Wednesday, July 21, 2010

| যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর…|৩৩|


| যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর…|৩৩|
-রণদীপম বসু

তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল, ১৯৯৩)

একদিন যুবকটি অসুস্থ হয়ে পড়লো। বেশ আগের কথা, যখন-তখন মেয়েটির ওখানে ঢুঁ মারা যার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেলো, হঠাৎ করে তা থেমে গেলো বলে বোধকরি মেয়েটি কী জানি বুঝলো। একেবারে ঔষধ-পথ্যসহ সরাসরি ছেলেটির এখানে হাজির। এমন আশাতীত তাকে দেখে যুবকের রোগযন্ত্রণা জানি না কোথায় গেলো। মেয়েটির সযত্ন শাসনে যুবকের তো কেঁদে ফেলার অবস্থা, কী এক পূর্ণতার আনন্দে !  হতচ্ছাড়া যুবক তার ভবঘুরে ছন্নছাড়া জীবনে এতকাল জেনে এসেছে পৃথিবীতে অনেক কিছুরই মোকাবেলা একা একাই করতে হয়। অথচ এমন সোহাগী স্পর্শে সে কেমন জানি হয়ে গেলো। সেদিনই পাল্টে গেলো তার পৃথিবী। একটা অনন্ত আশ্বাস আর অবলম্বনের অযাচিত অধিকার পেয়ে সেদিন সে মুহূর্তে যুবকের সমস্ত অসহায় নিঃসঙ্গতা খান খান হয়ে গেলো। দৃঢ়চিত্ত যুবক হয়ে গেলো দুর্বল। তার সমস্ত দেহ মন এবং সবকিছুই একটি নারীর কাছে নির্ভরতা পেয়ে পাথর অস্তিত্ব থেকে রক্তমাংসের নমনীয়তায় ফিরে এলো।



রূপা তুমি জানো না, রোগযন্ত্রণায় চির অবহেলার দৃষ্টি অপসারিত হয়ে যুবকটি এখন যন্ত্রণাকাতর হতে শিখলো। এতে ভালো হলো কি মন্দ হলো জানি না, তবে মেয়েটি কাছে না থাকলে যুবকটি যে সামান্য অসুস্থতায়ও খুব অসহায় বোধ করে এই বিদেশ-বিভুঁইয়ে, এতে বোধ করি তার ক্ষতিই হলো। যেকোন কিছুরই মোকাবেলা করতে যেয়ে যুবক অসহায় একাকী যুবক মনে মনে মেয়েটির কাছে সহ্য করার প্রতিরোধ করার শক্তি খোঁজে।

রূপা, মেয়েটি যে যুবকটিকে এমন নারীনির্ভর, সুনির্দিষ্ট নারীনির্ভর করে দিলো, মেয়েটি কাছে না থাকলে তখন যুবকের কী হবে বলতে পারো ? দুঃখ কষ্ট আনন্দ বেদনা একাকী বইবার ক্ষমতা যার লোপ পেলো, একাকীত্বটাই এখন তার বিকল্পহীন ভারী অসহ্য বোঝা নয় কি ?

ভালোবাসা মানুষকে মাঝে মাঝে এমন অসহায় করে দেয়, আগে তো বুঝি নি কখনো। তুমিই বোঝালে রূপা !

(চলবে…)

পর্ব:[৩২] [*] [৩৪]

No comments: