঁড়ামো দেখে আবার অন্য অনেকে তা থেকে প্রচুর বিনোদন সংগ্রহ করেন। আবার এই ভাঁড়ামো থেকে অন্যদের আনন্দ কুড়ানোর উপায় বা প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেও কেউ কেউ বিনোদন পান বৈ কি। আসলে চারদিকে আমাদের কথায়-কাজে-আচারে-বিচারে এতো বেশি অসংগতি ও বৈকল্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে যে, একটু গভীরভাবে দেখলে এগুলোর মধ্যে প্রচুর ভাঁড়ামোর উপাদান যেমন চোখে পড়বে, বিনোদন হিসেবেও তা কিন্তু ফেলনা নয়। আর চাইলে জীবনের নশ্বরতাটুকুও হয়তো তা থেকে খুঁজে পেতে পারেন। তবে বহতা নদীর মতো অবিরল ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলো চলমান, অস্থির। এখন যা আছে, একটু পর সেটা আর থাকছে না। নতুন ঘটনা ঘটছে। নতুন কিছু হয়ে যাচ্ছে। নতুন আরেক বিনোদন বা এর উৎস সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে।
 .
লেখালেখির জগতেও এসব উপাদানের কমতি নেই। এক্ষেত্রে বড় সুবিধাটা হলো, এগুলো লিখিত থাকে বলে অক্ষরগুলো সহজে ধুয়ে মুছে হারিয়ে যায় না। নমুনাগুলো দীর্ঘকাল থেকে যায়। তবে বহমান ঘটনা বা পলে পলে পাল্টে যাওয়া প্রেক্ষিতগুলোর বৈচিত্র্য বলি আর মোহই বলি, এর মাজেজাই আলাদা। না থাক প্রমাণপত্র কোনো, তাৎক্ষণিক বোধ, উপলব্ধি আর মুহূর্তকালীন জীবনের যে বিচিত্র চিত্র, এর অন্দরে প্রবেশের সূত্রটা যদি একবার আবিষ্কার করে ফেলা যায়, মনে হয় না এক জীবনের সাকুল্য সময়টা আর কখনোই কারো কাছে বোঝা হয়ে উঠবে। জগতে বিষয়ের কি অভাব আছে ! এজন্যেই বোধ করি সৃষ্টিশীল ব্যক্তিরা সময়ের ভারে আক্রান্ত হন না কখনো, চিরকাল সময়-ঘাটতিতেই থেকে যান !
 .
(৩)
তবে আলোচ্য প্রসঙ্গের যে কোনো বিন্দুতে এসে যে-কেউ হয়তো ধাম করে তাঁর ভিন্নমতটাও ছুঁড়ে দিতে পারেন নির্দ্বিধায়। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। মতানৈক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। এবং অহেতুক ঝুঁকি এড়িয়ে কানে কানে এটাও বলে রাখা আবশ্যক যে, এটাও বিনোদনের আরেক উৎস বৈ কি ! তবে খুব খেয়াল করে ! এ প্রক্রিয়াটা কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত নয় কিছুতেই, যতক্ষণ না বোঝাপড়াটা কেবল নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে ! কারণ, কারো কোন সিরিয়াস বিষয় থেকেও আপনি বিনোদনের উৎস বা উপাদান খুঁজছেন- এই বোধ যদি কেউ একটিবার টের পেতে পারে, তাহলে আপনার খবর আছে ! চেহারার অরিজিনালিটি বা ন্যাচারাল ফিনিশিং যে শেষপর্যন্ত অবিকৃত থাকবেই এই নিশ্চয়তা আদৌ কেউ দিতে পারবেন কিনা অজ্ঞাত। অতএব আবারো বলি, এক্ষেত্রে খুব সাবধান !
 .
আর এ প্রেক্ষিতে এটাও বলা বাহুল্য হবে না হয়তো, অতি উৎসাহী হয়ে এখনই যারা প্রতিমুহূর্তের ঘটনাপঞ্জির কেসহিস্ট্রি তৈরিতে নেমে যেতে একান্তই একপায়ে খাড়া হয়ে যাচ্ছেন বলে ধারণা করি, তাঁদের জন্য দূরবর্তী একটা হতাশার কথা না বললেই নয়। ঝুঁকিমুক্ত পদ্ধতিতে এটা করতে গিয়ে সাত-কাণ্ড রামায়ণ রচনা সম্পন্ন করে ফেলতেই পারেন, তবে উপসংহারে এসে তা ‘সীতা কার বাপ’ হয়ে যাবার আশঙ্কাটা যেন প্রবল না হয়ে ওঠে। তাই বোধকরি মহামুনি বাল্মিকী হয়ে ওঠার আগে উপলব্ধির পূর্ণতার জন্যই দস্যু রত্নাকর জাতীয় কিছু হয়ে ওঠার প্র্যাকটিসটাও সেরে নেয়া যেতে পারে। কেউ যদি আবার পাল্টা প্রশ্ন করেন, কিভাবে ? এর কোন সুষ্টু উত্তর নেই। কারণ রত্নাকর হতে হলে কোন কিছু জানার প্রয়োজন হয় না। বরং রত্নাকর হলেই নাকি বাল্মিকী হবার উপায়টার খোঁজ পাওয়া যায়। অর্থাৎ, পথ চললেই পথের হিসাব। শেষপর্যন্ত পথই পথের শেষটুকুতে নিয়ে যায়।
 .
কোন কিছুরই শেষ নেই যদিও, তবু পরিশেষে সেই দুঃসংবাদমূলক উপলব্ধির কথাটা উল্লেখ না করে পারা যায় না। আগেই বলেছি, সৃষ্টিশীল ব্যক্তিরা চিরকাল সময়-ঘাটতিতেই থেকে যান। তাঁরা ভাগ্যবান, কারণ কর্মহীন সময়ের বোঝায় তাঁদের ন্যূব্জ হতে হয় না। সময় হয়তো কেটে যাবে, কখনো রক্তপাতে, কখনো বিনা রক্তপাতে। তবু সময়কে আমরা যতোই অস্থির ধাবমান বলি না কেন, কর্মহীন সময়ের গুরুভার বোঝা বড় বেশি স্থবির ও ভয়ঙ্কর। তা থেকে নিষ্কৃতি চাইলে আগেভাগেই সৃজন ও মননের ভ্যাক্সিনটুকু নিয়ে নেয়া জরুরি বৈ কি।
 .
কিন্তু তাঁদের ছাড়াও আরেক ধরনের ব্যক্তি-প্রাণী আছে যারা কখনোই সময়ের ভারে আক্রান্ত হয় না। অলটাইম বোঝা বইতে বইতে এরা এতোই ব্যতিব্যস্ত থাকে যে, সময়ের বোঝা নেয়ার ফুরসৎই বা কই তাদের ! এরা হলো সেই গাধা, খাটি বাংলায় যাদেরকে মৌলিক গর্দভ বলা হয়। গাধার কি কোন বিনোদন থাকে ? মাঝে মাঝে কেন যেন আমার নিজেকেও এর চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু মনে হয় না !

(২৩-০৭-২০১২)

No comments: