Sunday, December 30, 2012

| যোগ দর্শন-০৬ : পুরুষের বন্ধন ও কৈবল্য |

.
| যোগ দর্শন-০৬ : পুরুষের বন্ধন ও কৈবল্য |
রণদীপম বসু

৬.০ : পুরুষের বন্ধন ও কৈবল্য

সাংখ্য-যোগমতে সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণাত্মক প্রকৃতি ও প্রকৃতিজাত সবকিছুই দুঃখদায়ক। সত্ত্বপ্রধান বুদ্ধি পুরুষের সন্নিধানে পুরুষকে প্রতিবিম্বিত করে। কিন্তু অবিদ্যাবশত পুরুষ তখন বুদ্ধির সঙ্গে নিজের অভেদ কল্পনা করে এবং এর ফলে বুদ্ধির দুঃখ পুরুষে আরোপিত হয়। তাই যোগমতে, তমোগুণ উদ্ভূত অজ্ঞানের প্রভাবে সত্ত্বপ্রধান প্রকৃতির পরিণাম বুদ্ধির সঙ্গে আত্মার অভেদজ্ঞানই হলো আত্মার বন্ধন। আত্মা বুদ্ধিতে প্রতিবিম্বিত হলে বুদ্ধিকে চৈতন্যযুক্ত এবং আত্মাকে বুদ্ধিযুক্ত বলে মনে হয়। একেই পুরুষ-প্রকৃতির অভেদজ্ঞান বলে। এই অভেদজ্ঞান বস্তুত অবিদ্যাপ্রসূত অজ্ঞান। এর ফলেই পুরুষ বুদ্ধির বৃত্তিকে নিজবৃত্তি এবং বুদ্ধির পরিণামকে নিজ পরিণাম ভেবে তা অধিগ্রহণ করে। পুরুষের এই অবস্থাই হলো পুরুষের বদ্ধাবস্থা। এই অঘটনের ঘটক হলো অনাদি অবিদ্যা।

| যোগ দর্শন-০৫ : যোগদর্শনে ঈশ্বরতত্ত্ব |

.
| যোগ দর্শন-০৫ : যোগদর্শনে ঈশ্বরতত্ত্ব |
রণদীপম বসু

৫.০ : যোগদর্শনে ঈশ্বরতত্ত্ব

ভারতীয় জনশ্রুতি অনুসারে সাংখ্যদর্শন নিরীশ্বর সাংখ্য এবং যোগদর্শন সেশ্বর সাংখ্যরূপে গণ্য হয়। অর্থাৎ, সাংখ্যদর্শনে ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকৃত হয়েছে, কিন্তু সাংখ্যকথিত পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব ছাড়াও যোগ দর্শনে ঈশ্বরতত্ত্ব স্বীকৃত হয়েছে। তবে অন্যান্য ঈশ্বরবাদী দর্শনের মতো যোগদর্শনে জগতের সৃষ্টিকর্তারূপে ঈশ্বরকে স্বীকার করা হয়নি। এখানে ঈশ্বর প্রধান নয়, আবার পুরুষমাত্র নন। তিনি ঐশ্বর্যযুক্ত, চিত্তবান, সদামুক্ত, পুরুষবিশেষ।

| যোগ দর্শন-০৪ : অষ্টাঙ্গিক যোগ |

.
| যোগ দর্শন-০৪ : অষ্টাঙ্গিক যোগ |
রণদীপম বসু

৪.০ : অষ্টাঙ্গিক যোগ

যোগদর্শন হলো প্রধানত সাধনশাস্ত্র ও প্রয়োগবিদ্যা। যোগমতে প্রকৃতি ও পুরুষের ভেদজ্ঞান বা বিবেকখ্যাতি হলো কৈবল্য লাভ বা মুক্তিলাভের উপায়। বিবেকখ্যাতির অর্থ হলো পুরুষ বা আত্মা দেহ, মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার থেকে পৃথক শুদ্ধ চৈতন্য সত্তা। এই বিবেকখ্যাতির জন্য প্রয়োজন চিত্তবৃত্তির নিরোধ। যোগশাস্ত্র অনুযায়ী চিত্তবৃত্তি নিরোধের দুটি প্রধান উপায় হলো অভ্যাস ও বৈরাগ্য। বৈরাগ্যের দ্বারা বিষয়ে বৈরাগ্য আসে এবং অভ্যাসের দ্বারা বিবেক-জ্ঞানের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। কিন্তু ধারণা, ধ্যান, সমাধি প্রভৃতি অভ্যাস করার মতো চিত্তশুদ্ধি যাদের হয়নি তাদের জন্য প্রথমে চিত্তবৃত্তি নিরোধের সাক্ষাৎ উপায় হিসেবে আটটি যোগাঙ্গ অভ্যাসের মাধ্যমে অগ্রসর হবার কথা বলা হয়েছে। এগুলি একসঙ্গে অষ্টাঙ্গ-যোগ নামে পরিচিত।

| যোগ দর্শন-০৩ : চিত্তবৃত্তি নিরোধ ও সমাধি |

.
| যোগ দর্শন-০৩ : চিত্তবৃত্তি নিরোধ ও সমাধি |
রণদীপম বসু

৩.০ : চিত্তবৃত্তি নিরোধ ও সমাধি

যোগদর্শনে চিত্তের কতগুলি বিকারকে একত্রে চিত্ত বলা হয়। এই বিকারগুলি হলো মন, বুদ্ধি এবং অহঙ্কার। এবং যোগমতে চিত্তবৃত্তির নিরোধকে যোগ বলা হয়েছে। যোগসূত্রকার পতঞ্জলি যোগের লক্ষণ প্রসঙ্গে তাই বলেন-

‘যোগশ্চিত্তবৃত্তি নিরোধঃ’- (যোগসূত্র)
অর্থাৎ : চিত্তের বিভিন্ন প্রকারের বৃত্তির নিরোধই যোগ।
 .

| যোগ দর্শন-০২ : যোগ মনস্তত্ত্ব |

.
.
| যোগ দর্শন-০২ : যোগ মনস্তত্ত্ব |
রণদীপম বসু

২.০ : যোগ মনস্তত্ত্ব
 

২.১ : চিত্ত 
মহর্ষি পতঞ্জলির মতে চিত্তবৃত্তির নিরোধই যোগ। অতএব প্রশ্ন ওঠে, চিত্ত কী ? মহর্ষি পতঞ্জলি ও ভাষ্যকার ব্যাসদেব বিভিন্ন স্থলে বুদ্ধি ও মনকে চিত্ত বলেছেন। মূলত পাতঞ্জল দর্শনে প্রকৃতির কতকগুলি বিকারকে একত্রে চিত্ত শব্দের অভিধেয় বলে গণ্য করা হয়। সাংখ্যমতে ত্রিগুণময়ী প্রকৃতির প্রথম বিকার হলো মহৎ। মহতের বিকার বুদ্ধি এবং বুদ্ধির বিকার অহংকার। আর অহংকারের অন্যতম বিকার হলো মন। এগুলিকে একসঙ্গে সাংখ্য দর্শনে চিত্ত বলা হয়। সাংখ্যের এই মত যোগ দর্শনেও স্বীকৃত হয়েছে। সুতরাং যোগসম্মত চিত্ত সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণময়ী।

| যোগ দর্শন-০১ : ভূমিকা |

.
| যোগ দর্শন-০১ : ভূমিকা |
রণদীপম বসু
১.০ : ভূমিকা

ভারতীয় আধ্যাত্মদর্শনে অন্যতম প্রভাবশালী দর্শন হলো যোগ দর্শন। মহর্ষি পতঞ্জলি এই দর্শনের সূত্রকার। ‘যোগসূত্র’ বা ‘পাতঞ্জলসূত্র’ই এই দর্শনের মূল বা সূত্রগ্রন্থ। পতঞ্জলির নাম অনুসারে এই দর্শনকে পাতঞ্জল দর্শনও বলা হয়। দার্শনিক তত্ত্বের দিক থেকে সাংখ্য ও যোগ দর্শনের মধ্যে প্রভেদ খুবই সামান্য। তাই এ দুটোকে পরস্পর সমানতন্ত্র দর্শন বলা হয়। মহর্ষি কপিলের সাংখ্য দর্শনে স্বীকৃত পঞ্চবিংশতি তত্ত্বে কোন ঈশ্বরকে স্বীকার করা হয় নি। সাংখ্যের পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব বা পঁচিশ প্রতিপাদ্য বিষয় হলো- (১) জ্ঞ বা পুরুষ, (২) অব্যক্ত বা মূলপ্রকৃতি বা প্রধান, (৩) মহৎ বা বুদ্ধি, (৪) অহংকার, (৫) মনস্ বা মন (৬) পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক- এই পাঁচটি), (৭) পঞ্চকর্মেন্দ্রিয় (বাক্, পাণি, পাদ, পায়ু, উপস্থ- এই পাঁচটি), (৮) পঞ্চতন্মাত্র বা পঞ্চসূক্ষ্মভূত (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ- এই পাঁচটি), (৯) পঞ্চস্থূলভূত বা পঞ্চমহাভূত (ক্ষিতি বা পৃথিবী, অপ্ বা জল, তেজ বা অগ্নি, মরুৎ বা বায়ু, আকাশ বা ব্যোম্- এই পাঁচটি)। অন্যদিকে পতঞ্জলির যোগ দর্শনে সাংখ্যের পঁচিশটি তত্ত্বের সাথে অতিরিক্ত একটি তত্ত্ব ঈশ্বরতত্ত্ব যুক্ত করে ঈশ্বর স্বীকৃত হয়েছে বলে নিরীশ্বর-সাংখ্যের বিপরীতে যোগ দর্শনকে ‘সেশ্বর-সাংখ্য’ও বলা হয়ে থাকে।

Saturday, December 29, 2012

| ভারতীয় ষড়দর্শন-০৪ : যোগ দর্শন |


.
| ভারতীয় ষড়দর্শন-০৪ : যোগ দর্শন |
রণদীপম বসু
যোগ দর্শন-সূচি 

Monday, December 24, 2012

| স্বগত প্রশ্নগুলি…|


.
| স্বগত প্রশ্নগুলি…|
রণদীপমবসু

‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার
সবাই বলে মিথ্যেবাদী বকিসনে আর খবরদার !…’
সুকুমার রায়ের এই ছড়াটাকে যতোই শিশুতোষ বলি না কেন, এটা কি আসলে শুধুই শিশুতোষ সমস্যা ? মোটেই তা নয়। আমাদের চারপাশে কিলবিল করা মুখ আর মুখোশের বৈপরিত্যের বিপুল ছড়াছড়িতে ফুঁসে উঠা প্রাত্যহিক অসংখ্য প্রশ্নগুলো যে কতো বেশি যৌক্তিক হয়ে ওঠে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এগুলোর উত্তর হয়তো আমরা জানি, সবাই জানে। কিন্তু এর জবাব দেবে না কেউ। কেন দেবে না ? সেটাও হয়তো জানি। এটা কি আমাদের ভয়, ভণ্ডামি, না কি অন্য কিছু ? তাকেও মাঝে মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ইচ্ছে হয়।
এই ইচ্ছেটাকেই নাড়াচাড়া করার ইচ্ছেতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘স্বগত প্রশ্ন’ নামে তাৎক্ষণিক ভাব প্রকাশের একটা প্রয়াস শুরু করি। হঠাৎ খেয়াল হলো, এই এলোমেলো প্রয়াসটাকে এখানে নিয়মিত আপডেটসহ একে একে সাজিয়ে রাখি না হয়। একসময় তা-ই যদি সময়ের নিজস্ব চিৎকার হিসেবে উৎকীর্ণ হয়ে থাকে, মন্দ কী !!

| উৎবচন…| ৩৮১-৩৯০ |


.
| উৎবচন…| ৩৮১-৩৯০ |
রণদীপম বসু
(৩৮১)
যে দেশে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ,
সে দেশের সামরিক বা বেসামরিক বাহিনীর হাতে
বন্দুকের বদলে কি গোলাপফুল থাকে !
.
(৩৮২)
সংখ্যালঘুরা কোন মানুষ হয় না, হয় বিচিত্র কোন প্রাণী,
যাদের নিয়ে কেউ করুণা দেখায়, কেউবা রাজনীতি করে,
আর কেউ তাকে বানায় নির্মম শিকার !
.

সরল অংক…


.
সরল অংক…
রণদীপম বসু

প্রশ্নোত্তর পর্ব- ০১
.
প্রশ্ন : জামায়াত কেন হরতাল ডেকেছে ?
উত্তর : আগের দিন তাদেরকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি বলে।

.
প্রশ্ন : জামায়েত কেন সমাবেশ ডেকেছিলো ?
উত্তর : বিচারের জন্য আটক যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে।

.

| সাংখ্য দর্শন-১১: সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্ব |



| সাংখ্য দর্শন-১১: সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্ব |

রণদীপম বসু

.: সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্ব

সাংখ্য দর্শনে মোক্ষ-উপযোগী বিবেকজ্ঞান ছাড়াও একপ্রকার ব্যবহারিক জ্ঞান স্বীকার করা হয়েছে। ঘট-পট ইত্যাদি জাগতিক বিষয়ক যে জ্ঞানের দ্বারা আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার নিষ্পন্ন হয়, তাকেই ব্যবহারিক জ্ঞান বলা হয়। ন্যায়-বৈশেষিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সাংখ্য সম্প্রদায়ও এ বিষয়ে একমত যে, জ্ঞান মাত্রই সবিষয়ক। বিষয় বিহীন কোন জ্ঞানের অস্তিত্ব নেই। জ্ঞানের বিষয়কে বলা হয় জ্ঞেয় এবং জ্ঞানের কর্তাকে বলা হয় জ্ঞাতা। সাংখ্যমতে পুরুষই একমাত্র জ্ঞাতা হতে পারে। পুরুষ বা আত্মার বহুত্ব সাংখ্যশাস্ত্রে স্বীকৃত। পুরুষ ব্যতীত বাকি সকল তত্ত্বই অচেতন বলে প্রকৃতিজাত মহৎ ইত্যাদি যাবতীয় বস্তুই অচেতন ও কেবলমাত্র জ্ঞানের বিষয় বা জ্ঞেয় হতে পারে।

| সাংখ্য দর্শন-১০ : সাংখ্যমতে জগতের অভিব্যক্তি |



| সাংখ্য দর্শন-১: সাংখ্যমতে জগতের অভিব্যক্তি |

রণদীপম বসু

.: সাংখ্যমতে জগতের অভিব্যক্তি

সাংখ্য দার্শনিকরা হলেন পরিণামবাদী। তাঁদের মতে জগৎ হলো প্রকৃতির পরিণাম। প্রকৃতি হলো জগতের উৎপত্তির প্রতি উপাদান কারণ। অর্থাৎ, জগৎ ও জগতের প্রত্যেক বস্তু ও বিষয়ের মূল কারণ প্রকৃতি। বলা হয়, সৃষ্টির পূর্বে জগৎ প্রকৃতির মধ্যে অব্যক্ত অবস্থায় থাকে। পুরুষের সান্নিধ্যে প্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগ হওয়ার ফলে জগতের অভিব্যক্তি হয়। সাংখ্যমতে একেই জগতের সৃষ্টি বলা হয়। এই সৃষ্টির পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়াও সাংখ্যশাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে।

| সাংখ্য দর্শন-০৯ : সাংখ্যমতে মোক্ষ বা কৈবল্য |



| সাংখ্য দর্শন-০৯ : সাংখ্যমতে মোক্ষ বা কৈবল্য |

রণদীপম বসু

.: সাংখ্যমতে মোক্ষ বা কৈবল্য

সাংখ্যমতে, আত্মা বা পুরুষে যে সুখ-দুঃখ-মোহাদিরূপ প্রাকৃতিক ধর্ম উপচারিত হয়, তার তিরোধানই হলো মুক্তি। এই মুক্তি-প্রাপ্তিকে সাংখ্য দর্শনে কৈবল্য-প্রাপ্তি বলা হয়, এবং এই কৈবল্যই সাংখ্য দর্শনে পরম পুরুষার্থ।

Sunday, December 23, 2012

| সাংখ্য দর্শন-০৮ : ঈশ্বরপ্রসঙ্গে সাংখ্যমত |



| সাংখ্য দর্শন-০৮ : ঈশ্বরপ্রসঙ্গে সাংখ্যমত |

রণদীপম বসু

.: ঈশ্বরপ্রসঙ্গে সাংখ্যমত

দার্শনিক মহলে মহর্ষি কপিল প্রবর্তিত সাংখ্য দর্শনকে নিরীশ্বর সাংখ্য এবং পতঞ্জলি প্রবর্তিত যোগ দর্শনকে সেশ্বর সাংখ্য বলা হয়। তবে এটি সর্বসম্মত মত নয়। কেননা, সাংখ্য দর্শন নিরীশ্বরবাদী কিনা, সে বিষয়ে সাংখ্য দার্শনিকদের মধ্যেই মতভেদ রয়েছে। বলা হয়, প্রাচীন সাংখ্যাচার্যরা নিরীশ্বরবাদী এবং পরবর্তী সাংখ্যাচার্যরা ঈশ্বরবাদী।

| সাংখ্য দর্শন-০৭ : সাংখ্যের পুরুষতত্ত্ব |



| সাংখ্য দর্শন-০৭ : সাংখ্যের পুরুষতত্ত্ব |

রণদীপম বসু

.: সাংখ্যের পুরুষতত্ত্ব

সাংখ্যদর্শনে স্বীকৃত পঞ্চবিংশতি বা পঁচিশ তত্ত্বকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা- প্রকৃতি, বিকৃতি, প্রকৃতি-বিকৃতি এবং প্রকৃতিও নয় বিকৃতিও নয়। এর মধ্যে সাংখ্যদর্শনের পুরুষ হলো চতুর্থপ্রকার তত্ত্ব। প্রকৃতি অর্থ কারণ, বিকৃতি অর্থ কার্য। সাংখ্যমতে পুরুষ কারণও নয়, কার্যও নয়। পরিণামী প্রকৃতির বৈচিত্র্য ও পরিবর্তনের নেপথ্যে পুরুষ হলো এক অপরিণামী অপরিবর্তনীয় সত্তা। পুরুষ প্রকৃতির পরিপূরক। তাই সাংখ্য দর্শনে পুরুষকে নেতিবাচক ভাবে দেখানো হয়েছে। প্রকৃতিতে যার অভাব, তাই পুরুষে বর্তমান। আবার বিপরীতভাবে প্রকৃতি যে সকল ধর্মবিশিষ্ট, তার কোন কোন ধর্মের অভাবাধিষ্ঠানই হলো পুরুষ।

| সাংখ্য দর্শন-০৬ : সাংখ্যের প্রকৃতিতত্ত্ব |



| সাংখ্য দর্শন-০৬ : সাংখ্যের প্রকৃতিতত্ত্ব |

রণদীপম বসু

.: সাংখ্যের প্রকৃতিতত্ত্ব

সৎকার্যবাদী সাংখ্য দর্শন প্রকৃতিকেই জগতের আদি উপাদান ও অধিষ্ঠান বলে মনে করেন। এই মতে বিচিত্র জগৎ প্রকৃতির পরিণাম ছাড়া আর কিছুই নয়। সাংখ্যমতে, জগতের আদি কারণ কোন চৈতন্যস্বরূপ পুরুষ বা জড় পরমাণু নয়। পুরুষ জগতের আদি কারণ হতে পারে না। পুরুষ চৈতন্যস্বরূপ, চৈতন্য জড় জগতের কারণ হতে পারে না। আবার অপরিণামী জড় পরমাণু থেকে মন, বুদ্ধি বা অহংকারের মতো সূক্ষ্ম তত্ত্ব উৎপন্ন হতে পারে না। সুতরাং পরমাণু জগতের আদি কারণ নয়। জগতের আদি কারণ হলো পরমাণু থেকে সূক্ষ্মতর এক পরিণামশীল জড়তত্ত্ব। এই পরিণামশীল জড়তত্ত্বই প্রকৃতি, প্রধান বা অব্যক্তরূপে পরিচিত।

| সাংখ্য দর্শন-০৫ : সাংখ্য তত্ত্বসংকলন ও তত্ত্বপরিণাম |



| সাংখ্য দর্শন-০৫ : সাংখ্য তত্ত্বসংকলন ও তত্ত্বপরিণাম |

রণদীপম বসু

.: সাংখ্য তত্ত্বসংকলন ও তত্ত্বপরিণাম (বিবর্তনবাদ)

বিভিন্ন শাস্ত্রের প্রতিপাদ্য বিষয় বিভিন্ন। এই প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভিন্ন নামে পরিচিত। বৌদ্ধদর্শনে প্রতিপাদ্য বিষয়কে বলা হয় ‘ধাতু’। ন্যায়-বৈশেষিক দর্শনে বলা হয় ‘পদার্থ’। সাংখ্য দর্শনে প্রতিপাদ্য বিষয় ‘তত্ত্ব’ নামে অভিহিত। এই ধাতু, পদার্থ বা তত্ত্ব জগতের মৌলিক উপাদান বলে বিবেচিত হয়।

| সাংখ্য দর্শন-০৪ : কার্য-কারণ তত্ত্ব |



| সাংখ্য দর্শন-০৪ : কার্য-কারণ তত্ত্ব |

রণদীপম বসু

.: কার্য-কারণ তত্ত্ব

কার্যের সঙ্গে কারণের সম্বন্ধ অর্থাৎ কার্যকারণতত্ত্ব দর্শনশাস্ত্রের অন্যতম প্রতিপাদ্য বিষয়। আমরা কার্য প্রত্যক্ষ করি, কিন্তু সেই কার্যের কারণ কী এবং সেই কারণের সঙ্গে ঐ কার্যের সম্বন্ধ কী ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করতে পারি না। তা জানার জন্য মানুষ যা ভেবেছে, সেই ভাবনার সমষ্টিই দর্শন। কার্যকারণভাবকে অবলম্বন করে জগতের মূলতত্ত্বে উপনীত হওয়াই দর্শনের লক্ষ্য। ভারতীয় দর্শন সম্প্রদায়গুলি দৃশ্যমান বস্তুর কার্য-কারণভাবের দ্বারাই তাদের স্বরূপ অনুধাবনের চেষ্টা করেছেন। প্রতিটি সম্প্রদায়ই স্বীকৃত তত্ত্ব ও স্বীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাগতিক কার্যকারণভাবকে ব্যাখ্যা করেছেন। ফলে স্বভাবতই ভারতীয় দর্শনসমূহে নানা ধরনের কার্য-কারণভাব পরিলক্ষিত হয়।

| সাংখ্য দর্শন-০৩ : দুঃখ ও দুঃখনিবৃত্তি |



| সাংখ্য দর্শন-০৩ : দুঃখ ও দুঃখনিবৃত্তি |

রণদীপম বসু

.: দুঃখ ও দুঃখনিবৃত্তি

দুঃখের অনুভূতি হলো মানবজীবনের সবচাইতে তীব্র ও কষ্টকর অনুভূতি। মূলত জীবন মানেই অসংখ্য দুঃখের সমষ্টি। এই দুঃখানুভূতির আবির্ভাবও ঘটেছে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে। তাই চিরকালই প্রাণীমাত্রেই এই দুঃখকে জয় বা অতিক্রম করে সুখলাভের উপায় অনুসন্ধান করেছে। এবং এই অনুসন্ধিৎসা থেকেই ভারতীয় বিভিন্ন দার্শনিক চিন্তাধারারও উৎপত্তি হয়েছে। সাংখ্যশাস্ত্রও এর ব্যতিক্রম নয়।

| সাংখ্য দর্শন-০২ : সাংখ্য সাহিত্য |



| সাংখ্য দর্শন-০২ : সাংখ্য সাহিত্য |

রণদীপম বসু

.: সাংখ্য সাহিত্য

সুপ্রাচীন কাল থেকে সাংখ্যদর্শনের এই যে সুবিস্তৃত প্রভাব, তা সত্ত্বেও আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ দর্শনের মূল গ্রন্থ সংখ্যা যৎসামান্যই বলা যায়। মহর্ষি কপিলকে এ দর্শনের সূত্রকার বলা হলেও কপিল রচিত কোন সাংখ্যসূত্র গ্রন্থের খোঁজ পাওয়া যায় না। ‘তত্ত্বসমাস’ নামের ক্ষুদ্র একটি সূত্র-সংগ্রহ গ্রন্থকে পাশ্চাত্য চিন্তাবিদ ম্যাক্সমুলার সাংখ্যমতের প্রাচীনতম গ্রন্থ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে এই তত্ত্বসমাসই মহর্ষি কপিলকৃত মূল সাংখ্যসূত্র। কিন্তু এই প্রস্তাব মানতে নারাজ ‘কীথ’, ‘গার্বে’ প্রমুখ আধুনিক বিদ্বানেরা। একে তো তত্ত্বসমাসের প্রাচীনত্ব অনিশ্চিত, তার উপর সাংখ্যমতের প্রাচীন রূপটি সনাক্ত করার জন্য এই সংক্ষিপ্ত সূত্র-সংগ্রহের মূল্যও নগন্য। বিদ্বানদের মতে কেবলমাত্র ২২টি ক্ষুত্র ক্ষুদ্র সূত্রের এই সমষ্টিকে পূর্ণ গ্রন্থ না বলে গ্রন্থের বিষয়সূচিই বলা যায়।

| সাংখ্য দর্শন-০১ : ভূমিকা |



| সাংখ্য দর্শন-০১ : ভূমিকা |
রণদীপম বসু

.: ভূমিকা

ভারতীয় ষড়দর্শনের অন্যতম সাংখ্যদর্শন বা সাংখ্যশাস্ত্রকে প্রাচীনতম ভারতীয় দর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মহর্ষি কপিল হচ্ছেন এই দর্শনের সূত্রকার। তাই সাংখ্যকে কখনও কখনও কপিল-মত বা কপিল-দর্শন নামেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে, কপিলের শিষ্য ছিলেন আসুরি এবং আসুরির শিষ্য ছিলেন পঞ্চশিখ। কথিত আছে যে, মুনি কপিল দুঃখে জর্জরিত মানুষের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তাঁর শিষ্য আসুরিকে পবিত্র ও সর্বোৎকৃষ্ট জ্ঞান সাংখ্যশাস্ত্র প্রদান করেছিলেন। আসুরি সেই জ্ঞান পঞ্চশিখকে প্রদান করেন। এরপর পঞ্চশিখ-এর দ্বারা সাংখ্যশাস্ত্র নানাভাবে বহু শিষ্যের মধ্যে প্রচার হয়েছিলো।

| ভারতীয় ষড়দর্শন-০৩ : সাংখ্য দর্শন |



| ভারতীয় ষড়দর্শন-০৩ : সাংখ্য দর্শন |
রণদীপম বসু

সাংখ্য দর্শন-সূচি

| সমতলে বক্ররেখা-০৪ : মুখ ও মুখোশ এবং আমাদের মুখরতা |


সমতলে বক্ররেখা-০৪
মুখ ও মুখোশ এবং আমাদের মুখরতা
রণদীপম বসু

()
ভার্চুয়াল একজনের সাথে আলাপ হচ্ছিলো ফেসবুক চ্যাটে। অবশ্য এটাকে আলাপ না বলে দৃশ্যমান সংলাপ বিনিময় বলাই শ্রেয়। অন্তর্জালিক যুগের হাল আমলের ভৌতিক আলাপ বললেও অত্যুক্তি হবে না ! কারণ ওপাশে যিনি আছেন তাঁকে কখনো কোথাও দেখেছি কিনা সেটাই জানি না যেহেতু, তাই তিনি আদৌ আমার পরিচিত কিনা সে প্রশ্নও অবান্তর। যেটুকু চেনার সূত্র, সেখানেও তাঁর পরিচয় একটা বানোয়াট ছদ্ম নিক-নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কেউ যদি এটাকে বলেন মুখোশের সাথে কথোপকথন, তাও সই। কেননা, শেষপর্যন্ত আমরা তো মুখোশই। ইন্টারনেট প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য গতি-প্রকৃতি আমাদেরকে সেদিকেই ধাবিত করছে বলেই মনে হয়। জানতে বা অজান্তে আমরা একেকটা ভার্চুয়াল মুখোশে পরিণত হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সেটুকু ভাবার ফুরসত আমরা করে ওঠতে পারছি কিনা, সেটা ভাবার বিষয় বৈ কি।