Tuesday, March 19, 2013

| জগতে কতোকিছু যে শেখার আছে !

.
| জগতে কতোকিছু যে শেখার আছে !
রণদীপম বসু

(১)
ইদানিং মজার একটি বিষয় নিয়ে খুব শোরগোল শুরু হয়েছে দেশের সবক’টি পর্যায় থেকে। বিষয়টি আর কিছু নয়, নাস্তিক্যবাদ। তবে যারা এটিকে নিজেদের মতো করে উদ্দেশ্যমূলক নাড়াচাড়া করছেন, তা যে খুব খারাপ অর্থেই বা লক্ষ্য নিয়ে করছেন এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁদের বক্তব্য-বিবৃতি শুনে মনে হয়, কোন সংক্রামক ব্যাধির মতোই নাস্তিক্যবাদ নামের অতি জঘন্য একটি জিনিসের দ্রুত প্রাদুর্ভাব ঘটে এই দেশ এই জাতি বুঝি রসাতলে ডেবে যাচ্ছে। সত্যি কি তাই ?

আমি বলবো সত্যিই। তবে তা নাস্তিক্যবাদের কারণে নয়, যারা মৌলবাদী ধর্মান্ধতার ঠুলিপড়া দৃষ্টি দিয়ে নাস্তিক্যবাদকে উদ্দেশ্যমূলক জঘন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে এ দেশের শুভবোধ সম্পন্ন পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠিকে অপমান ও বিপর্যস্ত করতে চাইছেন তাদের কারণেই এ জাতির গৌরবময় উদার ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যে কলঙ্ক লেপন হচ্ছে। তাঁরা কি আদৌ জানেন না দার্শনিক প্রযুক্ত এই নাস্তিক্যবাদ মানে কী ? হয়তো জানেন, হয়তো জানেন না। কিন্তু রাজনীতির দাবাখেলায় হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থের লক্ষ্যে নিজেদের ভেতরগত বিধর্মীবিদ্বেষবাদকে ঘুটি হিসেবে নাস্তিক্যবাদের নাম দিয়ে উদ্দেশ্যমূলক বালখিল্য ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁরা আসলে তাঁদের অজ্ঞতা, শঠতা, ধর্মান্ধ আধিপত্যকামিতা, অমানবিক বিবেচনাশূন্যতা, ইতিহাস বিমুখতা ও রাজনৈতিক নিঃস্বতাই প্রদর্শন করেছেন মাত্র। এতে করে আসলে যে তাঁদের ভন্ডামোর মুখোশটাই উন্মোচিত হয়ে গেছে সে খবর তাঁরা রাখেন কিনা জানিনা। তাঁরা হয়তো এটা ভুলেই বসে আছেন যে, ইতিহাসের দায় কেউ এড়াতে পারে না। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ইতিহাস তার দায়টুকু আগে-পড়ে ঠিকই কড়ায়গন্ডায় শোধ করে দেয়।
.
প্রাসঙ্গিক কারণেই নাস্তিক্যবাদের ওপর কিঞ্চিৎ দর্শনালোকপাতের প্রয়োজন হতে পারে। তবে তার আগে বর্তমান রাজনৈতিক-সামাজিক প্রেক্ষাপটের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হালের তীব্র আলোচিত বিষয় নাস্তিক্য নিয়ে তিন পর্যায়ের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খবরের বিষয়বস্তু এরকম-
.
বিষয়বস্তু-১ : ইসলামের অবমাননা রোধে নাস্তিকদের বিচারে কঠিন সাজার বিধান করে দ্রুত আইন তৈরি করে তাদের গ্রেফতার করা না হলে ঢাকা লংমার্চের কর্মসূচি : হেফাজতে ইসলাম
বিষয়বস্তু-২ : সরকার বিধর্মী ও নাস্তিকদের পুলিশি পাহারায় সমাবেশ করতে দিচ্ছে, তাদের নাস্তা-হালুয়া দিয়ে লালন-পালন করছে। এইসব মঞ্চ-ফঞ্চ বন্ধ না হলে জনগণের মঞ্চ তৈরি হবে। এই সরকার (আওয়ামীলীগ) নাস্তিক সরকার : বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বিষয়বস্তু-৩ : জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম  ফেসবুক ও ব্লগে ইসলাম ধর্ম কিংবা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যকারীদের শনাক্ত করতে ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার।
.
দেশের সংবেদনশীল তিনটি অবস্থান থেকে যে অভিন্ন একটি গোষ্ঠিকে নাস্তিক বানিয়ে ভিকটিম করা হয়েছে তারা কারা ? এরা এদেশেরই অগ্রবর্তী তরুণ প্রজন্ম, যারা মূলত ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রাণের চাওয়াটিকে উচ্চারণ করেছে তাদের দেশপ্রেম ও চেতনার দাবিতে। কী সেই দাবি ? একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যেসব ব্যক্তি ও দল মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিলো তাদের বিচার ও সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা। পবিত্র দেশপ্রেম ও চিরায়ত মানবিকবোধে মহীয়ান হয়ে যারা শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে এই দাবিতে সোচ্চার রয়েছেন। এ চাওয়ার মধ্যে কি অস্বাভাবিক বা অনৈতিক কিছু আছে ! সভ্য মানুষ ও গর্বিত বাঙালি হিসেবে আমরা তো জানতাম যে, এটা খুবই স্বাভাবিক একটি নৈতিক চাওয়া ! নিরীহ নিরপরাধী ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে হত্যা খুন গুম ধর্ষণ ইত্যাদি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে অত্যন্ত মানবিক একটি চাওয়া ! বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সভ্য মানুষেরা তাদের জন্য যা যথাসময়েই নিশ্চিত করেছে, স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছরেও আমরা তা পারিনি  বলে এটা ছিলো এ জাতির অপমান, কষ্ট ও কলঙ্কের গাথা, দুর্বহ লজ্জার খতিয়ান। এই চাওয়াটা কি কোন বিবেকবান সভ্য মানুষের চাওয়া নয় ! কিন্তু মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের বিচার চাওয়ার সাথে হালের জেগে ওঠা বিভ্রান্তিকর আস্তিক্য-নাস্তিক্যের সম্পর্ক কোথায় ! তাহলে কেন এই ত্রিমুখী আক্রমণ ! বাঙালির স্বাধীনতাকামী একাত্তরের ইতিহাস ও তৎকালীন প্রেক্ষাপটের সাথে বর্তমান এই ২০১৩-এর প্রেক্ষাপটের বিস্ময়কর মিল-অমিল পাশাপাশি রেখে প্রশ্নের উত্তর পাঠকরাই নির্ধারণ করুন। আমাদের একাত্তরের মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের সময়টিতেও একদল মানবতাবিরোধী গোষ্ঠি যে একইরকম রব তুলে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি নিধনে মেতে উঠেছিলো, বাঙালির দগদগে ক্ষত থেকে উৎসারিত সেই দুঃসহ স্মৃতি ম্লান হবার নয়।
.
(২)
তবে এখানে একটা বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করি, তা হলো, এই নাস্তিক্যের বিষয়টা আসছে কেবল ইসলাম ও মহানবী (সা.)-কে অবমাননার বিষয়টাকে কেন্দ্র করেই, এবং তাও কেবল ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরম ব্লগ ফেসবুক ইত্যাদিতে যেখানে অবমাননা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ এখানে দুটো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এখানে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, অবমাননাবোধটুকু ধারণ করেন কেবলই ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাই, অন্য ধর্মাবলম্বীরা নয়। অন্যদের অরক্ষিত ধর্মগ্রন্থ অবতার দেবতা প্রতিমা বিশ্বাস ইত্যাদি নিয়ে অবমাননা করার বিষয়টি এখানে নিদারুনভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। কারণ হয়তো এরা ‘সংখ্যালঘু’ নামের একটা শব্দবন্ধে আটকা পড়ে গণিমতের মাল বা পবিত্র আমানত হিসেবে নিজেদের মানুষ বা বাঙালি সত্তাটা খুইয়ে বসে আছেন। অবমাননা তো মানুষের হয় ! সহজ কথায় সংখ্যালঘু দুর্বল অমুসলিমরা মানুষ পদবাচ্যের মধ্যে পড়ে না, ফলে অবমাননা জাতীয় কিছু তাদের থাকতে পারে না। দ্বিতীয়ত, ইসলামের অবমাননার দাবিটি আসছে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমের বিরুদ্ধে। কেন ? সব রহস্য কি তবে এখানেই লুকিয়ে আছে ! কিভাবে ?
.
ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরম ছেড়ে বাস্তবের মাটিতে এলে তাদের জন্য প্রথম সমস্যাই হওয়ার কথা তথাকথিত নাস্তিকদের বিরুদ্ধে বাস্তব কোন তথ্য প্রমাণ হাজির করতে না পারা। কারণ, যাদেরকে নাস্তিক হিসেবে ভিকটিম বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এরা তো আসলে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে আচার-আচরণে এমন এক অগ্রবর্তী গোষ্ঠি যারা আসলে কোন ফালতু বাগাড়ম্বরে জড়ায় না। তাদের মনে মননে মেধায় থাকে সাহিত্য সংস্কৃতি বিজ্ঞান দর্শন নন্দনতত্ত্ব রাষ্ট্রনীতি সমাজনীতির মতো এসব অসংখ্য আবশ্যিক বিষয়ের আলোকোজ্জ্বল উদ্ভাসন, তাদের বক্তব্যে থাকে তথ্য ও যুক্তির শাণিত শৃঙ্খলা, হৃদয়ে চিরায়ত মানবিক চেতনার অফুরন্ত উদ্ভাস। সমাজ সভ্যতাকে এগিয়ে নেয়ার এই প্রজন্ম সারথীরা সমাজে কখনো কোথাও কোন অহেতুক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন এমন নজির কোথাও কোনোকালে সৃষ্টি হয়নি বা আদৌ হবে এটা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য হয় না। বাস্তবের মাটিই যাদের সৃজনশীল সমকালীন জ্ঞানরসে সিঞ্চিত হয়ে উর্বর থেকে উর্বরতর হয়ে উঠে, তাদেরকে কী দিয়ে প্রতিহত করবে ওরা ! মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা দিয়ে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে মানবিক উপায়ে প্রতিহত করার কোন উপায় কি আছে ? বরং আইনের সমতার দৃষ্টিকে তীক্ষ্ণ করলে বাস্তবের মাটি আসলে তাদের জন্যেই বুমেরাং হয়ে দেখা দেবে, যারা বিভিন্ন ধর্মীয় জলসা বা মাহফিলের নামে বিধর্মী বা ভিন্নমতাবলম্বীদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও উপাচারকে আপত্তিকর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কটাক্ষ বিদ্রূপ বা অরুচিকর আক্রমণ করে থাকেন, নিরপেক্ষ আইনের চোখে মূলত তাঁরাই উল্টো অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হতে পারেন। এ ব্যাপারে কারো সন্দেহ থাকলে নমুনা হিসেবে মাওলানা সাঈদীর বিভিন্ন ওয়াজের রেকর্ডগুলো বাজিয়ে শুনে নিতে পারেন। এ প্রেক্ষাপটে অন্য ধর্মাবলম্বীদের দিক থেকে এরকম সমান্তরাল কিছু কি আদৌ কল্পনাও করা যায় ! বরং ভিন্নমতাবলম্বী সংখ্যালঘুদের নাজেহাল, বসতি মন্দির দেবতা প্রতিমা ভাঙচুর করা, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে অমানবিক তাণ্ডব চালানোর যে দুর্বৃত্ত নজির এই ভূখণ্ডে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে এগুলো তো সেইসব বিতর্কিত ধর্মীয় জলসারই জেহাদি জোশ মাত্র ! যদি বলা হয় তাঁদের সেই জেহাদি জোশকে আরো প্রলম্বিত ও বিস্তৃত করার নিরাপদ কূটকৌশলই হলো ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমকে বিতর্কিত করার এই অপচেষ্টা, তা কি ভুল বলা হবে ? কারণ, ব্লগ নিয়ে সর্বসাধারণে অস্পষ্টতা বা প্রয়োজনীয় ধারণা না থাকার কারণে অপচেষ্টাকারীদের মধ্যে এখানে এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মারার ফন্দি-ফিকির রয়েছে বলেই ধারণা করা যায়।
.
(৩)
অনেকেই বলছেন যে, মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণাদুষ্ট অশিক্ষিত অল্পশিক্ষিত যারা এখন হঠাৎ করে ব্লগের বিরুদ্ধে বুঝে-না-বুঝে উঠেপড়ে লেগেছেন এবং ব্লগাররা সবাই নাস্তিক রব তুলে খড়্গহস্ত হয়ে উঠেছেন, তারা আদৌ ব্লগ কী জিনিস সেটা কি বোঝেন ? এ প্রশ্নে শতভাগ সহমত পোষণ করেই বলতে হয়, এরা ব্লগ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ হলেও তাদেরকে যারা পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে যাচ্ছেতাইভাবে নাচাচ্ছেন সেই কূটকৌশলিরা ঠিকই জানেন যে ব্লগ বা অনলাইন প্ল্যাটফরম কী এবং এর শক্তি কোথায়। তারা খুব ভালো করেই জানে যে, একইসাথে পরস্পরবিরোধী দুটি বিষয় সত্য হতে না-পারার মতোই যেকোনো অগ্রবর্তী জ্ঞান পূর্ববর্তী জ্ঞানকে অসার প্রমাণ করে। ইদানিং গত কয়েকবছর যাবৎ জ্ঞানের অগ্রবর্তী প্রযুক্তি-মাধ্যম হিসেবে ব্লগের আবির্ভাব ঘটায় তারা এটাও জানে যে-
১)    ব্লগ হচ্ছে দেশ-কালের সীমানাহীন সেই উন্মুক্ত অসীম মাধ্যম যেখানে অবারিত জ্ঞানচর্চার অবাধ্য রথটাকে কেউ চাইলেও থামিয়ে রাখতে পারে না। এর মাধ্যমে সমসাময়িক জ্ঞান-বিজ্ঞানের নিত্যনতুন অভিঘাতে জারিত হয়ে ব্যক্তির মেধা মনন চেতনা ক্রমেই শানিত হয়ে প্রাচীন অবৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণা থেকে মুক্তির পথটাকে সহজেই খুঁজে নেয়া সম্ভব।
২)    ব্লগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হওয়া সেই আপডেটেড মাধ্যম, যেখানে ব্যক্তি তার চাওয়া অনুযায়ী অন্তর্জালের অচিন্ত্যনীয় সুবিশাল জ্ঞানভান্ডার থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়ের তথ্যপ্রবাহটি সহজেই খুঁজে নিতে পারে। ফলে নিজস্ব ঐতিহ্য ও সত্যনিষ্ঠ ইতিহাসের মুখোমুখি হয়ে নিজেকে নতুন করে চিনে নেয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। এতে তার চেতনাবোধ ধীরে ধীরে পল্লবিত হয়ে আত্মপরিচয়ে বলীয়ান হয়ে উঠতে পারে। সত্য উজ্জ্বল আলোকবর্তী হয়ে ওঠলে ভন্ডামির অসত্য অন্ধকার নির্মূল হয়ে যাবে।
৩)    ব্লগ হচ্ছে সেই স্বাধীন মাধ্যম যেখানে ব্যক্তি তার নিজস্ব চিন্তা, মতামত ও বক্তব্য খুব সহজে অন্যের সহায়তা ছাড়াই সরাসরি প্রকাশ ও প্রচার করতে পারে, যা অন্য কোন মাধ্যমে কখনোই সম্ভব নয়। ফলে উদারনৈতিক বিশাল জনগোষ্ঠি তাঁদের আপাত ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে এসে সামষ্টিক চেতনার আলোকিত বন্ধনে সম্মিলিত হতে পারে, যা সংকীর্ণ আবদ্ধ চিন্তাচ্ছন্নবাসীদের জন্য মাথাব্যথার কারণ।
৪)    ব্লগ হচ্ছে সেই মাধ্যম যেখানে লেখক ও পাঠক তাৎক্ষণিক মিথষ্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে পারস্পরিক ভাবনা-চিন্তাগুলো প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ের মাধ্যমে যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের সমান সুযোগ পায়। ফলে সৃজনশীল চিন্তাচেতনা বিকশিত হওয়ার অনিবার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সমমনা সমচিন্তাবলম্বীদের মধ্যে একধরনের ঐক্য ও একাত্মবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়। যা অচলায়তনপন্থীদের জন্য দুঃশ্চিন্তার কারণ।
৫)    একইভাবে ব্লগ হচ্ছে সেই সদাজাগ্রত মাধ্যম যেখানে যুক্তিহীন মিথ্যা কাল্পনিক ও অবাস্তব ধ্যান-ধারণা আকীর্ণ বানোয়াট তথ্য-উপাত্ত খুব সহজেই প্রকৃত তথ্য ও সত্য উপাস্থপনের মাধ্যমে যখন-তখন প্রতিরোধের মুখে পড়ে প্রত্যাখ্যাত হবার আশঙ্কা থাকে। ফলে ফায়দাবাজ গুজব সৃষ্টিকারীরা অশুভ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।
.
এভাবে ব্লগ কী এবং এর আরো বহু অসাধারণ শক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বলেই জঘন্য অপচেষ্টা হিসেবে সেই অশুভশক্তিটা এই অদম্য অনলাইন মাধ্যমকে থামিয়ে দেয়ার অনৈতিক মানসিকতা নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষি, মানুষের উন্মুক্ত জ্ঞান-জিজ্ঞাসাকে কখনো অবরুদ্ধ করে রাখা যায় নি, রাখা যায় না। আর তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান সীমাহীন শক্তিকে রুখে দেবে এমন বাতুল ভাবনা কোন সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তাসম্পন্ন মানুষের মনে আসতে পারে কি ? তবু আমাদের সমাজে সেরকম অসুস্থ মানুষের যে এখনো অভাব ঘটেনি তা বর্তমান হালহকিকত দেখেই বোঝা যায়। এরা চিরায়ত মানবতার শত্রু বলেই তাদের অপচেষ্টা থেমে নেই। আর এই অপচেষ্টার সর্বশেষ নিদর্শন হলো এই আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির যুগে নতুন করে একটি মধ্যযুগীয় অমানবিক সাম্প্রদায়িক ধারণার আমদানি, ‘নাস্তিকতা’। ভাবতে খুব আশ্চর্য লাগে, আধুনিক মানব সভ্যতা যখন পৃথিবী নামক গ্রহটি ছাড়িয়ে একে একে মহাজাগতিক বিপুল রহস্য উন্মোচনে দারুণভাবে ব্যস্ত, সে সময়ে আমরা কিনা অনলাইন নামক আধুনিক জ্ঞানমাধ্যমকে প্রতিহত করতে একটি প্রাচীন-মধ্যযুগীয় ধারণা আমদানি করে নিজেদেরকে হাস্যকরভাবে পেছনের দিকে টেনে ধরছি। প্রকৃতপক্ষে গোটা বিশ্বের কাছে আমরা আসলে নিজেদেরকে একটি অগ্রসরবিমুখ আদিম চিন্তাচেতনার অমানবিক ধারক হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে যাচ্ছি ! আর এ কাফেলায় যুক্ত হয়েছে শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে রাখা একটা ধর্মভীরু ও ধর্মোন্মাদ গোষ্ঠির সাথে কিছু ভন্ড রাজনীতিক এবং স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তি খুইয়ে নাঙা হওয়া কিছু নষ্ট ভ্রষ্ট জ্ঞানপাপী বুদ্ধিজীবী।
.
এই কুচক্রী জ্ঞানপাপীরা সেই ধর্মভীরু জনগোষ্ঠিকে দুরভিসন্ধিমূলক এরকম ধারণা দিচ্ছে যে, ব্লগ বুঝি একটি পত্রিকা জাতীয় কিছু যেখানে ব্লগাররা ধর্মকে নির্বিচার অবমাননা করে লেখালেখির মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অতএব ব্লগ মানেই ভয়ঙ্কর সমাজবিরোধী ধর্মবিরোধী নাস্তিকদের আখড়া, এটাকে প্রতিহত করা ছাড়া ধর্ম রক্ষার আর কোন উপায় নেই। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে একটি নিরীহ ধর্মভীরু জনগোষ্ঠিকে অপ্রতিরোধ্য ধর্মোন্মাদে পরিণত করার এই জঘন্য ইন্ধনকারীরাই যে বস্তুত অধার্মিক ও ঘৃণ্য ধর্মব্যবসায়ী, তা সচেতন মহল মাত্রই জানলেও কিছুসব অসচেতন ব্যক্তি, যাঁরা শিক্ষাদীক্ষায় চলনসই হলেও প্রযুক্তি-সচেতন নন, চিলে কান নিয়েছে শুনেই চিলের পেছনে দৌড়ানো শুরু করে দিয়ে সমস্যার আগুনে ঘি ঢালছেন অজান্তেই। অথচ একবারও কানে হাত দিয়ে যাচাই করে দেখছেন না, কানটা আদৌ চিলে নিলো কিনা।
তাদের জন্য আমাদের বক্তব্য হলো, ব্লগ হচ্ছে দুনিয়াব্যাপী এরকমই একটি কমন অনলাইন মাধ্যম যার মধ্যে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিগত বা কমিউনিটি ব্লগ রয়েছে। প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে লক্ষ-কোটি লোক ব্যক্তিগত ডায়েরির মতোই কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযুক্ত হয়ে লক্ষ-কোটি লেখা লিখছেন এই ব্লগ বা অনলাইন মাধ্যমে। কোথায় কখন কে কিভাবে তার নিজ ব্লগে একটি অবমাননাকর লেখা লিখে ফেললো, তা দিয়ে কি গোটা ব্লগ বা অনলাইন মাধ্যমকে দায়ী করা যাবে ? সৌদী আরবে বসে কোন এক ব্যক্তি ভুয়া নামে কিংবা অন্য কোন পরিচিত ব্যক্তির নামে একটি ব্লগ বা ফেসবুক পেজ খোলে তাতে কাউকে উদ্দেশ্যমূলক গালাগালি বা অবমাননা করে কিছু লিখলে কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কোথাও একটি আপত্তিকর কমেন্ট করে বসলে তার দায় কে নেবে ? অথবা এজন্য কি অন্য লক্ষ-লক্ষ ব্লগারকে দায়ী করা যাবে ? না কি ব্লগ মাধ্যমকে দায়ী করা যাবে ! এ দায় তো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির, যিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তা করছেন ! যারা ভাবছেন ব্লগ বুঝি একটি পত্রিকার মতো, তারা সম্পূর্ণই ভুল জানেন বা তাঁদেরকে দূরভিসন্ধিমূলকভাবেই ভুল বোঝানো হচ্ছে। অনলাইন হলো মহাসমুদ্রের চাইতেও বিশাল একটি জিনিস, যা লক্ষ-কোটি পত্র-পত্রিকা, বই, ম্যাগাজিন, ডকুমেন্ট, ছবি, ভিডিও, টিভি ইত্যাদি অনেক অনেক অনেক কিছুর সমাহার। প্রতিনিয়ত এখানে কতো নিত্য-নতুন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে ! ফলে একজনের অপকর্মের দায় লক্ষ-লক্ষ ব্লগারের কাঁধে চাপিয়ে দেয়াটা যে ভয়াবহ অজ্ঞতা কিংবা দুরভিসন্ধিই প্রকাশ করে মাত্র, সেটা আমরা সমাজের সবাই কি বুঝি ?
তাই কাউকে বা একযোগে অনেককে অহেতুক অপবাদ দেয়ার আগে দয়া করে ব্লগ কী তা আগে নিজে জেনে অন্যকে জানাতে হবে। একজন মানুষ চুরি করলে পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষ চোর হয়ে যায় না। কিংবা ঐ চোর যে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের, তার জন্যে সেই গোটা সম্প্রদায় চোর হয়ে যায় না। একজনের অপরাধে সবাইকে অপরাধী করাটাই অধার্মিকতা। কোন বিষয়ে না-জানা অপরাধ নয়, কিন্তু না-জেনে অন্যকে অপরাধী সাব্যস্থ করাটা আইনের দৃষ্টিতে কেবল অপরাধই নয়, ধর্মীয় দৃষ্টিতে মহাপাপের সামিল। এবার ভাবুন, না জেনে আপনি এই পাপ ও অপরাধের দায় নিচ্ছেন কিনা !
.
(৪)
এখন প্রশ্ন আসে, কেন এ মধ্যযুগীয় নাস্তিক্য ধারণার আমদানি ? এর সাথে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর প্রজন্ম ব্লগার কিংবা যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সম্পর্ক কোথায় ? ধর্মান্ধ যুদ্ধাপরাধী মৌলবাদী গোষ্ঠির জেহাদি গর্জন আর আমাদেরকে নিদারুণভাবে হতাশ করা দায়িত্বশীল বিরোধীদলীয় নেত্রীর সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং তার সাথে ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় নতজানু উদ্যোগ পর্যালোচনা করলে বিষয়টিকে আর হালকাভাবে নেয়ার কোন অবকাশ থাকে না। হঠাৎ করে নাস্তিকরা রাষ্ট্রের জন্য কী এমন ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর হয়ে উঠলো যে, এরা প্রত্যেকেই নাস্তিক দমনে একতাবদ্ধ ! এই নাস্তিকের সংজ্ঞা কী ? দার্শনিক ধারণায় নাস্তিক বলতে যাই থাক, প্রচলিত অর্থে নাস্তিক হচ্ছে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে স্বীকার করে না। অর্থাৎ সম্পূর্ণতই ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, যার সাথে সরাসরি ইসলাম ধর্মকেই সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ভাবতেই বিব্রত হতে হয় যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির নিরাপত্তার সাথে ঈশ্বর নামক সত্তার থাকা না-থাকার বিষয়টির নয়, স্পষ্টতই ইসলাম ধর্মমতে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয় সম্পৃক্ত হয়ে গেছে আজ ! বিষয়টি আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে যায় যখন আমাদের মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী যিনি কিনা দু-দু’বার এদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাঁরই মুখে যখন ‘বিধর্মী’ ও ‘নাস্তিক’ শব্দ দুটোকে একার্থেই প্রকাশ করতে দেখি। ফলে আমাদের নতজানু সরকার তথা ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগও তড়িঘড়ি করে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে ফেললেন এই দমনযোগ্য নাস্তিকদেরকে চিহ্নিত করতে ! সম্ভবত সরকার নিজে যে নাস্তিক নয় তা প্রমাণ করতেই হয়তো এই দ্রুত উদ্যোগ। কিন্তু তাতেও কি ছালা বাঁচানো গেলো ! যদি বিরোধীদলীয় নেত্রীর কথাকেই এতো প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে আর কমিটি গঠন করা কেনো ! বিরোধীদলীয় নেত্রী তো গত ১৬ মার্চ মানিকগঞ্জের জনসভায় এই সরকারকেও নাস্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বললেন ! এখন সরে গেলেই তো ল্যাঠা চুকে যায় ! বাকি কাজটুকু বেগম জিয়া ক্ষমতায় এসেই নির্দ্বিধায় সেরে ফেলতে পারবেন।
.
নাস্তিক খোঁজার বিষয়টিকে মাথায় রেখে প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া হিসেবে দার্শনিক প্রপঞ্চ বিশ্লেষণ করে কে নাস্তিক আর কে নাস্তিক নয় তা হয়তো চিহ্নিত করার একটা দার্শনিক প্রয়াস নেয়া যেতো। যেমন-
.
প্রথমত, যাদেরকে আমরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বলে জানি তারা অনিবার্যভাবেই নাস্তিক গোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত। কারণ বৌদ্ধরা কোন ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না। বৌদ্ধমতের প্রচারক ভগবান গৌতম বুদ্ধ নিজে ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন না এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিপক্ষে তার যুক্তিপূর্ণ অবস্থান জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য ভারতীয় দর্শনই এর সাক্ষ্য দেবে। ভারতীয় দর্শনে সরাসরি নাস্তিক দর্শন হিসেবে চিহ্নিত অন্যতম দর্শন হলো বৌদ্ধ দর্শন। বৌদ্ধরা গৌতম বুদ্ধকে ভগবান বলে সম্বোধন করেন তাঁকে অসীম শ্রদ্ধার আসনে রেখে, ঈশ্বর হিসেবে নয়।
.
দ্বিতীয়ত, প্রচুর বৈচিত্র্য ও বিভ্রান্তিকর বৈদিক সংস্কৃতির অনুসারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আস্তিক-নাস্তিক নিরূপণ করাটা খুব জটিল একটি প্রক্রিয়া। কেননা হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এই সম্প্রদায় যেসব দর্শনকে একইসাথে ধারণ করে থাকে এর প্রত্যেকটি একটি অপরটির প্রায় পরস্পর সাংঘর্ষিকই শুধু নয়, কোনোটি আস্তিক দর্শন হয়েও নিরীশ্বরবাদী, আবার কোনোটি ঈশ্বরবাদী হয়েও নাস্তিক দর্শন। এজন্যেই হিন্দু ধর্মে প্রাচীন ব্রাহ্মণ্যবাদী চতুর্বর্ণ প্রথার মাধ্যমে বিভিন্ন নিম্নবর্গীয় গোষ্ঠিকে দমন-পীড়নের বহুবিধ ইতিহাস থাকলেও আস্তিক-নাস্তিক বিভাজনের জটিল প্রক্রিয়ায় ধর্ম থেকে কাউকে বিতাড়নের ইতিহাস নেই। অর্থাৎ প্রাচীন বৈদিক সংস্কৃতির উত্তরাধিকার হিসেবে হিন্দু সংস্কৃতিতে আস্তিক-নাস্তিক অবস্থানে দার্শনিক তীব্র মতবিরোধ থাকলেও এটাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়না কখনো। কিংবা কাউকে এমন ক্ষমতা দেয়া হয়নি ধর্ম থেকে খারিজ করে দেয়ার।
.
একইভাবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী যেমন যীশুখ্রিস্টের ঈশ্বরপুত্র হওয়ার ধারণার সাথে আস্তিক্য-নাস্তিক্যের প্রসঙ্গ কিংবা বাংলাদেশের অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির আদিম টোটেমজাত দেবতা-অপদেবতা বিশ্বাসের সাথে আস্তিক্য-নাস্তিক্য ধারণার দার্শনিক পর্যালোচনা করার যথেষ্ট অবকাশ থাকলেও তার আর প্রয়োজন পড়ে না। কেননা সমস্ত দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির গালে চড় মেরে অজ্ঞাত ক্ষমতায় প্রাপ্ত ফতোয়ার মাধ্যমে মহান নেত্রী বেগম জিয়া একবাক্যে বিধর্মী ও নাস্তিকদেরকে এক পঙক্তিতে চিহ্নিত করে দিয়ে বিষয়টির খুব সহজ একটি সুরাহা টেনে দিয়েছেন। তাই বিস্ময়ের সাথে খেয়াল করি, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ঘাতক জামাত-শিবির আর তার সহযোগী ও কিছু তাবেদার ছাড়া গোটা দেশটাই কী করে হঠাৎ নাস্তিক হয়ে গেলো !
.
পুঁথিগত জ্ঞান যে সবসময় কার্যকর হয় না তা এই দুহাজার তেরতে এসে বিলক্ষণ বুঝতে পারি আজ। আগে জানতাম যে, হঠাৎ করেই কেউ নাস্তিক হতে পারে না, এটি একটি জীবনবাহী প্রক্রিয়া। ক্রমাগত মুক্ত প্রশ্ন ও এর উত্তর সন্ধানের মধ্য দিয়ে পর্যায়ক্রমিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোককে যুক্তিশীল বিশ্লেষণে জারিত করে মেধা ও মননে ধারণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে একটু একটু করে নাস্তিক হয়ে ওঠতে হয়। কিন্তু দু’হাজার তের’র উত্তাল মার্চে এসে জানলাম, কেউ নাস্তিক হয় না, তাকে নাস্তিক বানানো হয়। আর যারা কাউকে নাস্তিক বানায় তাদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত বা শিক্ষিত হওয়ার দরকার পড়ে না, অনৈতিক প্রভাব ও উদ্ধত ক্ষমতা থাকলেই যথেষ্ট ! জগতে কতো কিছু যে শেখার আছে !!
(১৭-০৩-২০১৩)

No comments: