| যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর…|৩২|
-রণদীপম বসু
…
তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল, ১৯৯৩)
…
তোমার অ্যালবাম থেকে তুলে নেয়া সেই একটিমাত্র ছবি আমার এখনকার সঙ্গি রূপা। দিনরাত কত যে চেয়ে থাকি এই ছবিতে তোমার দিকে, আশ মেটে না। কখনো চেয়ে থাকি অপলক অনেকক্ষণ, কখনো চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দেই তোমার অদ্ভুত সুন্দর মুখখানায়। কখনো বা বুকে চেপে ধরি। শিহরিত সমস্ত শরীরে মনে কি যে করি তোমাকে বুঝাতে পারবো না। বলো তো, তোমাকে দেখলে কেন আমার এমন হয় ? সেই গানটাই মনে পড়ে-
‘দুই নয়নে তোমায় দেখে আশা মেটে না
মনের আশা মেটে না,
হাজার নয়ন দাও না আমায় লক্ষ নয়ন দাও না…।’
বিশ্বাস করো রূপা, তোমার দিকে চেয়ে চেয়ে আমার কি জানি হয়ে যায়; মরে যেতে ইচ্ছে করে ! এতো সুখ আমি সই কী করে বলো ! এতো দুঃখই বা আমি ধরি কিভাবে !
তোমার এই ছবিটা না, আমার দেখা বাকি সব ক’টা ছবিকে হার মানিয়ে দিয়েছে। তাই তো তোমার অ্যালবামটা মাঝে মাঝে হাতের কাছে পেলেও নেড়েচেড়ে একে হার মানানো অন্য কোন ছবি খুঁজে পাই নি বলে দ্বিতীয় কোন ছবি তুলে আনি নি। অবশ্য তোমার কাছে আর ছবি চাইতে গিয়েও চাইতে পারি না। যদি না দাও তাইলে খুব কষ্ট পাবো যে ! এজন্যেই এমন তীব্র ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চাইতে পারি নি এবং পারি না।
আমার কাছে এই কিম্ভুতাকার মুখের ছবি চেয়েছিলে তুমি, এখনো নাই বলে দিতে পারি নি। যা ছিলো সে তো অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। তুমি বিশ্বাস করো নি বলে খুব সঙ্কোচ বোধ করেছিলাম, কষ্ট পেয়েছি। তোমার কাছে আমার ছবি থাকবে এর চেয়ে সুখকর ও যোগ্যতর স্থান পৃথিবীতে আর আছে বলে আমার জানা নেই। আমার ছবিতে তুমি একটি নিবিড় চুমো খেলে এই নশ্বর পৃথিবীতে আমার পরমায়ু যে একশ’ বছর করে বেড়ে যাবে সে কি তুমি জানো ? তাছাড়া আমার ফেলে আসা দিনের ছবিগুলোর কথা নাহয় না-ই বললাম। ইদানিং ছবি তুলতে খুব ভয় হয়। চেহারার যা ছিরি, এমন চেহারা ছবিতে বেঁধে, বলতে সঙ্কোচ হচ্ছে, এই কুৎসীত মুখের দিকে কি বেশিক্ষণ চেয়ে থাকতে পারবে ! শেষটায় এতোটুকুও সৌন্দর্য্য বা কমনীয়তা খুঁজে না পেয়ে যদি তোমার আগ্রহ থেকে আমাকে সরিয়ে দাও, সেই দুর্ভাগ্য আমি সইবো কী করে বলো ? বিনিময়ে আমার বাঁদরমুখো ছবি তুমি চাইতে পারো বলে আমি খুব সাহস করে তোমার ছবি চাইতে পারি না।
এর চেয়ে বরং এই ভালো, ভাববো রূপার কাছে কোন ছবি চাই নি আমি। চাইলে নিশ্চয়ই সে আমাকে ফিরিয়ে দিতো না।
…
(চলবে…)
…
পর্ব:[৩১] [*] [৩৩]
…
…
(চলবে…)
…
পর্ব:[৩১] [*] [৩৩]
No comments:
Post a Comment