.
| যুদ্ধাপরাধ ও শাহবাগ : হতাশা-মোড়ানো যে স্ট্যাটাসটির জন্য এখন লজ্জিত আমি !
রণদীপম বসু
…
০৫ ফেব্রুয়ারি যথারীতি অফিসে গিয়েছি সকাল ১০টায়। তারপর থেকেই একটা রোমাঞ্চকর অস্থিরতায় অপেক্ষা করছিলাম, কখন মানবতাবিরোধী কুলাঙ্গার অপরাধী কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষণা শুরু হবে ! কাজের ফাঁকে মোবাইলে অনলাইন আপডেট খুঁজছিলাম থেকে থেকে। পৌনে এগারটায় শুরু হলো দীর্ঘ বয়ানের রায়। রহস্যময় বিতর্কিত চরিত্রের সহকর্মীদের মুখ প্রয়োজনাতিরিক্ত নিরব ও থমথমে। ভেতরে ভেতরে আমার প্রস্তুতি কিভাবে এতোদিনের পুষে রাখা বিজয়ানন্দটা যথাযথভাবে প্রকাশ করবো। ফাঁসির রায় শুনবো খুব নিশ্চিত হয়ে আছি।
.
ডুবো ডুবো আনন্দে ফের কাজে ডুবে গেলাম। হঠাৎ হালকা গুঞ্জনে সেইসব সহকর্মীর চেহারায় চাপা উচ্ছ্বাসমুখরতা দেখে থমকে গেলাম, বিষয় কী ! দ্রুত মোবাইলে অনলাইন খোঁজ লাগালাম। শুরুতেই বজ্রপাত ! কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত ছয়টি অভিযোগের পাঁচটিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত, অথচ মাননীয় ট্রাইবুনাল দিয়েছেন সহজ-সরল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ! ফেসবুকে ঢুকে বন্ধুদের স্ট্যাটাসের হতবিহ্বলতায় অঙ্গনটাতে শুরুতে মনে হলো আরেকটা বধ্যভূমির দীর্ঘশ্বাস বইছে। এক দুর্বহ বিষাদে আক্রান্ত বুকটাতে তখন কবরের নিস্তব্ধতা। হাউমাউ করে কাঁদতে চাইলাম, কান্নাও এলো না। অথচ এ দিনটি আমার জন্যে ছিলো এক বিশেষ দিন। অপেক্ষায় ছিলাম, অসংসারী এক বোহেমিয়ানের সাথে পনেরটি বছর সাথী করে রাখার জন্য রূপাকে কৃতজ্ঞতা জানাবো অমূল্য উচ্ছ্বাস দিয়ে। বলবো আমার বোহেমিয়ানত্ব সার্থক হলো রূপা, স্বার্থক হলো তোমাকে খুব একটা সময় না দিয়ে বহু বহু বঞ্চিত করার দায়বদ্ধ অপরাধগুলিও। তা আর হলো না। জীবনে প্রথম কান্নার ভাষায় তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলাম ! ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছিলাম একটা। একাত্তরে হারিয়েছিলাম আমার গর্ভধারিণী মা, তিন-তিনটি ভাই ও একটি বোনকে। তখনকার সেই শিশুটি আমি বুঝি এতোকাল পরে এসেও বেঁচে থাকার অপরাধ থেকে মুক্ত হতে পারলাম না !
.
ফেসবুক থেকে বেরিয়ে অফিসের কাজকর্ম হঠাৎই খুব অর্থহীন হয়ে গেলো। সবকিছু বাদ দিয়ে গুম হয়ে বসে থাকলাম। আমার সবসময়ের ভালো থাকার অনুভূতিটাও ভোঁতা হয়ে বিষণ্ন শীতলতায় আক্রান্ত হলো। পরাজিত যোদ্ধার মতো মনে হলো শরীরটা আজ ভালো নেই। লাঞ্চ-বিরতি কেটে যাচ্চে, তবু ক্ষুধাবোধটা ফিরে পাচ্ছি না। ভেতরে ডুব দিয়ে পেছন ফিরে তাকানোর চেষ্টা করলাম, যুদ্ধাপরাধী জামাত-শিবিরের ধর্মভিত্তিক হিংস্র রাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের এতোকালের প্রত্যয় ও অর্জন ‘আমাদের যা গেছে, সবই কি গেছে !’ রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে-হতাশায় মোবাইলেই লিখতে বসলাম একটি স্ট্যাটাস- ‘ভাবছি গান্ধীর অহিংস নেবো, এক গালে চড় খেলে আরেক গাল পেতে দেবো ! ছাগু দেখলে বুকে টেনে বলবো- আয় ভাই, অহিংস হই !’
.
সময়ের হিসাবে ১.১৪ মিনিটে পোস্ট করা স্ট্যাটাসটিতে মুহূর্মূহু লাইক পড়তে দেখে বুঝে গেলাম এ অনুভব কেবল আমার একার নয়, আমার অনেক বন্ধুরাও আক্রান্ত হয়েছে এমন দুর্বহ হতাশায়। আসলে ফেসবুক কিংবা ব্লগের মতো সামাজিক সাইটগুলি বস্তুতই এক অদ্ভূত জায়গা, যেখানে ভার্চুয়াল মুখোশেরই আধিক্য, যার পেছনের মানুষটি এক রহস্যময় কূহকের মধ্যেই থেকে যায় শেষপর্যন্ত, থেকে যায় অজ্ঞাত। এসব দায়বদ্ধহীন ঠুনকো মানুষের কাছে কী আর আশা করবো ! এরকম উপলব্ধি থেকে ‘মুখ ও মুখোশ এবং আমাদের মুখরতা’ শিরোনামে সচলায়তন ব্লগে একটি নিবন্ধও লিখেছিলাম আক্ষেপ করে কিছুদিন আগে। তাই, ঠিক যেভাবে আমি ভাবছি, অন্যেরাও তো এভাবেই ভাববে, তাতে আর সন্দেহ কী ! অতএব এক নৈরাশ্যময় শূন্যতাই যে সামনে অপেক্ষা করছে, সেরকম এক আস্থাহীনতা নিয়ে নিরাসক্ত মনেই ফেসবুকে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম। দেখলাম, তারুণ্যের উদ্দামতা নিয়ে কিছু বন্ধু প্রতিবাদী স্ট্যাটাস দিতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ গালাগালি করে মনের যতো ক্ষোভ ঢেলে দিচ্ছেন ফেসবুকের পাতায়। কেউ কেউ বলছেন আমরা প্রতিবাদ করবো রাস্তায় নেমে। কেউ কেউ দেখছি লিখছেন, আমরা শাহবাগ যাচ্ছি, যারা সশরীরে প্রতিবাদ করতে চান চলে আসেন শাহবাগে। এর আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে শাহবাগে জাদুঘরের সামনে ব্লগার-এক্টিভিস্টদের প্রতিবাদ মানব-বন্ধন ইত্যাদি হয়েছে সেখানে। সেগুলো ক্ষণিক ঢেউ ছড়িয়ে মিশে গেছে আপাত ফলাফলহীন কালের স্রোতে। তাই খুব একটা ভরসা পেলাম না। কাজকাম বাদ দিয়ে গভীর বিষণ্নতায় ডুবে থাকলাম নিজের টেবিলে।
.
বিকেলে ফোন এলো বাসা থেকে। কণ্ঠে রূপার অস্বাভাবিক উচ্ছ্বাস, শাহবাগে নাকি প্রতিবাদের ঢল নেমেছে ! কিছুক্ষণ পর আবারো রূপার ফোন, এবার আরো উচ্ছ্বাসে কলবল করছে, টিভিতে দেখাচ্ছে ব্লগার-এক্টিভিস্টদের ভয়ঙ্কর প্রতিবাদের ঢল জনসমুদ্রে রূপ নিচ্ছে ! হঠাৎ গা ঝাড়া দিয়ে ঊঠলাম, টের পেলাম ভেতরে রক্তের স্রোত বইতে শুরু করেছে আবার ! নিজেও একজন ভার্চুয়াল এক্টিভিস্ট হয়েও যে ভার্চুয়াল প্রজন্মের প্রতি ছিলো একধরনের আস্থাহীনতার বেদনা, অবিশ্বাস, সেই প্রজন্মের হুঙ্কারে কেঁপে উঠতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ! কখন যে চোখ বেয়ে ঝরঝর করে ঝরে পড়তে শুরু করেছে এই প্রজন্মের প্রতি কৃতজ্ঞতার অশ্রু, টেরই পাইনি !
.
শাহবাগ (Shahbagh) মোড় এখন ইতিহাসের দুর্বার ‘প্রজন্ম চত্বর’ (Projonmo Chottor) হয়ে নতুন এক একাত্তরের আলোর মশাল জ্বালিয়ে দিয়েছে গোটা দেশ জুড়ে। ভয়াবহ আস্থাহীনতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে বাঙালিকে আবার তার যোগ্য উত্তরাধিকার চিনিয়ে দিয়েছে আজ। জাতির এই স্বর্ণালী সময়ে দাঁড়িয়ে মধ্য-প্রজন্মের প্রতিনিধি হয়ে আমার সেই হীনম্মনতা-আক্রান্ত হতাশাময় লজ্জাজনক স্ট্যাটাসটি প্রত্যাহার করছি এই আগুন-প্রজন্মের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতায়। আমাকে ক্ষমা করো বন্ধুরা, জন্মান্ধ আমার চোখে তোমাদের চেতনার সেই মধ্যবিন্দুটিকে চিনে নিতে অক্ষম ছিলাম বলে। তোমাদের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে এই যৌবন স্পন্দিত বুকে হাত রাখলাম তোমাদের হাতে। এ আমার পূর্বপুরুষের কাছে ঋণ, মুক্তিযুদ্ধের ঋণ। যা শোধ করা যায় না কখনোই। শুধু তা বয়ে নিয়ে অপরিশোধযোগ্য ঋণের কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়। তোমরা সে সুযোগটি তুলে দিয়েছো আবার…! তোমাদেরকে অভিনন্দন জানাই। জয় বাংলা !!
…
০৫ ফেব্রুয়ারি যথারীতি অফিসে গিয়েছি সকাল ১০টায়। তারপর থেকেই একটা রোমাঞ্চকর অস্থিরতায় অপেক্ষা করছিলাম, কখন মানবতাবিরোধী কুলাঙ্গার অপরাধী কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষণা শুরু হবে ! কাজের ফাঁকে মোবাইলে অনলাইন আপডেট খুঁজছিলাম থেকে থেকে। পৌনে এগারটায় শুরু হলো দীর্ঘ বয়ানের রায়। রহস্যময় বিতর্কিত চরিত্রের সহকর্মীদের মুখ প্রয়োজনাতিরিক্ত নিরব ও থমথমে। ভেতরে ভেতরে আমার প্রস্তুতি কিভাবে এতোদিনের পুষে রাখা বিজয়ানন্দটা যথাযথভাবে প্রকাশ করবো। ফাঁসির রায় শুনবো খুব নিশ্চিত হয়ে আছি।
.
ডুবো ডুবো আনন্দে ফের কাজে ডুবে গেলাম। হঠাৎ হালকা গুঞ্জনে সেইসব সহকর্মীর চেহারায় চাপা উচ্ছ্বাসমুখরতা দেখে থমকে গেলাম, বিষয় কী ! দ্রুত মোবাইলে অনলাইন খোঁজ লাগালাম। শুরুতেই বজ্রপাত ! কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত ছয়টি অভিযোগের পাঁচটিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত, অথচ মাননীয় ট্রাইবুনাল দিয়েছেন সহজ-সরল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ! ফেসবুকে ঢুকে বন্ধুদের স্ট্যাটাসের হতবিহ্বলতায় অঙ্গনটাতে শুরুতে মনে হলো আরেকটা বধ্যভূমির দীর্ঘশ্বাস বইছে। এক দুর্বহ বিষাদে আক্রান্ত বুকটাতে তখন কবরের নিস্তব্ধতা। হাউমাউ করে কাঁদতে চাইলাম, কান্নাও এলো না। অথচ এ দিনটি আমার জন্যে ছিলো এক বিশেষ দিন। অপেক্ষায় ছিলাম, অসংসারী এক বোহেমিয়ানের সাথে পনেরটি বছর সাথী করে রাখার জন্য রূপাকে কৃতজ্ঞতা জানাবো অমূল্য উচ্ছ্বাস দিয়ে। বলবো আমার বোহেমিয়ানত্ব সার্থক হলো রূপা, স্বার্থক হলো তোমাকে খুব একটা সময় না দিয়ে বহু বহু বঞ্চিত করার দায়বদ্ধ অপরাধগুলিও। তা আর হলো না। জীবনে প্রথম কান্নার ভাষায় তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলাম ! ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছিলাম একটা। একাত্তরে হারিয়েছিলাম আমার গর্ভধারিণী মা, তিন-তিনটি ভাই ও একটি বোনকে। তখনকার সেই শিশুটি আমি বুঝি এতোকাল পরে এসেও বেঁচে থাকার অপরাধ থেকে মুক্ত হতে পারলাম না !
.
ফেসবুক থেকে বেরিয়ে অফিসের কাজকর্ম হঠাৎই খুব অর্থহীন হয়ে গেলো। সবকিছু বাদ দিয়ে গুম হয়ে বসে থাকলাম। আমার সবসময়ের ভালো থাকার অনুভূতিটাও ভোঁতা হয়ে বিষণ্ন শীতলতায় আক্রান্ত হলো। পরাজিত যোদ্ধার মতো মনে হলো শরীরটা আজ ভালো নেই। লাঞ্চ-বিরতি কেটে যাচ্চে, তবু ক্ষুধাবোধটা ফিরে পাচ্ছি না। ভেতরে ডুব দিয়ে পেছন ফিরে তাকানোর চেষ্টা করলাম, যুদ্ধাপরাধী জামাত-শিবিরের ধর্মভিত্তিক হিংস্র রাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের এতোকালের প্রত্যয় ও অর্জন ‘আমাদের যা গেছে, সবই কি গেছে !’ রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে-হতাশায় মোবাইলেই লিখতে বসলাম একটি স্ট্যাটাস- ‘ভাবছি গান্ধীর অহিংস নেবো, এক গালে চড় খেলে আরেক গাল পেতে দেবো ! ছাগু দেখলে বুকে টেনে বলবো- আয় ভাই, অহিংস হই !’
.
সময়ের হিসাবে ১.১৪ মিনিটে পোস্ট করা স্ট্যাটাসটিতে মুহূর্মূহু লাইক পড়তে দেখে বুঝে গেলাম এ অনুভব কেবল আমার একার নয়, আমার অনেক বন্ধুরাও আক্রান্ত হয়েছে এমন দুর্বহ হতাশায়। আসলে ফেসবুক কিংবা ব্লগের মতো সামাজিক সাইটগুলি বস্তুতই এক অদ্ভূত জায়গা, যেখানে ভার্চুয়াল মুখোশেরই আধিক্য, যার পেছনের মানুষটি এক রহস্যময় কূহকের মধ্যেই থেকে যায় শেষপর্যন্ত, থেকে যায় অজ্ঞাত। এসব দায়বদ্ধহীন ঠুনকো মানুষের কাছে কী আর আশা করবো ! এরকম উপলব্ধি থেকে ‘মুখ ও মুখোশ এবং আমাদের মুখরতা’ শিরোনামে সচলায়তন ব্লগে একটি নিবন্ধও লিখেছিলাম আক্ষেপ করে কিছুদিন আগে। তাই, ঠিক যেভাবে আমি ভাবছি, অন্যেরাও তো এভাবেই ভাববে, তাতে আর সন্দেহ কী ! অতএব এক নৈরাশ্যময় শূন্যতাই যে সামনে অপেক্ষা করছে, সেরকম এক আস্থাহীনতা নিয়ে নিরাসক্ত মনেই ফেসবুকে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম। দেখলাম, তারুণ্যের উদ্দামতা নিয়ে কিছু বন্ধু প্রতিবাদী স্ট্যাটাস দিতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ গালাগালি করে মনের যতো ক্ষোভ ঢেলে দিচ্ছেন ফেসবুকের পাতায়। কেউ কেউ বলছেন আমরা প্রতিবাদ করবো রাস্তায় নেমে। কেউ কেউ দেখছি লিখছেন, আমরা শাহবাগ যাচ্ছি, যারা সশরীরে প্রতিবাদ করতে চান চলে আসেন শাহবাগে। এর আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে শাহবাগে জাদুঘরের সামনে ব্লগার-এক্টিভিস্টদের প্রতিবাদ মানব-বন্ধন ইত্যাদি হয়েছে সেখানে। সেগুলো ক্ষণিক ঢেউ ছড়িয়ে মিশে গেছে আপাত ফলাফলহীন কালের স্রোতে। তাই খুব একটা ভরসা পেলাম না। কাজকাম বাদ দিয়ে গভীর বিষণ্নতায় ডুবে থাকলাম নিজের টেবিলে।
.
বিকেলে ফোন এলো বাসা থেকে। কণ্ঠে রূপার অস্বাভাবিক উচ্ছ্বাস, শাহবাগে নাকি প্রতিবাদের ঢল নেমেছে ! কিছুক্ষণ পর আবারো রূপার ফোন, এবার আরো উচ্ছ্বাসে কলবল করছে, টিভিতে দেখাচ্ছে ব্লগার-এক্টিভিস্টদের ভয়ঙ্কর প্রতিবাদের ঢল জনসমুদ্রে রূপ নিচ্ছে ! হঠাৎ গা ঝাড়া দিয়ে ঊঠলাম, টের পেলাম ভেতরে রক্তের স্রোত বইতে শুরু করেছে আবার ! নিজেও একজন ভার্চুয়াল এক্টিভিস্ট হয়েও যে ভার্চুয়াল প্রজন্মের প্রতি ছিলো একধরনের আস্থাহীনতার বেদনা, অবিশ্বাস, সেই প্রজন্মের হুঙ্কারে কেঁপে উঠতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ! কখন যে চোখ বেয়ে ঝরঝর করে ঝরে পড়তে শুরু করেছে এই প্রজন্মের প্রতি কৃতজ্ঞতার অশ্রু, টেরই পাইনি !
.
শাহবাগ (Shahbagh) মোড় এখন ইতিহাসের দুর্বার ‘প্রজন্ম চত্বর’ (Projonmo Chottor) হয়ে নতুন এক একাত্তরের আলোর মশাল জ্বালিয়ে দিয়েছে গোটা দেশ জুড়ে। ভয়াবহ আস্থাহীনতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে বাঙালিকে আবার তার যোগ্য উত্তরাধিকার চিনিয়ে দিয়েছে আজ। জাতির এই স্বর্ণালী সময়ে দাঁড়িয়ে মধ্য-প্রজন্মের প্রতিনিধি হয়ে আমার সেই হীনম্মনতা-আক্রান্ত হতাশাময় লজ্জাজনক স্ট্যাটাসটি প্রত্যাহার করছি এই আগুন-প্রজন্মের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতায়। আমাকে ক্ষমা করো বন্ধুরা, জন্মান্ধ আমার চোখে তোমাদের চেতনার সেই মধ্যবিন্দুটিকে চিনে নিতে অক্ষম ছিলাম বলে। তোমাদের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে এই যৌবন স্পন্দিত বুকে হাত রাখলাম তোমাদের হাতে। এ আমার পূর্বপুরুষের কাছে ঋণ, মুক্তিযুদ্ধের ঋণ। যা শোধ করা যায় না কখনোই। শুধু তা বয়ে নিয়ে অপরিশোধযোগ্য ঋণের কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়। তোমরা সে সুযোগটি তুলে দিয়েছো আবার…! তোমাদেরকে অভিনন্দন জানাই। জয় বাংলা !!
(১১-০২-২০১৩)
No comments:
Post a Comment