Friday, March 3, 2017

বেদান্তদর্শন-ব্রহ্মবেদান্ত-১৪ : বাদরায়ণের দার্শনিক মত- আত্মা ব্রহ্ম নয়, ব্রহ্মেরই অংশ



| বেদান্তদর্শন-ব্রহ্মবেদান্ত-১৪ : বাদরায়ণের দার্শনিক মত- আত্মা ব্রহ্ম নয়, ব্রহ্মেরই অংশ |
রণদীপম বসু
(গ) আত্মা ব্রহ্ম নয়, ব্রহ্মেরই অংশ :
জীবাত্মা ব্রহ্মের অংশ, উপনিষদ সম্মত এই বিচার বাদরায়ণ কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে। তাই বেদান্তসূত্রে বাদরায়ণ বলেন-


‘অংশো নানাব্যপদেশাৎ, অন্যথা চাপি দাশকিতবাদিত্বমধীয়ত একে’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৪৩)।।
ভাবার্থ : জীব পরমাত্মার অংশ, কারণ শ্রুতিও জীব এবং ব্রহ্মের ভেদ সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন; আবার অভেদও উপদেশ করেছেন। অতএব জীব ও ব্রহ্মের ভেদাভেদ সম্বন্ধ স্থিরীকৃত হয় (ব্রঃ-২/৩/৪৩)।
যেমন এ বিষয়ে বৃহদারণ্যক উপনিষদের শ্রুতি উপদেশে বলা হয়েছে-
‘…আত্মা বা অরে দ্রষ্টব্যঃ শ্রোতাব্যো মন্তব্যো নিদিধ্যাসিতব্যো মৈত্রেয়ী, আত্মনো বা অরে দর্শনেন শ্রবণেন মত্যা বিজ্ঞানেন ইদং সর্বং বিদিতম্’।। (বৃহদারণ্যক-২/৪/৫)।।
অর্থাৎ : মৈত্রেয়ী, সর্বত্রই এই আত্মা। সকলকে ব্যাপ্ত করে রয়েছেন একই আত্মা। সেই আত্মাকেই দর্শন করতে হবে, শ্রবণ করতে হবে, মনন করতে হবে, নিদিধ্যাসন বা ধ্যান করতে হবে। এই আত্মার দর্শন, শ্রবণ, মনন, নিদিধ্যাসন ঠিকমতো প্রত্যয়ের সঙ্গে করতে পারলেই তার সব জানা হয়ে যাবে। অমৃতের মধুমাখা অনুভূতি নিয়ে অখণ্ড-সত্তায় তার প্রাণ ভরে উঠবে। আত্মজ্ঞান যার হয়, সবকিছুর সঙ্গে যে একাত্ম হতে পারে, তার কাছ থেকে কি অমৃত দূরে থাকতে পারে (বৃহদারণ্যক-২/৪/৫) ?
ভেদের মধ্যে এই অভেদের উপলব্ধির পাশাপাশি ছান্দোগ্য উপনিষদের সেই অন্যতম শ্রুতিটিও স্মরণ করা যেতে পারে-
‘তাবানস্য মহিমা ততো জ্যায়াংশ্চ পুরুষঃ।
পাদোহস্য সর্বা ভূতানি ত্রিপাদস্যামৃতং দিবি ইতি’।। (ছান্দোগ্য-৩/১২/৬)।।
অর্থাৎ : এই গায়ত্রী-ব্রহ্মের মহিমা যে পরিমাণ, সর্বব্যাপী পূর্ণব্রহ্ম পুরুষের মহিমা এর থেকেও ব্যাপক ও মহত্তর। সর্বভূত এই পুরুষের এক পাদ মাত্র। অবশিষ্ট তিন পাদ স্বর্গে অমৃতরূপে প্রতিষ্ঠিত (ছান্দোগ্য-৩/১২/৬)।
এখানে ভূত বলতে জীবকেই বোঝানো হয়েছে। এবং এই ভূতময় জীবসমূহকে পরমেশ্বরের একপাদ বা একটি অংশ বলা হয়েছে। একইভাবে জীবাত্মাকে পরমাত্মার অংশ হিসেবে বর্ণিত স্মৃতিশাস্ত্রেরও উদাহরণ রয়েছে, যেমন শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার পুরুষোত্তমযোগে বলা হয়েছে-
‘মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ।
মনঃষষ্ঠানীন্দ্রিয়াণি প্রকৃতিস্থানি কর্ষতি’।। (ভগবদ্গীতা-১৫/৭)।।
‘শরীরং যদবাপ্নোতি যচ্চাপ্যুৎক্রামতীশ্বরঃ।
গৃহীত্বৈতানি সংযাতি বায়ুর্গন্ধানিবাশয়াৎ’।। (ভগবদ্গীতা-১৫/৮)।।
অর্থাৎ :
সংসারে জীব আমারই সনাতন অংশ। দেহাদিসংঘাতের কর্তা জীব যখন শরীর থেকে উৎক্রমণ করে, তখন পঞ্চেন্দ্রিয় ও মনকে আকর্ষণ করে (গীতা-১৫/৭)।   বায়ু যেভাবে পুষ্পাদি হতে গন্ধ আহরণ করে, জীব সেভাবে শরীরান্তরগ্রহণকালে পূর্বদেহ থেকে মন ইন্দ্রিয়াদি সংস্কার সঙ্গে নিয়ে যায় (গীতা-১৫/৮)।
অতএব বেদান্তসূত্রে সূত্রকার বাদরায়ণের সিদ্ধান্ত হলো-
‘মন্ত্রবর্ণাচ্চ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৪৪)।।
‘অপি চ স্মর্যতে’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৪৫)।।
ভাবার্থ : শ্রুতিমন্ত্র থেকেও জীব যে পরমেশ্বরের অংশ তা প্রমাণিত হয় (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৪৪)।  স্মৃতিশাস্ত্রও তাই বলেন (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৪৫)।
কিন্তু জীব যদি পরমেশ্বরের অংশই হন, তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, পরমেশ্বরও জীবেরই মতো সুখ-দুঃখের অনুভব করে থাকেন- যেমন কোন বস্ত্রের সূতোগুলি যদি মলিন হয়, তবে বস্ত্রটিও মলিন হবে। এই আপত্তি খণ্ডন করতে গিয়ে সূত্রকার বলেন, পরমেশ্বর জীবের ন্যায় সুখ-দুঃখ অনুভব করেন না। কারণ-
‘প্রকাশাদিবন্নৈবং পরঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৪৬)।।
‘আভাস এব চ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৫০)।।
ভাবার্থ : জীব ব্রহ্মের অভিন্ন অংশ হলেও অংশ-রূপ জীবের সুখ-দুঃখাদি ব্রহ্মকে বিচলিত (দূষিত) করতে পারে না- যেমন সূর্যের কিরণ অপবিত্র বস্তুতে স্পৃষ্ট হলেও দূষিত হয় না (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৪৬)।   এবং জীব পরমাত্মার একটি আভাস বা প্রতিবিম্ব মাত্র। তাই জীবের সুখ-দুঃখ পরমাত্মাকে স্পর্শ করে না (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৫০)।
শাস্ত্রানুযায়ী, অবিদ্যাহেতু জীব নিজেকে দেহ এবং মনের সঙ্গে একীভূত করে নেয় বলেই সুখ-দুঃখ অনুভব করে থাকে। জলে যেমন প্রতিবিম্বিত সূর্যকে জলের তরঙ্গের কম্পনের সঙ্গে কম্পিত হচ্ছে বলে মনে হয়- কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে তার কোন বিকার হয় না, ঠিক তেমনি পরমেশ্বরও তাঁর কল্পিত অংশ জীবের সুখ-দুঃখ অনুভবের দ্বারা বিকারপ্রাপ্ত হয় না। ‘জীব ও পরমাত্মা এই দুয়ের মধ্যে পরমাত্মা হলেন শাশ্বত এবং নির্গুণ। পদ্মপত্রে জলের ন্যায় ইনি কর্মফলের দ্বারা লিপ্ত হন না…।’ এরকম সাক্ষ্য ‘স্মৃতিশাস্ত্রেও রয়েছে’ (‘স্মরন্তি চ’- ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৪৭)। যেমন শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় জ্ঞানবিজ্ঞানযোগে শ্রীভগবানের উক্তিতে বলা হয়েছে-
‘যে চৈব সাত্ত্বিকা ভাবা রাজসাস্তামসাশ্চ যে।
মত্ত এবেতি তান্ বিদ্ধি ন ত্বহং তেষু তে ময়ি’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৭/১২)।।
অর্থাৎ : প্রাণিদের যে সকল সাত্ত্বিক (শমদমাদি), রাজসিক (হর্ষাদি) ও তামসিক (শোক-মোহাদি) ভাব স্বকর্মফলে উৎপন্ন হয়, তা আমার থেকেই উৎপন্ন জানবে। যদিও তারা আমার থেকে উৎপন্ন, তবুও জীবের ন্যায় আমি সেসব ভাবের অধীন নই; কিন্তু সেসব ভাব আমার অধীন (বশীভূত) (গীতা-৭/১২)।
আবার বিভিন্ন শ্রুতিশাস্ত্রেও ব্রহ্মের স্বরূপ বর্ণনায় ইতঃপূর্বে দেখেছি যে- ‘তিনি সর্বকর্মা, সর্বকাম, সর্বগন্ধ ও সর্বরস’ (ছান্দোগ্য-৩/১৪/২); ‘ইনি অস্থূল, অনণু, অহ্রস্ব, অদীর্ঘ ইত্যাদি’ (বৃহদারণ্যক-৩/৮/৮)। কিংবা কঠ-উপনিষদের শ্রুতিতে যিনি-
‘অশব্দম্ অস্পর্শম্ অরূপম্ অব্যয়ম্ তথা অরসম্ নিত্যম্ অগন্ধবৎ চ যৎ।
অনাদি অনন্তম্ মহতঃ পরম্ ধ্রুবম্ নিচায্য তন্মৃত্যুমুখাৎ প্রমুচ্যতে’।। (কঠোপনিষদ-১/৩/১৫)।।
অর্থাৎ : যা শব্দহীন, স্পর্শহীন, রূপহীন, গন্ধহীন, যা শাশ্বত ও অবিনাশী, অনাদি ও অনন্ত, যা হিরণ্যগর্ভের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এবং নিত্যবস্তু- সেই আত্মাকে জেনে মানুষ মৃত্যুকে অতিক্রম করে (কঠ-১/৩/১৫)।
এবং এসব শ্রুতি-প্রামাণ্য মেনে ব্রহ্মের স্বরূপ বর্ণনায় বাদরায়ণও স্পষ্টতই বলেছেন যে-
‘অরূপবদেব হি, তৎপ্রধানত্বাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/২/১৪)।।
‘প্রকাশবচ্চাবৈয়র্থ্যাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/২/১৫)।।
‘ন স্থানতোহপি পরস্যোভয়লিঙ্গম্, সর্বত্র হি’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/২/১১)।।
ভাবার্থ : ব্রহ্ম সুনিশ্চিতভাবেই নিরাকার। কারণ সকল শ্রুতিই ব্রহ্মের নিরাকারত্বকেই প্রতিষ্ঠা করতে চান (ব্রহ্মসূত্র-৩/২/১৪)।   শাস্ত্রে যে ব্রহ্মের সাকারভাবের উপদেশ আছে তা নিরর্থক নয়। নিরাকার আলোক যেমন সাকার বস্তুর সান্নিধ্যে এসে আকার প্রাপ্ত হয়, সেভাবেই নিরাকার ব্রহ্মও উপাধিযুক্ত জীবের সান্নিধ্যে এসে সাকার হন (ব্রহ্মসূত্র-৩/২/১৫)।   জীব সর্বাবস্থায় পরব্রহ্মের সাথে মিলিত হয়ে থাকলেও তার কোন দোষ (বিকার) ব্রহ্মে সঞ্চারিত হয় না, তা শ্রুতিপ্রমাণে অবগত হওয়া যায় (ব্রহ্মসূত্র-৩/২/১১)।
অতএব এটা প্রমাণিত যে, জীবাত্মা ব্রহ্ম নয়। কিন্তু এখানে আবার প্রশ্ন উঠতে পারে যে, শুদ্ধ ব্রহ্মের অংশ হওয়ায় আত্মাও তো শুদ্ধ, অতএব তার পাপ-পুণ্য সম্বন্ধীয় বিধিনিষেধের আর কী আবশ্যকতা ? এই প্রশ্নের সমাধানে দৈহিক ব্যাপারে ছ্যুৎ-অছ্যুৎ বিষয়ে বাদরায়ণের কট্টর পক্ষপাতিত্ব চোখে পড়ে। কেননা তিনি সমাধান করেছেন যে, দেহ-সম্বন্ধে বিধিনিষেধের আবশ্যকতা আছে, যেমন অগ্নি এক হলেও অগ্নিহোত্রী ব্রাহ্মণের গৃহের অগ্নি যেমন গ্রাহ্য, শ্মশান বহ্নি তেমন ত্যাজ্য-
‘অনুজ্ঞাপরিহারৌ দেহসম্বন্ধাজ্জ্যোতিরাদিবৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৪৮)।।
ভাবার্থ : দেহের সাথে সম্পর্ক থাকায় জীবের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ প্রযোজ্য, যেমন জ্যোতি ইত্যাদির দৃষ্টান্তে ত্যাজ্য-গ্রাহ্য আছে (শ্মশানাগ্নি বর্জনীয়, যজ্ঞাগ্নি গ্রহণীয়) (ব্রঃ-২/৩/৪৮)।
পরমাত্মার সঙ্গে জীবের অভিন্নতাহেতু কর্মফল বিষয়ে এখানে একটি সংশয় দেখা দিতে পারে যে, প্রত্যেক জীবের কৃত কর্মফল অন্যান্য জীবও ভোগ করতে পারে। এই সংশয় দূর করতে বাদরায়ণ বলেন-
‘অসন্ততেশ্চাব্যতিকরঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৪৯)।।
ভাবার্থ : জীব ব্রহ্মের অংশ হলেও ভিন্ন ভিন্ন শরীরে তা পৃথক পৃথক। তাই এক জীবের কর্মফল অন্য জীবে সংক্রামিত হতে পারে না (ব্রঃ-২/৩/৪৯)।
অর্থাৎ, জীবাত্মা বলতে বোঝায় কোন একটি বিশেষ দেহ, মন ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আত্মা এবং যেহেতু এই দেহগুলি পরস্পর থেকে ভিন্ন, একের মধ্যে অন্যটি অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই জীবাত্মাগুলিও পরস্পর ভিন্ন। সুতরাং একে অন্যের কর্মফল ভোগ করবে এমন সংশয় থাকা সম্ভব নয়। সাংখ্যবাদী, বৈশেষিক ও নৈয়ায়িক যারা আত্মার বহুত্বকে স্বীকার করেন- আবার সকল আত্মাকেই সর্বব্যাপী বলে মনে করেন, অদৃষ্ট বা কর্মফল ভোগের ব্যাপারে তাদের সংশয় থাকতেই পারে। তাই তাদের সম্পর্কে বাদরায়ণের অভিমত হলো-
‘অদৃষ্টানিয়মাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৫১)।।
ভাবার্থ : অদৃষ্ট পদার্থের স্থির কোন স্থিতি নেই। যাঁরা জীবাত্মার বহুত্বের সঙ্গে সকল জীবাত্মারই সর্বব্যাপিত্বে বিশ্বাস করেন- তাঁদের নানা সংশয় থাকতে পারে (ব্রঃ-২/৩/৫১)।
যদিও শরীর শরীরী-ভাব থেকেই বাদরায়ণ আত্মাকে ব্রহ্মের অন্তর্গত অভিন্ন অংশ বলে মেনেছেন, তথাপি আত্মা ও ব্রহ্মের স্বরূপের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রাখতে চেয়েছেন। বেদান্তসূত্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জীবাত্মার সাথে পরমাত্মা ব্রহ্মের ভেদের উল্লেখ থেকে বাদরায়ণ বলতে চেয়েছেন যে, ব্রহ্ম জীবের অধিক। যেমন-
‘জগদ্ব্যাপারবর্জম্ প্রকরণাৎ, অসন্নিহিতত্বাচ্চ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৪/৪/১৭)।।
‘ভোগমাত্রসাম্যলিঙ্গাচ্চ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৪/৪/২১)।।
ভাবার্থ : মুক্ত পুরুষ জগৎ সৃষ্ট্যাদি শক্তি ব্যতীত অন্যান্য সর্ববিধ শক্তির অধিকারী হন। সৃষ্টি প্রকরণে ঈশ্বরের উল্লেখ আছে। ঐ প্রকরণে মুক্ত পুরুষের কোন উল্লেখই নেই। মুক্ত পুরুষের ক্ষমতা সসীম (ব্রহ্মসূত্র-৪/৪/১৭)।   শুধু ভোগব্যাপারে মাত্র পরমেশ্বর এবং মুক্ত পুরুষের মধ্যে সাম্যভাব আছে- সর্ব শক্তিমত্তা বিষয়ে নয়। সৃষ্ট্যাদি পরমশক্তির অধিকারী একমাত্র পরমেশ্বর- মুক্ত জীব নয় (ব্রহ্মসূত্র-৪/৪/২১)।
অর্থাৎ, দেহমুক্ত হয়ে জীবাত্মার ব্রহ্মপ্রাপ্তির পর আত্মা যখন স্বরূপে প্রকটিত হয়, সেই মুক্ত হওয়ার পরেও জগৎ সৃষ্টি প্রভৃতির কথা ছেড়ে দিয়ে মাত্র আত্মা ও ব্রহ্মের মধ্যে ভোগের সমানতার কথা বললেও বাদরায়ণ আত্মা ও ব্রহ্মের ঐক্যকে কোন অবস্থাতেই সম্ভব বলে মানেননি। কেননা, নাম এবং রূপের সৃষ্টি পরমেশ্বরেরই কার্য, জীবের কার্য নয়-
‘সংজ্ঞামূর্তিক্লিপ্তিস্তু ত্রিবৃৎকুর্বতঃ, উপদেশাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৪/২০)।।
ভাবার্থ : সৃষ্ট পদার্থের নাম ও রূপ কল্পনা ও ত্রিবিধ কর্তা পরমাত্মারই কার্য, কারণ শাস্ত্রে এমনই বলা আছে (ব্রঃ-২/৪/২০)।

(চলবে…)

[আগের পর্ব : আত্মা কর্তা] [*] [পরের পর্ব : আত্মার সাধন]

No comments: