Monday, August 2, 2010

| যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর…|৩৬|


| যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর…|৩৬|
-রণদীপম বসু

তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল, ১৯৯৩)

যে দিন তোমার মাধুরি মেশানো চিঠিটা হাতে পাই, পৃথিবীর প্রচণ্ডতম সুখী মানুষ হয়ে যাই আমি। এতো বেশি উল্লসিত হয়ে উঠি যে কখনো বা সবার সামনে বিব্রত হয়ে পড়ি আবেগের আতিশয্যে। বুঝতে পারি আমিও পাগল পদবাচ্যের একেবারে বাইরে নই। দ্যাখো, পাগল-টাগল যা-ই বলো, সেই গানটা মনে পড়ে তো ?
‘…যখন তুমি আমায় পাগল বলো, ধন্য যে হয় সে পাগলামি
ধন্য তোমার জন্য হে, পাগল তোমার জন্য যে…।’


চিঠি তো পড়ি না, যেনো মুখোমুখি তোমার সাথে কথা বলি, আদর করি এবং…। জানো তখন কী মনে হয় ? হাস্যমধুর তুমি দাঁড়িয়ে আছো আমার সামনে, তোমার অভিমানি কটাক্ষে আমি পাগল হয়ে যাই নিমেষে। মান ভাঙানোর পাগলামোয় অতিষ্ট তুমি তখন লজ্জায় রাগে লাল হয়ে ওঠো। ভীষণ টকটকে লাল ! বলতেও পারছো না কাউকে লজ্জায়, সইতেও পারছো না। আর তা ভেবে আমার পাগলামোর মাত্রা বুঝি আরো বেড়ে যায়। কী, ঠিক বলছি না ?

তোমার পাঠানো খামের ভেতর থেকে যখন তুমি বেরিয়ে আসো, আমার পৃথিবীতে তখন চির-বসন্ত নামে। মীর-তকী-মীর বুঝেছিলেন ঠিকই-

‘ আ নিকলতা হ্যয় কভূ হঁসতা, তো হ্যয় বাগ ও বহার।
উসকী আমদমেঁ হ্যয় সারী ফস্লেঁ আনে কী তরহ্ ।।’
‘ সে যদি কখনও হাসিমুখে আসে, মনে হয় বসন্ত এলো ধরায়,
তার আগমনে যেন সকল ঋতুরই সমাগম।’   —(মীর-তকী-মীর)

তোমার চিঠি বারে বারে পড়েও তৃপ্তি মেটে না। এতো সংক্ষিপ্ত মনে হয়, বুঝি আরো কতো কিছু রয়ে গেলো। এমোন হিসেব করে লিখার জন্যে তোমার ওপর খুব রাগ হয়। পণ করি, এমন হিসেবি মানুষের সাথে আর কথাই বলবো না। কিন্তু, আবার শুরু হয়ে যায় প্রতীক্ষার পালা, দুঃসহ প্রতীক্ষা, পরের চিঠিটার জন্যে । ভাবি ওটাতে নিশ্চয়ই অনেক কিছু লিখবে তুমি। কিন্তু হায় !
‘ কী আশায় বাঁধি খেলাঘর, বেদনার বালুচরে…!’

(চলবে…)

পর্ব:[৩৫] [*] [৩৭]

No comments: